তাকবীরে তাশরীক পাঠের ইতিহাস ও গুরুত্ব
তাকবীরে তাশরিক অর্থাৎ শুকরিয়ার তাকবীর ঘোষণা। হযরত ইব্রাহিম আঃ কর্তৃক তদীয় পুত্র,ভবিষ্যৎ নবী ইসমাইল (আঃ)কে কুরবানী করে যখন চক্ষু খুললেন তখন দেখতে পেলেন ইসমাইল (আঃ)এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়েছে । তখনই আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তিনজনে মিলে যে তাকবীর দিয়েছিলেন তাই কৃতজ্ঞতার তাকবীর বা তাকবীরে তাশরিক । নিম্নের আলোচনায় সে বিষয়ে আমরা সংক্ষেপে ভালোভাবে জানার চেষ্টা করব। আসুন জেনে নেয়া যাক তাকবীরে তাশরীক পাঠের ইতিহাস ও গুরুত্ব।
হজ্জ ও কুরবানীর মাস এলে তাকবীরে তাশরীক পড়া ওয়াজিব হয়ে যায়। আরাফার দিন তথা আরবি জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আছর পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত প্রতি ফরয নামাযের পর একবার করে তাকবিরে তাশরীক পড়া প্রত্যেকটি মুসলিমের উপর ওয়াজিব।
কিন্তু এই তাকবীরে তাশরীক এলো কিভাবে? এর গুরুত্ব কি? আসুন জেনে নেয়া যাক তাকবীরে তাশরীক পাঠের ইতিহাস ও গুরুত্ব।
হজ ও কুরবানী মাসে নির্ধারিত ৫ দিন ও ২৩ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর তাকবীরে তাশরীক পড়া ওয়াজিব বা আবশ্যক। তাকবীরে তাশরীকের দীক্ষাও চমৎকার। এর গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলতও অনেক বেশি।
যেভাবে তাকবীরে তাশরীক শুরু হলোঃ-
হজরত ইব্রাহিম (আ.) যখন তার শিশুপুত্র ইসমাইলকে কোরবানির আদেশ মোতাবেক যবেহ করার জন্য মাটিতে শুইয়ে দেন, তখন আল্লাহ তায়ালা হজরত জিবরাইল (আ.)-কে বেহেশত থেকে দুম্বা তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেন।
হজরত ইসমাইলকে জবাই করার আগে হজরত জিব্রাইল (আ.) আকাশে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করতে থাকেন যাতে তিনি দুম্বার সঙ্গে পৌঁছাতে পারেন।
اَللهُ اَكْبَر – اَللهُ اَكْبَر / আল্লাহু আকবার; আল্লাহু আকবার। অর্থাৎ আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান।
হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম তাকবীরের আওয়াজ শুনে কাপড়ে ঢাকা চোখ খুলে দেখলেন যে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালামের আনা দুম্বা ইসমাইল আলাইহিস সালামের পরিবর্তে কোরবানি করা হয়েছে। অতঃপর তিনি তাওহীদের কালেমা এবং এর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করলেন এভাবেঃ
لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ واَللهُ اَكْبَر / লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার। অর্থাৎ তুমি ছাড়া কোন মাবুদ নেই; তুমিই শ্রেষ্ঠ
পিতার মুখ থেকে তাওহীদের এই অমূল্য বাণী শুনে হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামও মহান আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং বললেন-
اَللهُ اَكْبَر وَ لِلهِ الْحَمْد / আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ। অর্থাৎ আল্লাহ মহান,সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য।
এভাবেই তিনজনের প্রশংসা আল্লাহর কাছে খুবই পছন্দের হয়ে গেল । আর অনন্তকাল ব্যাপিয়া দুনিয়ার সকল মুসলিমের উপর এই পছন্দের তাকবীরকে নির্দিষ্ট সময়ে ওয়াজিব করে দিলেন। হয়ে গেলো তাকবিরে তাশরিকের ইতিহাস।
তাকবীরে তাশরীকের তাৎপর্য ও গুরুত্বঃ-
উল্লেখিত ৫ দিন অর্থাৎ৯ ই জিলহজ ফজর থেকে ১৩ই জিলহজ আসর পর্যন্ত প্রতিদিনের ২৩ টি ফরজ নামাজের পর তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা হজ করা এবং কুরবানী করা সহ মুসলিম উম্মাহর জন্য ওয়াজিব বা আবশ্যক। শুধু তাকবীর নয়, তাকবীরে তাশরীক-
الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلاالله والله أكبر، الله أكبر ولله الحمد
উচ্চারণঃ-আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার; লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার; ওয়ালিল্লাহিল হামদ।
অর্থ: আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; আল্লাহ্ ব্যাতিত কোন মাবুদ নাই; আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য।
এটি সর্বশক্তিমান আল্লাহর ভালবাসার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতার তাসবীহ। যা একজন প্রধান ফেরেশতা, একজন বর্তমান নবী এবং ভবিষ্যত নবীর কণ্ঠ থেকে তাসবীহের সংকলন।
এই প্রশংসা বাক্যটি আল্লাহ তায়ালা এত পছন্দ করেছেন যে, আল্লাহ তায়ালা উল্লিখিত ৫ দিন (৯ জিলহজ ফজর থেকে১৩ জিলহজ আসর ২৩) ফরজ নামাজের পরে এটি ১ বার পাঠ করা মুসলিম উম্মাহর জন্য ওয়াজিব বা অপরিহার্য করে দিয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, তাকবীরে তাশরীক হলো মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রশংসার ঘোষণা। আর কোরবানি হলো আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের কাছে অধিক প্রিয় হওয়ার মাধ্যম। তাশরীক দ্বারা কুরবানী ও তাকবীর একত্রে বাঁধা। তাকবীরে তাশরীকের ইতিহাস কুরবানীর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
আরবি জিলহজ মাসে হজ করতে হয় এবং এ মাসে হজের প্রথম দিন অর্থাৎ আরাফার দিন ফজরের নামাজ থেকে শুরু করে হজের শেষ দিন আসরের নামাজ পর্যন্ত ২৩ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হয়। তবে কিন্তু ১০, ১১ ,১২ জিলহজের সন্ধ্যার মধ্যেই কুরবানী করতে হয়।
তাকবীর ৫ দিন পড়তে হয় এবং কুরবানী ৩ দিন করা যায়। হজ, তাকবীর ও কুরবানীর মধ্যে রয়েছে আল্লাহর নৈকট্য লাভের নিবিড় সম্পর্ক। হজ ও কুরবানীর যেমন ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে, তেমনি তাকবীরও তাশরীক ও ঐতিহাসিক তাৎপর্যের দাবি রাখে।
সম্পর্কিত খবর :
কোরবানির পশুর চামড়া ব্যবহারে ইসলামের বিধান
পার্বতীপুরে সনাতন থেকে ইসলাম গ্রহণ করেছেন একই পরিবারের ৫ সদস্য
হজে জমজমের পানি অপচয় না করার অনুরোধ সৌদি আরবের
কুরবানির ১০ দিন আগে যেসব কাজ করা সুন্নাত
হজ্জ,কোরবানি ও তাকবীরঃ-
হজের মাস ও দিনে তাকবীরে তাশরীক ও কুরবানী করতে হবে। যেদিন হজ্জ শুরু হবে সেদিন থেকেই তাকবীরে তাশরীক শুরু করতে হবে। আর শেষ দিনে মিনা ত্যাগ করার সময় তাকবীরে তাশরীক পাঠ শেষ করতে হবে। আর এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে হজরত ইব্রাহিম ও ইসমাইল আলাইহিস সালামের স্মৃতির ঘটনা ও ইতিহাস। অতএব বলা যায় , তাকবীরে তাশরীকের ইতিহাস কুরবানীর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
কোরবানির ইতিহাস সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে ঘোষণা করেছেনঃ-
فَلَمّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعىَ قالَ يٰبُنَىَّ إِنّى أَرىٰ فِى المَنامِ أَنّى أَذبَحُكَ فَانظُر ماذا تَرىٰ ۚ قالَ يٰأَبَتِ افعَل ما تُؤمَرُ ۖ سَتَجِدُنى إِن شاءَ اللَّهُ مِنَ الصّٰبِرينَ
অর্থঃ- অতঃপর যখন তিনি (ইসমাঈল (আঃ) পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হলেন, তখন ইব্রাহিম তাকে বললেন, হে পুত্র! আমি স্বপ্ন দেখি যে আমি তোমাকে কোরবানি করছি; এখন তোমার মতামত কি? পুত্র বললেন, বাবা! আপনাকে যেভাবে আদেশ করা হয়েছে সেভাবে করেন । আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের দলে পাবেন।’ (সূরা আস সফফাত: আয়াত ১০২)
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে তার সন্তান কোরবানির নির্দেশ দেন।(এর চেয়ে বড় পরীক্ষা আর কি হতে পারে?) এ নির্দেশের কথা সন্তানকে জানালে সে-ও তা মেনে নেন। অতঃপর হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম সন্তান ইসমাইলকে জবেহ করার প্রস্তুতি নিলে আল্লাহ তাআলা তার কোরবানিকে কবুল করে নিলেন। তখনই হযরত জিব্রাইল (আঃ) ইব্রাহিম (আঃ) ও তার সুযোগ্য পুত্র ভবিষ্যৎ নবী ইসমাইল (আঃ) আল্লাহর শুকরিয়া স্বরূপ তাকবীরে তাশরিক দেন।
সুতরাং মুসলিম উম্মাহর সব প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষের উপর সর্বাবস্থায় সবখানে জামাতে কিংবা একাকি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর সবার ওপর একবার করে তাকবিরে তাশরিক পাঠ করা ওয়াজিব। কারণ তাকবীরে তাশরীক পাঠের ইতিহাস ও গুরুত্ব অপরিসীম ।
টাইম টিভি বাংলায় আরও পড়ুন :
সাইকেলে ৩২ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি কিশোরের
‘টাইপ-সি’ চার্জার থাকবে সব ডিভাইসেঃ ই-বর্জ্য কমাতে এই পদক্ষেপ
মহাকাশে কমলা রঙের আরেকটি ‘পৃথিবী খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা
বাতিল হল ২০০০ টাকা বাধ্যতামূলক করের প্রস্তাব
যুক্তরাষ্ট্রকে পরমাণু যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া
1 Comment