আবারো এক বাংলাদেশী রাখালকে গুলি করে হত্যা করেছে ভারতের বিএসএফ
মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে লালমনিরহাটের বুড়িরহাট সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে মুরুলি চন্দ্র নামে এক বাংলাদেশি রাখাল নিহত হয়েছেন। এ সময় বিএসএফের গুলিতে আহত হয়েছেন আরও ২ জন। গত শুক্রবার মধ্যরাতে কালীগঞ্জ উপজেলার বুড়িরহাট সীমান্তের ৯১৩ নম্বর পিলার থেকে একশ গজ দূরে ভারতের অভ্যন্তরে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে গত ২৬ মার্চ লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দিঘলতড়ি সীমান্তে ৯২৩ নম্বর সীমান্ত পিলারের কাছে বিএসএফের গুলিতে লিটন মিয়া নামে এক বাংলাদেশি কিশোর নিহত হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্তে হত্যাকাণ্ড ঘটলেই দুই দেশের মধ্যে পতাকা বৈঠক হয়। প্রতিবারই বাংলাদেশ যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এবং ভারত সীমান্ত হত্যার সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেয়। বিএসএফ রাবার বুলেট ব্যবহার করবে, প্রাণঘাতী অস্ত্র নয়। বাংলাদেশের মানুষ ভারতের কাছ থেকে এমন প্রতিশ্রুতি অসংখ্যবার শুনেছে। ভারত বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। এমনকি বাংলাদেশ সীমান্তের অভ্যন্তরে বিএসএফ প্রবেশ, সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার, নির্যাতন ও বিভিন্ন মামলায় আটক করার ঘটনাও কম নয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মুরুলি চন্দ্র কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের উত্তর বালাপাড়া গ্রামের সুশীল চন্দ্রের ছেলে। আহতরা হলেন, একই এলাকার চন্দ্রপুর গ্রামের আজিমুল হকের ছেলে মিজানুর রহমান (৩৩) ও নূর ইসলামের ছেলে লিটন মিয়া (৪৩)। যথারীতি শুক্রবার রাতে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সহায়তায় ৪/৫ জনের একটি চোরাকারবারী দল গরু পাচার করতে ভারতে প্রবেশ করে। গোপালরা ভারতীয় গরু নিয়ে বুড়িরহাট সীমান্ত দিয়ে ফিরছিল। বিএসএফ তাদের লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ৩ বাংলাদেশি রাখাল। পরে অন্যরা আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে রংপুর নেওয়ার পথে মুরুলি চন্দ্র মারা যান। বাকি দুজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
কালীগঞ্জ থানার ওসি ইমতিয়াজ কবির বলেন, সীমান্ত এলাকায় গুলিবিদ্ধ মুরলী চন্দ্র নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভূরাজনীতি বিশেষজ্ঞ বলেন, এটা আশ্চর্যজনক যে, উভয় সরকার একাধিকবার পারস্পরিক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলেও সীমান্তে এখনো হত্যাকাণ্ড চলছে। এর মানে, ভারতীয় বর্ডার গার্ড তার সরকারের কাছ থেকে কোনো নির্দেশ পাচ্ছে না। আমার কাছে মনে হয় ভারত সরকার সীমান্ত হত্যাকাণ্ডকে মোটেই পাত্তা দেয় না। এছাড়াও আমরা বিষয়টি নিয়ে সঠিকভাবে এগোতে পারছি না। ভাবুন তো ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে এমন হত্যাকাণ্ড ঘটলে কী হতো! বাংলাদেশের উচিত এর তীব্র প্রতিবাদ করা এবং হত্যাকাণ্ড বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-২৩ সাল পর্যন্ত ৯ বছরে বিএসএফের হাতে ২৪৫ বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে ২০১৫ সালে ৪৬ জন, ২০১৬ সালে ২৫ জন, ২০১৭ সালে ২৪ জন, ২০১৮ সালে ১৪ জন, ২০১৯ সালে ৪৩ জন, ২০২০ সালে ৪৯ জন, ২০২১ সালে ১৭ জন, ২০২২ সালে ২৩ জন এবং ২০২৩ সালে ৩০ জন। । এ বছর সীমান্ত হত্যার প্রথম শিকার হন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এর একজন সদস্য।
এর আগে গত ২৬ মার্চ; উল্লেখ্য, নওগাঁয় বিএসএফের গুলিতে একজন নিহত, লালমনিরহাটে আরেকজন আহত হয়েছেন। নওগাঁর পোরশা উপজেলায় আল আমিন নামে এক বাংলাদেশি যুবককে গুলি করে হত্যা করেছে বিএসএফ। গত ২৬ মার্চ সকালে হাপানিয়া সীমান্তের ওপারে ভারতের অভ্যন্তরীণ কেদারিপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত আল আমিন উপজেলার নিতপুর ইউনিয়নের চক বিষ্ণুপুর কালনী মোড়ের মৃত সিদ্দিকের ছেলে। নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে নিতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হক জানান, ২৬ মার্চ বিকেলে আল আমিন বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। পরে মঙ্গলবার সকালে স্থানীয়রা জানান, ভারতের অভ্যন্তরে বিএসএফের গুলিতে আল আমিন নিহত হয়েছেন। তবে কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়।
যদিও সরকারী মতে বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের সম্পর্ক এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। কোন কারণে ভারতের সঙ্গে এই বন্ধুত্ব চিরকাল থাকবে বলে আশা করছেন সরকারের মন্ত্রীরা ? । এমনকি বর্তমান সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীও প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন যে তারা ডামি। কারণ ভারত তাদের পাশে ছিল যার ফলে
নির্বাচনের মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় এসেছেন। দেশের মানুষ যখন ভারতীয় পণ্য বর্জনের প্রচারণা চালাচ্ছে, এখন ওই মন্ত্রীরা ভারতীয় পণ্য বয়কটের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ-এর হাতে প্রাণ হারাচ্ছেন বাংলাদেশি নাগরিকরা, অথচ বর্তমান সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা ভারত বিজয়ের গানে মত্ত। এমনকি এবার যদিও মহান স্বাধীনতা দিবসে সীমান্তে বিজিবির হাতে প্রাণ হারান এক বাংলাদেশি।
আরও পড়তে
পৃথিবীর আর কোনো সীমান্ত নেই যেখানে এত মানুষ হত্যা হয়েছে: এবি পার্টি