মেদ বা ওজন কমাতে খাবার
বারবার আমাদেরকে খাবারের আলোচনা করতেই হয়। কারণ জীবনধারণের জন্য, জীবনে টিকে থাকার জন্য খাবারের বিকল্প নেই। তাই সেই খাবারকে অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে । তবে বুঝেশুনে। যদি জেনে বুঝে আমরা খাবার গ্রহণ করি; সেই খাবারই হয়তো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে তাই বারবার খাবার নিয়ে আলোচনা হয় এবং হচ্ছে।
কিছু খাবার আছে যা শরীরের চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে। বিশেষ করে পেটের চর্বি কমাতে উপকারী এই খাবারগুলো সম্পর্কে জানা থাকলে তা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
তার আগে জেনে নেওয়া দরকার কী ধরনের খাবার খেলে পেটে চর্বি জমে। সাধারণত অ্যালকোহল সেবন, অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার গ্রহণ, গভীর ভাজা খাবার, কোমল পানীয়, অস্বাস্থ্যকর বাইরের খাবার, নিয়মিত লাল মাংস (রেড মিট) খাওয়া, স্যাচুরেটেড ফ্যাট (চর্বি) সেবন ইত্যাদি পেটের চর্বি বাড়াতে ভূমিকা রাখে। তবে হ্যাঁ সব ‘চর্বি’ই শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়।
ওজন কমাতে আমরা কত কিছুইনা করি!আমরা প্লেটে খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিই এবং শসা, গাজর এবং স্যুপ খেয়ে দিনের পর দিন কাটাই। তারপরেও এত কষ্টের ফল এত সহজে দিতে চায় না ওজন মেশিন। ডায়েটের শুরুতে দ্রুত ওজন হ্রাস পরিলক্ষিত হয়, তবে কিছু সময়ের পরে ওজন হ্রাসের হার কমে যায়। হতাশার সাথে, অনেকেই আবিষ্কার করেন যে ওজন কমছে না, তবে দীর্ঘ সময় ধরে স্যুপ এবং শসা জাতীয় খাওয়ার কারণে শরীরে অপুষ্টি দেখা দিচ্ছে। চুল পড়ে যাচ্ছে, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে, চেহারা তার সৌন্দর্য ধরে রাখতে পারছেনা।
পুষ্টিবিদরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও খাবার না পেলে শরীর স্টারভেশন বা ‘অনাহার’ অবস্থায় চলে যায়। প্রয়োজনের তুলনায় কম খাবার খাওয়ার ফলে শরীর তার ব্যবহৃত খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দেয় এবং খাবার জমা করতে শুরু করে। এই হল ‘অনাহার’ অবস্থা।
শরীর যখন তা ব্যবহার না করেই খাবার সঞ্চয় করতে শুরু করে তখন ওজন কমে না বরং অনেক ক্ষেত্রে বাড়তে শুরু করে।
অন্যদিকে, শরীরের অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপ ধীর হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োজনীয় খাবারের অভাবে মেটাবলিক সিস্টেমের কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং খাবারের ক্যালরি চর্বি হিসেবে শরীরে জমতে শুরু করে।
তাহলে উপায়? এমনকি এমন কোনো ‘জাদু’ নেই, যাতে পেট ভরে খেলেও ওজন বাড়বে না! উত্তরটি হল হ্যাঁ. পুষ্টিবিদরা কিছু খাবারকে ‘ম্যাজিক ফুড’ বলেছেন। তাদের মতে, নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে এই ধরনের খাবার খেলে ওজন অবশ্যই কমবে। জেনে নেই সেগুলো সম্পর্কে।
ফল এবং শাকসবজি
যেহেতু এই খাবারগুলিতে ফাইবার বেশি থাকে, তাই এগুলি কোলেস্টেরল এবং পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। খাবারের আঁশ চর্বিকণাকে বেঁধে ফেলে বা ফাইবার চর্বি কোষের সাথে আবদ্ধ হয় এবং তাদের মলমূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে। এছাড়াও, ফল এবং শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা ক্ষুধার অনুভূতি কমায়। প্রতিদিন অন্তত চার থেকে পাঁচটি ফল ও শাকসবজি খাওয়া অন্যান্য খাবারের প্রতি আগ্রহ কমায়। এই বিশেষ কারণে ফল ও সবজি পেটের মেদ কমাতে কাজ করে।
সবুজ চা
এই হালকা পানীয় শুধু শরীরকে সতেজ রাখে না, ওজন কমাতেও কার্যকর ভূমিকা রাখে। গ্রিন টিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পরোক্ষভাবে অতিরিক্ত চর্বি ঝরাতে সাহায্য করে।
বাদাম এবং জলপাই তেল
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রোটিন যেমন অপরিহার্য, ‘ফ্যাট’ জাতীয় খাবারের উপস্থিতিও তেমন। বিস্মিত? কিন্তু এটা সত্যি।
পুষ্টিবিদদের মতে, সব ‘চর্বি’ই শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। শরীরে সমস্ত পুষ্টির সুষম বন্টন সুস্বাস্থ্য নির্দেশ করে। প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন এবং মিনারেলের মতোই শরীরে চর্বির প্রয়োজন। বিশেষ করে, নির্দিষ্ট ভিটামিন শোষণের জন্য চর্বি প্রয়োজন।
শরীরে প্রয়োজনীয় চর্বি থেকে বঞ্চিত হলে ভিটামিন এ, ডি, কে এবং ই এর ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তাই আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় চিনাবাদাম, কাজু বাদাম, কুমড়ার বীজ, শিমের বীজ, কিডনি বিন এবং অলিভ অয়েল অন্তর্ভুক্ত করুন। বাদাম এবং শস্যের মধ্যে পাওয়া চর্বিকে পুষ্টির পরিভাষায় মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট বলা হয়। এই চর্বি রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে।
মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট ত্বক এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলির যত্ন নেয়, ত্বকের মসৃণতা উন্নত করার পাশাপাশি বিপাকীয় হার বাড়াতে সাহায্য করে, যা ওজন হ্রাসে অবদান রাখে।
সামুদ্রিক মাছ
সামুদ্রিক মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। এই অ্যাসিড চর্বি বৃদ্ধির জন্য দায়ী চর্বিগুলো পোড়াতে সাহায্য করে এবং শরীরে ভালো চর্বির পরিমাণ বাড়ায়। সামুদ্রিক মাছ থেকে প্রাপ্ত চর্বিকে বলা হয় ‘পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট’ বা স্বাস্থ্যকর চর্বি। বাদাম এবং জলপাই তেলের মতো সামুদ্রিক চর্বিও ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে।
মশলা
রান্নায় ব্যবহৃত মসলা, যেমন রসুন, হলুদ, দারুচিনি, আদা- এগুলো বাংলাদেশের জলবায়ুর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এর অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে, মসলা শরীরে কিছু আয়ুর্বেদিক উপকারিতা প্রদান করে। আবার মসলা খাবারকে সহজে হজম করে, যা খাবারকে সুস্বাদু করার পাশাপাশি হজমে সাহায্য করে। আদা, দারুচিনি এবং হলুদে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পরোক্ষভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
পানি
শরীর থেকে বর্জ্য বের করে দিতে পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বলা হয় যে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ গ্লাস পানি সরাসরি ওজন কমাতে অবদান রাখে। পানি শরীরকে সতেজ রাখে, অপ্রয়োজনীয় ক্ষুধা দূর করে। বারবার পানি পান করলে শরীর সুস্থ থাকে। মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায়। অতএব, ওজন কমানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলির মধ্যে একটি হল পানি পান বাড়ানো। বিশেষ করে
লেবু পানি শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। এতে লেবু যোগ করলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যোগ হয়। কারণ পানি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটাতে সাহায্য করে, যার ফলে চর্বি পোড়ানোর পরিমাণ বেড়ে যায়।
চিয়া বীজ
উপকারী চিয়া বীজ সম্পর্কে। দ্রুত ওজন কমানোর জন্য এটি খুবই জনপ্রিয় একটি বীজ। এটি প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি সমৃদ্ধ। এই বীজ মেটাবলিজম এবং হজমের উন্নতিতে খুবই কার্যকরী। প্রতিদিন অন্তত দুই টেবিল চামচ চিয়া বীজ আপনার পেটের চর্বি কমাতে দ্রুত কাজ করবে।
আঁশযুক্ত খাবার
এই ধরনের খাবার রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে, যা রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করে। আঁশযুক্ত খাবারে বি ভিটামিন বেশি থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়াও আমাদের বেসাল মেটাবলিক রেট (BMR) সক্রিয় রেখে শরীরকে তার খাদ্যকে সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার করতে সাহায্য করে। (বেসাল মেটাবলিক বা বেসাল মেটাবলিজম (H e E) হল রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলাফল যা একটি প্রাণীর কোষে উপবাস ও বিশ্রামরত অবস্থায় অত্যাবশ্যক সেলুলার কার্যকলাপ, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং সঞ্চালন বজায় রাখার জন্য যথেষ্ট শক্তি ব্যবহার করে।) তাই শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি জমা করার প্রবণতা কমাতে ফাইবারযুক্ত খাবারের জুড়ি মেলা ভার।
শসা
শসা প্রায় ৯৬ শতাংশই পানি । এ কারণে শসা খুবই ঠাণ্ডা খাবার। শসা খুবই কম ক্যালরিযুক্ত খাবার। একটি শসাতে মাত্র ৪৫ ক্যালোরি থাকে। শরীরের মেদ কমাতে শসা খুবই কার্যকরী।
গোলমরিচ
গোলমরিচ খেলে হজমশক্তি ভালো হয়, মেজাজও হয় প্রফুল্ল। পেটের মেদ কমাতে খুবই উপকারী মরিচ। একটি ভাল উপায় হল চায়ের সাথে গোলমরিচ মিশিয়ে পান করা।গোলমরিচ শুধু মেদ কমাতেই নয়, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতেও সহায়ক