রমজান মাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য-২
নেয়ামতের এই রমজান মাসে আল্লাহ তাআলা মানবতার হেদায়েতের জন্য তার রাসূলের উপর কুরআন নাযিল করেন। রমজান মাসে দোয়া কবুল সহকারে অনেক বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী রমজান মাস । আমরা পূর্বের আলোচনার ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় পর্বে ও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি ।
দোয়া কবুলের মাস
মহানবী (সা.) নিজেই বলেছেন, আল্লাহ রমজান মাসের দোয়া কবুল করেন। হাদীসে উল্লেখ আছে-
রমজান মাসে প্রত্যেক মুসলমান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে। এবং তা গৃহীত হয়।’
জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস
এ রমজান মাসকে তিন দশকে ভাগ করা হয়েছে। শেষ দশক জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। হাদীসে উল্লেখ আছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
আল্লাহ তায়ালা প্রতি রাতে এবং দিনে (রমজান মাসের) অনেক লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা করেন এবং প্রতিটি মুসলমানের প্রার্থনা প্রতি রাতে এবং দিনে কবুল করা হয়।
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শাইতান ও দুষ্ট জিনদেরকে রামাযান মাসের প্রথম রাতেই শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করা হয় এবং এর দরজাও তখন আর খোলা হয় না, খুলে দেওয়া হয় জান্নাতের দরজাগুলো এবং এর একটি দরজাও তখন আর বন্ধ করা হয় না। (এ মাসে) একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিতে থাকেনঃ হে কল্যাণ অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে পাপাসক্ত! বিরত হও। আর বহু লোককে আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ হতে এ মাসে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং প্রত্যেক রাতেই এরূপ হতে থাকে।(সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৬৮২)
ক্ষমা পাওয়ার সুযোগ
রমজান মাস ক্ষমার মাস। যারা রমজান পেয়েও গুনাহ থেকে মুক্ত হতে পারেনি; মহানবী (সাঃ) তাদের নিন্দা করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রমাযানে ঈমানের সাথে ও সওয়াব লাভের আশায় সওম পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয়। ( বুখারী -২০১৪)
নেক আমলের প্রতিদান বহুগুণ বেড়ে যায়
রমজান মাসে নেক আমলের প্রতিদান বহুগুণ বেড়ে যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সিয়াম ঢাল স্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মূর্খের মত কাজ করবে না। যদি কেউ তার সাথে ঝগড়া করতে চায়, তাকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুই বার বলে, আমি সওম পালন করছি। ঐ সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই সওম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের সুগন্ধির চাইতেও উৎকৃষ্ট, সে আমার জন্য আহার, পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সিয়াম আমারই জন্য। তাই এর পুরস্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুণ(বুখারি-১৮৯৪)
হজের সওয়াবের মাস
রমজান মাসে ওমরাহ করার বিশেষ ফজিলত ও মর্যাদা রয়েছে। এ মাসে ওমরাহ করলে হজের সওয়াব পাওয়া যাবে। আর তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সম্পাদন করার মর্যাদা রয়েছে। হাদীসে উল্লেখ আছে-
আবূ মা’কিল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ রমযান মাসের একটি উমরা একটি হজ্জের সমতুল্য। ( সুনানে ইবনে মাজাহ , হাদিস নং-২৯৯৩)।
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনসারী মহিলাকে বললেন, যখন রমজান মাস আসে তখন ওমরাহ কর। কারণ রমজান মাসে ওমরাহ হজের মর্যাদা পেয়েছে।’ (নাসায়ী)
এক মহিলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন – কোন ইবাদতটি তোমার সঙ্গীর সাথে হজ্জ করার সমতুল্য? তিনি উত্তর দিলেন, ”রমজান মাসে ওমরাহ।” (আবু দাউদ)
রোজাদারের জন্য বিশেষ সম্মানের মাস
যারা রমজান মাসে রোজা রাখে তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ সম্মান। জান্নাতের একটি দরজা শুধুমাত্র রমজানের রোজাদারদের জন্য সংরক্ষিত। এ দরজা দিয়ে অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। হাদীসে উল্লেখ আছে-
হযরত খালেদ ইবনে মাখলাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাতের একটি দরজা রয়েছে যার নাম রাইয়ান। কিয়ামতের দিন এই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে শুধু রোজাদাররাই। তারা ছাড়া আর কেউ এই দরজা দিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে না। ঘোষণা করা হবে-
রোজাদাররা কোথায়? তারপর তারা দাঁড়াবে। তারা ছাড়া এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করবে না। তারা জান্নাতে প্রবেশ করার পর সেই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। এতে অন্য কারো প্রবেশাধিকার থাকবে না।’ (বুখারী)
এ ছাড়া রমজান মাসের অনেক ফজিলত ও মর্যাদা রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের ফজিলত ও বিশেষ ফজিলত যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। রমজানের রহমত, বরকত, মাগফেরাত ও নাজাতের তাওফিক দান করুন। আমীন।