স্বাধীনতা দিবসেও সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি খুন: থামছেই না সীমান্ত হত্যা
নওগাঁয় বিএসএফের গুলিতে একজন নিহত, লালমনিরহাটে আরেকজন আহত হয়েছেন। নওগাঁর পোরশা উপজেলায় আল আমিন নামে এক বাংলাদেশি যুবককে গুলি করে হত্যা করেছে বিএসএফ। গতকাল সকালে হাপানিয়া সীমান্তের ওপারে ভারতের অভ্যন্তরীণ কেদারীপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত আল আমিন উপজেলার নিতপুর ইউনিয়নের চক বিষ্ণুপুর কালনী মোড়ের মৃত সিদ্দিকের ছেলে। নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে নিতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হক জানান, সোমবার বিকেলে আল আমিন বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। পরে মঙ্গলবার সকালে স্থানীয়রা জানান, আল আমিন ভারতের অভ্যন্তরে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন। তবে কি কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
যদিও সরকারি মতে বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের সম্পর্ক এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। কোনো কারণে ভারতের সঙ্গে এই বন্ধুত্ব চিরকাল থাকবে বলে আশা করছেন সরকারের মন্ত্রীরা। এমনকি বর্তমান সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীও খোলাখুলি স্বীকার করেছেন যে ভারত তাদের পাশে ছিল বলেই তারা এই ডামি
নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছেন। দেশের মানুষ যখন ভারতীয় পণ্য বর্জনের প্রচারণা চালাচ্ছে, তখন ওই মন্ত্রীরা ভারতীয় পণ্য বয়কটের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। বর্তমান সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা যখন ভারতের জয়গানে মত্ত তখন সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ-এর হাতে প্রাণ হারাচ্ছেন বাংলাদেশি নাগরিকরা। এমনকি গতকাল মহান স্বাধীনতা দিবসে সীমান্তে বিজিবির হাতে প্রাণ হারান এক বাংলাদেশি।
দুই দেশের মধ্যে চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা কোনোভাবেই থামছে না। বিজিবি ও বিএসএফের ডিজি পর্যায়ের সম্মেলনসহ উভয় দেশের সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলোতো বিএসএফ।
এ ছাড়া সীমান্তে প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহারেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু কোনো প্রতিশ্রুতিই কার্যকর হচ্ছেনা । সীমান্তে প্রাণহানি থামছে না। সীমান্ত হত্যার প্রায় ৯০ শতাংশই গুলি করে। সীমান্তে মারধর বা নির্যাতন ও ডুবিয়ে মারার ঘটনাও ঘটছে। তবে হত্যা বন্ধে বিজিবির পক্ষ থেকে জোরালো কোনো উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ রয়েছে।
নওগাঁ ১৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান জানান, ভোরে বিজিবি ভারতের অভ্যন্তরে গুলির শব্দ শুনতে পায়। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের কেদারীপাড়ার দিকে সীমান্ত এলাকার ২৩১/২৩২ নং পিলারের মাঝখানে। এরই মধ্যে বিষয়টি জানতে বিএসএফের কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক ডেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে এবং ফোনে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। অপরদিকে লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে আহত হয়েছেন বাংলাদেশি যুবক লিটন পারভেজ।
গত সোমবার মধ্যরাতে আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দিঘলটারী পশ্চিম সীমান্তের ৯২৩ নম্বর পিলারের কাছে ভারতে এ ঘটনা ঘটে। আহত লিটন দিঘলতরী সাংকাচাওড়া গ্রামের মোকছেদুল হকের জানা যায় , প্রতিদিনের মতো সোমবার রাতেও ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গরু আনতে একদল গোয়াল ভারতে প্রবেশ করে। গরু নিয়ে ফেরার পথে কোচবিহার জেলার দিনহাটা কাইমারি বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের ঘিরে ফেলে। এ সময় গরু পাচারকারীরা এলাকায় ডাকাডাকি করলে লিটন পারভেজসহ ২০-২৫ বাংলাদেশি তাদের উদ্ধার করতে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে। লিটন পারভেজ লাঠি নিয়ে বিএসএফ সদস্যকে ধাওয়া করলে বিএসএফ গুলি চালায়। বাকিরা পালিয়ে গেলেও গুলিতে আহত হয়ে ভারতে পড়ে যান লিটন। পরে তাকে তুলে নিয়ে যায় বিএসএফ। বিজিবি লালমনিরহাট ১৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মোফাজ্জল হোসেন জানান, সীমান্তে লিটন নামে এক যুবক আহত হয়েছেন। বিএসএফ তাকে ভারতের এমজি হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সীমান্ত হত্যার ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ে যেসব সমস্যা দেখা দেয় তা চিহ্নিত না করে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। মাঠপর্যায়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে যথেষ্ট ফাঁক রয়ে গেছে। যার ফলে সীমান্ত হত্যার ঘটনা ঘটছে। হত্যাকাণ্ড শূন্যে নামিয়ে আনতে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় কোনো সমাধান পাওয়া যাবে না। বিষয়টি জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক আদালতে উত্থাপন করা উচিত। আন্তর্জাতিকভাবে এর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।
বিজিবির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, বিজিবি ও বিএসএফের ডিজি পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলনের প্রতিটি বৈঠকেই সীমান্তে হত্যা বন্ধের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হয়। যারা আমাদের কাউন্টার (বিএসএফ) তাদের কাছ থেকেও প্রতিশ্রুতি আসে। আসলে সীমান্ত হত্যার সঙ্গে আমাদের সীমান্তের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, মানুষের জীবনযাত্রার মানসহ অনেক বিষয় জড়িত। আমাদের নাগরিকদের গুলি করা আমাদের জন্য খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা যেমন সবসময় বলি, তারাও প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয় না। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত নানা কারণে সীমান্ত হত্যা বন্ধ হচ্ছে না। যদিও আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।