August 31, 2024

Warning: Undefined array key "tv_link" in /home/admin/web/timetvusa.com/public_html/wp-content/themes/time-tv/template-parts/header/mobile-topbar.php on line 53
অনিয়ন্ত্রিত জিহ্বা দ্বারা সৃষ্ট কতিপয় মারাত্মক পাপ

অনিয়ন্ত্রিত জিহ্বা দ্বারা সৃষ্ট কতিপয় মারাত্মক পাপ

অনিয়ন্ত্রিত জিহ্বা দ্বারা সৃষ্ট কতিপয় মারাত্মক পাপ

অনিয়ন্ত্রিত জিহ্বা দ্বারা সৃষ্ট কতিপয় মারাত্মক পাপ

মানুষের মুখ এমন একটি  অর্গান  যার মাধ্যমেই  অধিকাংশ পাপ সংঘটিত হয়। যে মুখ আটকে রাখতে পারে তার পক্ষে অনেক কবিরা গুনাহ( বড় গুনাহ)  থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। শুধু মুখের কথার কারণে একটি পরিবার, একটি সমাজ এমনকি একটি রাষ্ট্র একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে।

কারণ আল্লাহর নবী (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দুটো জিনিসের জামিনদার হবে;  আমি তার জন্য জান্নাতের জামিনদার হব ।এক. দুই চোয়ালের মাঝখানের বস্তু (জিহ্বা) দুই.  দুই রানের মাঝখানের বস্তু ।

এখানে আমরা কতিপয় মুখ নিঃসৃত বা জিহ্বা দ্বারা সৃষ্ট পাপ নিয়ে আলোচনা করছি:
মিথ্যাঃ

মিথ্যাকে সকল পাপের মা বলা হয়। মহানবী (সাঃ) মিথ্যাকে সবচেয়ে বড় পাপ বলেছেন। এই মিথ্যা মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। নবী করিম (সঃ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই সত্য পুণ্য ও সৎকর্মের পথ দেখায়।” আর নেক আমল জান্নাতের পথ দেখায়। আর যে ব্যক্তি সত্য কথা বলে সে আল্লাহর কাছে সিদ্দিক (সবচেয়ে সত্যবাদী) বলে বিবেচিত হয়। আর মিথ্যা পাপের দিকে নিয়ে যায়। আর পাপ পাপীকে জাহান্নামে নিয়ে যায়। যখন কোন ব্যক্তি মিথ্যা বলে, তখন তাকে আল্লাহর কিতাবে (চরম মিথ্যাবাদী) হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে’ (বুখারি)।

মিথ্যা সাক্ষ্য :

মিথ্যা সাক্ষ্য একটি ঘৃণিত অপরাধ।  মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে মানুষকে  অন্যায়ভাবে বিপদে ঠেলে দেয়া হয় । একজন মুমিন কখনো মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে পারে না। একবার রাসুলুল্লাহ (সাঃ) হেলান দিয়ে বসে ছিলেন। এমতাবস্থায় তিনি সাহাবীদের বললেন, আমি কি তোমাদেরকে কবীরা গুনাহের কথা বলব? সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, বলুন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, কবীরা গুনাহের মধ্যে একটি হল, কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ দাঁড় করানো (শিরক), পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। একথা বলে রাসুল (সা.) সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেন, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া। এ কথা তিনি তিনবার বললেন। (বুখারি)

মিথ্যা কসম:

আল্লাহর নামে যদি  শপথ মিথ্যা করা হয়, তবে তা চরম পাপ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যদি কেউ (মিথ্যা) শপথ করে কোনো মুসলমানের অধিকার খর্ব করে (মিথ্যা কসম খেয়ে কাউকে তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করে)।” আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারণ করেছেন এবং জান্নাত হারাম করেছেন। একথা শুনে এক সাহাবী বললেন, ছোট বস্তুর ক্ষেত্রে যদি এমন হয়? রাসুল (সাঃ) বললেন, হ্যাঁ, যদি আরকের (এক প্রকার গাছের)সামান্য একটি ডালও হয়।’ (মুসলিম)

গালিগালাজ:

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “কোন মুসলমানকে গালি দেওয়া ফাসাকি [আল্লাহর অবাধ্যতা] এবং তার সাথে যুদ্ধ করা কুফর।” (বুখারি )

উপহাস: ইসলামে কাউকে ঠাট্টা-উপহাস করা বা খারাপ নামে ডাকা নিষিদ্ধ। এতে ঘৃণা বাড়ে। অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তাই এসব মন্দ নামে ডাকা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,হে মুমিনগণ! পুরুষগণ যেন অপর পুরুষদেরকে উপহাস না করে। তারা (অর্থাৎ যাদেরকে উপহাস করা হচ্ছে) তাদের চেয়ে উত্তম হতে পারে এবং নারীগণও যেন অপর নারীদেরকে উপহাস না করে। তারা (অর্থাৎ যে নারীদেরকে উপহাস করা হচ্ছে) তাদের চেয়ে উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অন্যকে দোষারোপ করো না এবং একে অন্যকে মন্দ উপাধিতে ডেক না। ঈমানের পর গুনাহের নাম যুক্ত হওয়া বড় খারাপ কথা। ৫ যারা এসব থেকে বিরত না হবে তারাই জালেম।(সূরা হুজুরাত : ১১)

গীবত করা:

মৌখিক পাপের মধ্যে একটি হল গীবত করা। এ জঘন্য কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, তোমাদের কেউ যেন কারো পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি স্বীয় মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করতে পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণাই করো।’ (সুরা হুজরাত: ১২)

চোগলাখোরি বা কূটনামি:

বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে একজনের দোষ অন্যের কানে পৌঁছে দেওয়াকে চোগলখোরি বা কূটনামি বলে। চোগলখুরের  কবরে ভয়াবহ শাস্তির কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। একবার রাসুলুল্লাহ (স.) কোথাও যাচ্ছিলেন। দুটি নতুন কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে দাঁড়িয়ে দোয়া করলেন। এরপর খেজুরের একটি ডাল দুই টুকরা করে কবর দুটিতে পুঁতে দিলেন। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) এর কারণ জিজ্ঞেস করলে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, কবর দুটিতে শাস্তি হচ্ছে। কিন্তু এমন কোনো গুনাহর কারণে শাস্তি হচ্ছে না, যা থেকে বেঁচে থাকা কঠিন ছিল। সহজেই তারা ওই সব থেকে বাঁচতে পারত; কিন্তু বেঁচে থাকেনি। একজন প্রস্রাবের ফোঁটা থেকে বেঁচে থাকত না, অন্যজন চোগলখুরি করে বেড়াত।’ (বুখারি: ৫৭২৮)

খোঁটা দেওয়া :

আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন তিনজন ব্যক্তি আছে যাদের সাথে আল্লাহ কথা বলবেন না, তাদের প্রতি করুণার দৃষ্টিতে তাকাবেন না , তাদের পবিত্র করবেন এবং তাদের জন্য। কঠিন শাস্তি আছে। আবু যর (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এ কথা তিনবার বলেছেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, তারা কারা? তিনি বলেন, ক. যে ব্যক্তি  তার কাপড় তার গোড়ালির নিচে ঝুলিয়ে রাখে; খ. যে ব্যক্তি \উপকার করার পর খোঁটা দেয় এবং গ. যে মিথ্যা শপথ করে পণ্য বিক্রি করে।’ (মুসলিম)

অনর্থক কথা :

অনর্থক  কথা বা  শব্দ সবসময় কুৎসিত। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘মানুষের জন্য ইসলামের সৌন্দর্য হল তার অসার কথা পরিহার করা।’ (ইবনে মাজাহ)

কেউ যখন অনর্থক কথা বলে, তখন তাকে ভদ্রভাবে এড়িয়ে চলা উচিত। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে-— ‘তারা যখন অবাঞ্ছিত কথাবার্তা শোনে, তখন তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে—আমাদের জন্যে আমাদের কাজ এবং তোমাদের জন্যে তোমাদের কাজ। তোমাদের প্রতি সালাম। আমরা অজ্ঞদের সঙ্গে জড়িত হতে চাই না।’ (সুরা কাসাস: ৫৫)

অভিশাপ দেয়া :

সময়ে সময়ে কাউকে অভিশাপ দেওয়া একটি নিষিদ্ধ কর্ম । হাদীসে এ অভিশাপ দেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। “তোমরা একে অপরকে আল্লাহর অভিশাপ, তাঁর ক্রোধ এবং জাহান্নামের অভিশাপ দিয়ে অভিশাপ দিও না।” (তিরমিযী)

কারণ এই অভিশাপটি প্রায়শই হিতে বিপরীত হয়। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘, ‘যাকে অভিসম্পাত করা হয়েছে, সে যদি এর যোগ্য হয়, তাহলে তার প্রতি পতিত হয়। অন্যথায় অভিশাপকারীর দিকেই তা ধাবিত হয়।’ (আবু দাউদ)

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে এই নিন্দনীয় অনিয়ন্ত্রিত জিহ্বা বা মুখের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমীন।

আরও পড়তে

মিথ্যা সব পাপের উৎস

আল কুরআনের আলোঃ কাউকে বিকৃত নামে ডাকা পাপ

সুদের শাস্তি কী? সুদের সামাজিক ক্ষতি

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X