December 5, 2024
ফলের রাজা আম

ফলের রাজা আম

ফলের রাজা আম

ফলের রাজা আম

আমকে বলা হয় ‘ফলের রাজা’। বাংলাদেশের রাজশাহী, নওগাঁ, দিনাজপুর, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের চাষ বেশি হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আমের জন্য বিখ্যাত ‘কানসাট আম মার্কেট’ বাংলাদেশ ও এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় আমের বাজার হিসেবে পরিচিত। তবে মকিমপুর, চককির্তি, লসিপুর, জালিবাগান, খানাবাগানসহ কয়েকটি স্থানে অত্যন্ত সুস্বাদু ও চাহিদাসম্পন্ন আম পাওয়া যায়।

আমের অনেক জাত রয়েছে যেমন: ফজলি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, খিরসা, অরুণা, আম্রপালি, মল্লিকা, সুবর্ণরেখা, মিসরিদানা, নীলাম্বরী, কালীভোগ, কাচামিঠা, আলফোনসো, বারোমাসি, তোতাপুরি, কারাবাউ, কুই সাউই, গোপালভোগ। কেন্ট, সূর্যপুরী, পাহুতান, ত্রিফলা, হাড়িভাঙ্গা, চাটপাড়া, গুথলি, লখনা, আদাইরা, কালাবতী ইত্যাদি। আম ফলের আকার, আকৃতি, মাধুর্য, গায়ের রং এবং ভেতরের রং (যা ফ্যাকাশে হলুদ, সোনালি বা কমলা হতে পারে) বৈচিত্র্য থেকে বৈচিত্র্য।

বাংলাদেশ, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, মিশর, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে আম জন্মে। বাংলাদেশের রাজশাহী ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সবচেয়ে বেশি জন্মে। আম বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ফল।

আম সাধারণত কাঁচা অবস্থায় শক্ত এবং টক হয়। কিন্তু পাকলে খুব রসালো ও মিষ্টি হয়। কিছু আম কাঁচা অবস্থায় মিষ্টি হয়। এ জাতের আমকে বলা হয় কাঁচা মিষ্টি আম।

আম, বাংলাদেশের জাতীয় গাছ। এক্ষেত্রে জাতীয় ফল কাঁঠাল হলেও জাতীয় গাছ আম।

আমের -ইতিহাস

মুঘল আমলের আগেও ভারতে আমের ব্যাপক চাহিদা ছিল। তবে মুঘলদের আগমনের পর আমের চাষ বাড়তে থাকে। মুঘল আমলের আগে আমের কদর ছিল সোনার সমান। কিন্তু শাহজাহানের আগমনের পর প্রক্রিয়াটি পাল্টে যায়। আম চাষ শুরু হলেই দেশে প্রচুর পরিমাণে আম পাওয়া যায়। মুঘল আমল থেকেই ভারতে আমের আবির্ভাব শুরু হয়। তখন থেকেই উপহার হিসেবে আম দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। আম ছিল শাহজাহানের প্রিয় ফল।

ধর্মে আমের ইতিহাস

বিভিন্ন ধর্ম আমের মাহাত্ম্যের কথা উল্লেখ করেছে। কথিত আছে বৌদ্ধ ধর্মে আমের যথেষ্ট গুরুত্ব ছিল। জানা যায়, গৌতম বুদ্ধ আম গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিয়েছিলেন। ফলে বৌদ্ধ ধর্মে আমের গুরুত্ব অপরিসীম। বড় ধর্মীয় সফরে গেলে বৌদ্ধ পুরোহিতরা আম নিয়ে যেতেন।

ব্যবহার

ফল হিসেবে খাওয়া ছাড়াও আম থেকে চাটনি, আচার, মারমালেড, জ্যাম, জেলি ও জুস তৈরি করা হয়।

পুষ্টির মান

স্বাদে, পুষ্টিতে ও গন্ধে আম অতুলনীয়। তাই আমকে ফলের রাজা বলা হয়। আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ বা ক্যারোটিন, ভিটামিন ‘সি’, মিনারেল এবং ক্যালরি। ভিটামিন ‘এ’-এর দিক থেকে আমের স্থান পৃথিবীর প্রায় সব ফলের উপরে।

রপ্তানি

বাংলাদেশের আম বিশ্বের ২৮টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে অস্ট্রিয়া, বাহরাইন, বেলজিয়াম, কানাডা, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হংকং, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জর্ডান, কুয়েত, লেবানন, মালদ্বীপ, নেদারল্যান্ডস, ওমান, পর্তুগাল, কাতার, রাশিয়া, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড। সুইডেন। , সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর মধ্যে রয়েছে। তবে বেশিরভাগ আম যুক্তরাজ্যে রপ্তানি হয়। এর পরেই রয়েছে সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। বর্তমানে সাত জাতের আম রপ্তানি হচ্ছে। সেগুলো হলো গোপালভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া, হান্ডিভাঙ্গা, ফজলি, আম্রপালি ও সুরমা।

রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন বাড়াতে কৃষি মন্ত্রণালয় ‘রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প’ গ্রহণ করেছে। ২০২২ থেকে ২০২৭ সময়ের জন্য প্রকল্পটি ১৫ টি জেলার ৪৬ টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে আম উৎপাদন প্রদর্শনী, রপ্তানিযোগ্য আমের বাগান তৈরি, বিদ্যমান আম বাগানে সার ও কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারসহ বিভিন্ন কাজ করা হয়েছে।

প্রতিদিন কতটা আম খাওয়া উচিত?

একজন মানুষের দৈনিক কতটা আম খাওয়া উচিত তা আসলে প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। কারণ একজন ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা নির্ভর করবে সেই ব্যক্তি কতটা আম খেতে পারবে বা খাবে না।

এ বিষয়ে পুষ্টিবিদরা বলছেন, একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ সহজেই দৈনিক দুটি আম খেতে পারেন। সেক্ষেত্রে ফজলি আম খাওয়াই ভালো। কারণ ফজলি আমে ভিটামিন এ, পটাশিয়াম, বিটা ক্যারোটিনের পরিমাণ বেশি।

তবে কিডনি বা ডায়াবেটিস রোগীদের আম খাওয়ার সময় সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিডনি রোগীদের আম খাওয়ার জন্য চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ আমে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে, যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর।

এছাড়াও, যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা সুপারিশ করে যে ১৯ থেকে ৬৪ বছর বয়সী প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন ৪০মিলিগ্রাম ভিটামিন সি প্রয়োজন। যাইহোক, এটি US প্রস্তাবিত খাদ্যতালিকাগত ভাতা ৬০ মিলিগ্রাম।

এখন, যেহেতু এক কাপ আমে প্রায় ৬০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে, তাই অন্য কোনো জটিলতা না থাকলে একজন সুস্থ মানুষ সেই পরিমাণ আম খেতে পারেন।

আম পাকার সময়
পরিপক্কতার সময়- আমের নাম

 

২৫ মে থেকে গোবিন্দভোগ
৩০ মে থেকে গোলাপখাস
১ লা জুন থেকে গোপালভোগ
৫ জুন থেকে রানিপছন্দ
১২ জুন থেকে হিমসাগর
১৫ জুন থেকে ল্যাংড়া
২০শে জুন থেকে লক্ষ্মণভোগ
২০শে জুন থেকে হাড়িভাঙ্গা
১ লা জুলাই থেকে আম্রপালি
১ লা জুলাই থেকে মল্লিকা
৭ জুলাই থেকে ফজলি
২৫ জুলাই থেকে আশ্বিনা

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X