বাজারজাত খাবারের ৭০ শতাংশেই ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে: বাকৃবি উপাচার্য
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, বর্তমানে বাজারের ৭০ শতাংশ খাদ্যে ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। মানুষের নৈতিকতার অবক্ষয়ের কারণে আরো তা প্রকট হয়ে উঠেছে। ফলে দেশের মানুষ নানা মারণ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তা কমাতে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে।
রাজধানীর বাকরিবিতে কৃষি অনুষদের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত‘বাংলাদেশে অধিক বিপদজনক কীটনাশক এবং রাসায়নিকের উন্নত ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা উন্নয়ন’শীর্ষক প্রকল্পের উদ্বোধনী কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) অর্থায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগ এই কর্মশালার আয়োজন করে।
প্রকল্পের দলনেতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. প্রধান বক্তৃতায় গোপাল দাস বলেন, বেশি ক্ষতিকর কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারে স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এটি এখন একটি বৈশ্বিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারে মাটির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। ক্ষতিকর পোকামাকড় ধ্বংস করার পাশাপাশি উপকারী পোকাও ধ্বংস হচ্ছে। এছাড়াও, অতিরিক্ত রাসায়নিক সমৃদ্ধ শাকসবজি খেলে কিডনি এবং লিভারের সমস্যা এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে। তাই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ফসলের সঠিক উৎপাদন বজায় রাখতে এসব ক্ষতিকর কীটনাশকের সঠিক ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য।
ডাঃ গোপাল দাস আরও বলেন, দেশে মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহারের কারণে ভর্তির সংখ্যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং এ কারণে মৃত্যুর হার নবম।
এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর কীটনাশক ও রাসায়নিক সার নিষিদ্ধ করেছে শ্রীলঙ্কা।২১টি কীটনাশক বর্তমানে আমাদের দেশে নিষিদ্ধ, কিন্তু কিছু কীটনাশক এখনও ব্যবহার করা হচ্ছে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষতিকর কীটনাশক ও রাসায়নিক দ্রব্য শনাক্ত করা হবে, আমদানির তথ্য জরিপ করে তাদের ব্যবহারের পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে এবং মাঠ পর্যায়ে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের প্রভাব নির্ধারণ করা হবে।
নিষিদ্ধ, সীমিত বা নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাত্রা সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। এ ছাড়া ক্ষতিকারক কীটনাশকের বিকল্প হিসেবে কার্যকর কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনা কৌশল চিহ্নিত করতে কৃষক, ডিলার এবং সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রচারণা, সমাবেশ, জাতীয় ও আঞ্চলিক কর্মশালা, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করা হবে।
এ লক্ষ্যে ৯টি জেলার ২৭টি উপজেলার ৬৪৫ জন কৃষক, ৫৪ জন ডিলার ও ৫৪ জন সম্প্রসারণ কর্মকর্তা একসঙ্গে কাজ করবেন। তিনি বলেন, নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হবে।
কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মো. এমদাদুল হক চৌধুরী। এফএও বাংলাদেশের সিনিয়র কারিগরি উপদেষ্টা সাসো মার্টিনভ সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি অনুষদের ডিন ড. মোঃ গোলাম রব্বানী, বাকরবী গবেষণা পদ্ধতির পরিচালক প্রফেসর মাহফুজা বেগম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ প্রকল্প উইং এর পরিচালক ড. আশরাফ উদ্দিন
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কৃষি বিভাগের অধ্যাপক ড. রমিজ উদ্দিন
উল্লেখ্য, গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব ফল ও শাকসবজি কীটনাশক দিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছে সেগুলো এখন বাংলাদেশে বিক্রি হয়। এগুলো দেখতে সুন্দর হয় , সহজে পচে না, আকার, আকৃতি হুবহু গ্রাহকের মনের মত। ফলে ক্রেতা তা কিনে খুশি মনে খায়।
১২ টি অত্যন্ত বিষাক্ত কীটনাশক গত ৫০ বছরে পুরুষ ও মহিলাদের উর্বরতা ৪২ শতাংশ হ্রাস করেছে। মানুষের রক্ত, মাংসপেশি ও বুকের দুধে কীটনাশক পাওয়া গেছে। কীটনাশকের কারণে ত্রুটিপূর্ণ শিশুর জন্ম হচ্ছে। কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, লিভার, পিত্ত, পেটের রোগের অন্যতম প্রধান কারণ হলো অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার। জানা গেছে, টমেটো পাকা, রং করা ও সংরক্ষণে রাইপেন, ইথোপেন, টমটমসহ বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়।
প্রায় ৯৮ % সবজি কীটনাশক দিয়ে চিকিত্সা করা হয়। বলা যায়, উৎপাদন থেকে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে কৃষিপণ্যে বিষ মেশানো হচ্ছে। ফলে কৃষিজাত খাদ্যপণ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের অস্তিত্ব পাওয়া যায় ব্যাপক হারে। কীটনাশক ১৫ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সবজির জন্য বিষাক্ত থাকে; যা রান্নার তাপে নষ্ট হয় না। কিন্তু দেখা যায় কীটনাশক প্রয়োগের ২-৩ দিন পর সবজি সংগ্রহ করে বাজারজাত করা হয়। ফলে প্রতিনিয়ত বিষযুক্ত সবজি খেতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
আরও জানতে
বিশ্বের ৩১০ কোটি মানুষ স্বাস্থ্যকর খাবার কেনার সামর্থ্য রাখে না