July 27, 2024

Warning: Undefined array key "tv_link" in /home/admin/web/timetvusa.com/public_html/wp-content/themes/time-tv/template-parts/header/mobile-topbar.php on line 53
ইসলামে পোশাকের মূলনীতি

ইসলামে পোশাকের মূলনীতি

ইসলামে পোশাকের মূলনীতি

ইসলামে পোশাকের মূলনীতি

পোশাক ব্যক্তিত্ব, আভিজাত্য, সভ্যতা এবং বিনয়ের প্রতীক। মানুষ সেই আদিম সময়ে পোশাক পরার তাগিদ অনুভব করেছিল। আদিম থেকে আধুনিক প্রত্যেক যুগেই পোশাকের প্রতি উপলব্ধি রয়েছে। গাছের পাতা হোক বা সুতা দিয়ে বোনা কাপড় হোক ।

তাই লজ্জার কাছে নতি স্বীকার করার প্রবণতা স্বাভাবিক। মানুষ নগ্ন হয়ে  জন্মে; কিন্তু নগ্নতার চাদর ছুড়ে ফেলে, সে শীঘ্রই নিজেকে ঢেকে ফেলে। এই চেতনা স্বাভাবিক। আর  ইসলাম মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম।

ইসলামে এমন কোন নির্দেশনা নেই যা ফিতরাতের বা  প্রয়োজনীয়তার বিপরীত। পোষাকের ব্যাপারে ইসলামের সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। পোশাককে আরবিতে বলা হয় ‘লিবাস’। এর অর্থ পরা জিনিস বা যা পরা হয়।

ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়: ‘পোশাক তাকেই বলা হয়, যা লজ্জাস্থানকে ঢেকে রাখে।’ ন্যূনতম এতটুকু পরিমাণ পোশাক পরিধান করা ফরজ। কোরআনের ভাষ্য থেকেও পোশাকের এ সংজ্ঞা বোঝা যায়। কোরআন বলছে : ‘এ পোশাক তোমাদের লজ্জাস্থান আচ্ছাদিত করে ফেলে।(সূরা: আরাফ, আয়াত: ২৬)

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে, ইসলামী শরীয়তে পোশাক বলতে এমন কাপড়ের টুকরো বোঝায় যা  গোপনাঙ্গ বা লজ্জাস্থানকে  ঢেকে রাখে। যে পোশাক লজ্জাস্থানকে সম্পূর্ণরূপে ঢেকে রাখে না বা এতই সূক্ষ্ম, মসৃণ, পাতলা এবং সরু যে আবরণের অংশ স্পষ্ট দেখা যায়, ইসলাম এমন পোশাককে পোশাক হিসেবেই  স্বীকৃতি দেয় না।

এর সাথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে ইসলামের সীমা লঙ্ঘন করা যাবে না। পোশাকের রঙ, গুণমান, শৈলী এবং পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে আরোপিত বিধিনিষেধ কোনোভাবেই ক্ষুন্ন করা যাবে না। ইসলামের নির্ধারিত বিধি-বিধান মেনে পোষাক পরিধান করা হলেই তা ইসলামী পোশাক হিসেবে বিবেচিত হবে।

সতর আবৃত করাঃ

লেবাস অবশ্যই সতর আবৃতকারী হতে হবে। ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত নামাজে সতর ঢাকা ফরজ। পুরুষের নাভি থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত আর নারীর মুখমণ্ডল, টাখনু পর্যন্ত পা ও কব্জি পর্যন্ত হাত ছাড়া গোটা শরীর নামাজে আবৃত রাখা ফরজ। তদ্রূপ গায়রে মাহরাম ও পরপুরুষের সামনে মুখমণ্ডলসহ গোটা শরীর আবৃত রাখাও জরুরি। তাই পোশাকের মাধ্যমে এই চাহিদা পূরণে গভীর মনোযোগ দেওয়া অপরিহার্য।

এত ছোট পোষাক পরিধান করা যাতে সতর বা সতরের কিছু অংশ উন্মুক্ত হয় অথবা এমন পাতলা কাপড় ব্যবহার করা যাতে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেখা যায়, নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই এসব হারাম। একইভাবে, এমন আঁটসাঁট পোশাক, যার উপর দিয়ে শরীরের আবরণের অংশগুলি বের হয়, তাও নিষিদ্ধ।

পোশাকে অন্যদের সাদৃশ্য হতে  হতে পারবেনাঃ

পোশাকে দুটি জিনিস অনুকরণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

  • এক. কাফির-মুশরিকদের পোশাক গ্রহণযোগ্য নয়। ইবনে উমর থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের অনুসরণ ও অনুকরণ করবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সুনানে আবু দাউদ)

 

  • দুই. বিপরীত লিঙ্গের মতো পোশাক পরতে পারে না। অর্থাৎ পুরুষদের জন্য নারীদের মতো পোশাক পরা এবং নারীদের জন্য পুরুষের মতো পোশাক পরা জায়েয নয়। ইসলাম নারী-পুরুষ উভয়কেই শালীনতা ও  নিজ নিজ পোশাক  পরিধানের নির্দেশ দেয়, কিন্তু পোশাকের ক্ষেত্রে উভয়কেই স্বতন্ত্রতা বজায় রাখারও  নির্দেশ দেয়। এ ব্যাপারে হাদীস শরীফে অত্যন্ত কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীর ছদ্মবেশ ধারণকারী পুরুষকে এবং পুরুষের ছদ্মবেশ ধারণকারী নারীকে অভিশাপ দিয়েছেন। (সহীহ বুখারী)
সিল্কের কাপড় না পরাঃ

ইসলামে সিল্কের বা রেশমের  পোশাক পুরুষদের জন্য নিষিদ্ধ, তবে মহিলাদের জন্য অনুমোদিত। স্বর্ণ ব্যবহার মহিলাদের জন্য জায়েয, কিন্তু পুরুষদের জন্য হারাম। যে কোনও রঙ মহিলারা পরতে পারেন, তবে কিছু রঙ পুরুষদের জন্য অবাঞ্ছিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য রেশমী কাপড় ও সোনা ব্যবহার করা হারাম; কিন্তু এটা মহিলাদের জন্য হালাল।’ (তিরমিযী)

পোশাক লাল, জাফরান, হলুদ রঙয়ের হতে পারবে নাঃ

আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, “আমি লাল সওয়ারীতে চড়িনা, আমি হলুদ পোশাক পরি না এবং আমি রেশমি পোশাক পরি না।” (সুনানে আবু দাউদ)

ইমাম নববি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, তবে লাল ও হলুদের সাথে অন্য রঙ মিশ্রিত থাকলে উক্ত পোশাক পরতে কোনো বাধা নেই।

তবে তাকওয়া হলো  যেহেতু আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি নিষেধ করেছেন,  সেহেতু অবিমিশ্র উজ্জ্বল লাল ও হলুদ উভয় রংয়ের পোশাক পুরুষদের জন্য না পরাই উত্তম।

পোশাকের মাধ্যমে অহংকার ও প্রদর্শনের মানসিকতা পরিত্যাগ করা বাঞ্ছনীয়ঃ  হাদিস শরীফে সতর্ক করা হয়েছে যে, পোশাকের মাধ্যমে যেন মানুষের মধ্যে অহংকার প্রবেশ না করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি অহংকারবশত তার কাপড় মাটিতে টেনে নিয়ে যায়, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না। (সহীহ বুখারী)

অপচয় এড়ানো উচিতঃ

বিলাসিতা বা শুধু শখের জন্য অতিরিক্ত কাপড় কেনা ইসলামে হারাম। মহান আল্লাহ বলেন, হে বনী আদম! প্রত্যেক নামাযের সময় সুন্দর পোশাক পরুন, খাওয়া-দাওয়া করুন কিন্তু অপচয় করবেন না। নিশ্চয় তিনি অপব্যয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সূরা আরাফ)

পোশাকের অপচয় যেমন নিন্দনীয়, তেমনি কৃপণতাও অবাঞ্ছিত। প্রয়োজন ও সামর্থ্যের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে পোশাক ব্যবহার করাই ইসলামের নির্দেশনা। এক সাহাবী নিম্নমানের পোশাক পরিধান করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে উপস্থিত হলেন। এটা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কি অর্থ, সাহায্য ও সম্পত্তি নেই?’ সাহাবি বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে তো আল্লাহ অঢেল সম্পত্তি দান করেছেন।’ তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদ তোমার শরীরে দৃশ্যমান হওয়া উচিত।’ (তাবরানি কাবির )

পোশাক পরিধান করে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিতঃ

যেহেতু পোশাক আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে একটি নেয়ামত, তাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য এটি পরিধান করা উচিত। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো নতুন কাপড় পরিধান করতেন তখন বলতেন, ‘ইয়া আল্লাহ! তোমারই প্রশংসা। তুমিই আমাকে এই পোশাক পরিয়েছ। আমরা তোমার কাছে এই কাপড়ের কল্যাণ ও উপকারিতা প্রার্থনা করি এবং এর অকল্যাণ ও অপকারিতা থেকে পানাহ চাই।’ (জামে তিরমিযী)

 পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করাঃ

ইসলাম পরিচ্ছন্নতার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে, সুন্দরভাবে জীবনযাপন করা ইসলামের শিক্ষা। বিশেষ করে রাসুল (সা.) পরিষ্কার পোশাক পরিধানের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে তার মাথায় অপরিচ্ছন্ন ও অপরিষ্কার চুল দেখে বললেন, এই ব্যক্তি কি এমন কিছু (তেল ইত্যাদি) খুঁজে পায় না যা তার চুল পরিপাটি রাখে এবং পরিপাটি রাখতে সাহায্য করে?

পুরুষদের জন্য প্যান্ট-শার্টঃ

প্রথমে ইংরেজি পোশাক ছিল কিন্তু এটা আর  এখন তাদের বিশেষ পোশাক নেই। সুতরাং যে ব্যক্তি বিদেশী অনুকরণের উদ্দেশ্যে এই পোশাক পরিধান করবে তার জন্য তা নাজায়েজ হবে। কিন্তু যদি তারা তা অনুকরণের উদ্দেশ্য না করে, তাহলে এই পোশাক পরিধান করলে  গুনাহ হবেনা ।  কিন্তু তারপরও কোনো-কোনো    কারণে তা অবৈধ পোশাকের অন্তর্ভুক্ত। যেমন-১. গোড়ালির নিচে পরলে । ২।. স্কিন টাইট মানে এত টাইট হওয়া যে কাপড়ে শরীরের  আকৃতি ফুটে ওঠে। হ্যাঁ, প্যান্ট-শার্ট পরা জায়েজ নয় যদি তা উপরোক্ত ত্রুটিমুক্ত হয় এবং  বিজাতিদের  অনুকরণের উদ্দেশ্যে না হয়।

মহিলাদের জন্য শাড়িঃ

যদি শাড়ি পরেন এবং তা অনুকরণ করার ইচ্ছা না করেন তবে পৌত্তলিকসহ কারো অনুকরণ করার  গুনাহ হবে না, তবে যেহেতু শাড়ি পরলে সাধারণত শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন পেট, পিঠ, বাহু ইত্যাদি  খোলা থাকে। তাই  এভাবে শাড়ি পরা জায়েয হবে না। হ্যাঁ, যদি কেউ এমনভাবে ব্লাউজ তৈরি করে যাতে উপরের অংশগুলোও পুরোপুরি ঢেকে যায় এবং পেট, পিঠ ও বুকের আকৃতি শাড়ির উপর থেকে না বোঝা যায় , তাহলে তা পরা না জায়েয হবে না।

শর্ট -কামিজ , ধুতি থ্রি-পিসঃ

এগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়া অপসংস্কৃতির উপলক্ষণ। তারা চায় নারীদের শরীর এবং দেহবায়ব  পোশাক পরেও উলঙ্গ হয়ে থাকএও।  কিন্তু ইসলাম এটা  চায় না । ইসলাম সেই শালীন পোশাক দাবি করে  যে, পোশাকে নিজের মা-বোন এবং সম্মানী ব্যক্তিদের মত হয় । কিন্তু বিজাতিরা এমন পোশাক চায় যা নারীর সৌন্দর্য বের করে দেয় । তাই কামিজ থেকে শর্ট-কামিজ এবং যত দিন যাচ্ছে ততই খাটো এবং টাইট হচ্ছে। হাদীস শরীফে এসেছে-দুই শ্রেণীর লোক জাহান্নামী। ১. ঐ সকল নারী, যারা কাপড় পরিধান করা সত্ত্বেও বিবস্ত্র থাকে … তারা জান্নাতে যেতে পারবে না। এমনকি জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।-(সহীহ মুসলিম )

খুব পাতলা বা টাইট পোশাক নয়ঃ

যে পোশাকটি পরার পরও  শরীর দেখায় বা পোশাকের ওপরে শরীরের  আকৃতি ফুটে ওঠে তাও জায়েয পোশাকের অন্তর্ভুক্ত ন্য।  কারণ এটি সতরকে আবৃত করে না। এ ধরনের পোশাক পরিধান করা হারাম।

ইসলাম সুন্দর। ইসলাম সুন্দর আশাও করে। এবং ইসলামের সকল নির্দেশগুলো সৌন্দর্যমন্ডিত ।  তাই ইসলাম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শালীন এবং সামাজিক পোশাকই  দাবি করে। যে পোশাক কোন বেহায়াপনা উলঙ্গপনা এবং অমানবিকতা না ছড়ায় । সেই পোশাক পড়াই ইসলামিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে চমৎকার মানসিকতার পরিচয়ক।

আরও পড়ুন

হিজাব বা পর্দা সমাজকে নিরাপত্তা দেয়ঃ বেপর্দা করে ধ্বংস

হিজাব মুসলিম নারীদের এবং পুরো সমাজের মর্যাদা ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X