ডেঙ্গু আক্রান্ত ১০টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুবরণ করেছে বাংলাদেশে
আসছে বর্ষাকাল ডেঙ্গু পরিস্থিতি এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার ভয়াবহতা নিয়ে শঙ্কায় বাংলাদেশের জনগণ। তবে জবাবদিহিতার বাইরে থাকা তদারক বৃন্দের ব্যবস্থা খুবই নগণ্য।
বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশের পরিস্থিতি প্রথম। এশিয়ার কয়েকটি দেশসহ বিশ্বের মোট ১০টি দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে এ অবস্থা প্রকাশ পেয়েছে।ডেঙ্গু আক্রান্ত বাংলাদেশসহ দেশগুলো হলো ব্রাজিল, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কা।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১ জানুয়ারি থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে ২১ জন মারা গেছে। বিশ্বের ১০টি দেশের মধ্যে কোনটি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যার নিরিখে বাংলাদেশের অবস্থান ‘তৃতীয়’। আগের বছরের ২০২৩ সালের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে ১০ টি ডেঙ্গু আক্রান্ত দেশের মধ্যে মৃত্যুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল “প্রথম”। ওই বছর ডেঙ্গুতে ১৭০৫ জন মারা যায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, এ বছর ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি। ঢাকার তুলনায় এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ।
এর আগে মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নির্মূলে করণীয় নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে জানানো হয়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে এক হাজার ৫০০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এই বছর (জানুয়ারি-মার্চ) । আর এরই মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২০ জন। বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, উত্তর সিটি মেয়র আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণ সিটির মেয়র ফজলে নূর তাপস ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, এ বছর ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু রোগীর এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেশি। ঢাকার তুলনায় এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ১৭০৫ জনের মৃত্যু হয়। অর্থাৎ ১০০ জনের মধ্যে ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ২৮ হাজার ৫৯০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ১০৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা ০.৪ শতাংশ। অর্থাৎ বাংলাদেশে মৃত্যুর হার ব্রাজিলের তুলনায় ১০ গুণ বেশি এবং ভারতের তুলনায় ৬ গুণ বেশি। একই বছর ভারতে ৯৪ হাজার ১৯৮জন আক্রান্তের মধ্যে৯১ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২০২৩সালের প্রথম তিন মাসে ৮৪৩জন সংক্রামিত এবং ৯ জন মারা গেছে। তাদের মধ্যে জানুয়ারিতে ৫৬৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এবং ছয়জন মারা গেছে। ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ টি মামলা এবং তিনটি মৃত্যু, মার্চ মাসে ১১১ টি মামলা ছিল এবং কোনও মৃত্যু হয়নি।
চলতি বছরের ২০ মার্চ পর্যন্ত মোট ১৫৯৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১ হাজার ১৩ জন পুরুষ ও ৫৮৬ জন নারী। একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১০ জন পুরুষ ও ১১ জন নারী রয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৬৬ জন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ৫২৭ জন এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার ৩৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরপর ১৮ মার্চ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ২০ জন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ৭ জন এবং ঢাকার বাইরে ১৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
বিভাগভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ঢাকা বিভাগে ৭৪৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ৫৪৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৫৫ জন, বরিশাল বিভাগে ১৯০ জন, খুলনা বিভাগে ৯৩ জন, রাজশাহী বিভাগে ৩৬ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৮ জন, রংপুর বিভাগে ১৩ জন এবং সিলেট বিভাগে ৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
এর আগে ২০১৯ সালে, ঢাকা শহরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ১৫৫,০০০, তবে ২০০ জনেরও কম মারা গিয়েছিল। গত বছর ঢাকা শহরে রোগীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার। তবে মৃত্যু ১ হাজার ৭০০ এর বেশি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস অভিযোগ করেছেন, ‘সঠিক স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়ায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত আর ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর হার বেশি। গতকাল বুধবার বিকেলে পুরান ঢাকার ভুতেরগলি সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
1 Comment