স্বেচ্ছায় অবসর নেননি মুশফিকঃ নির্ভয় মন্তব্য
তামিম এবং মুশফিকের অবসর নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া সহ অনেক মাধ্যম থেকেই কথাবার্তা উঠছে। দুজনের মধ্যে পার্থক্য শুধু এটাই একজন খোদ প্রধানমন্ত্রীদের সাথে দেখা করেছেন আরেকজন তেমন কিছু করেননি। আর বাকি সব যেন একই রকম। মানে চলছে গাড়ি যাত্রাবাড়ী।
মোহাম্মদ মুশফিকুর রহিম
মোহাম্মদ মুশফিকুর রহিম (জন্ম ৯ মে ১৯৮৭) একজন বাংলাদেশী ক্রিকেটার এবং তিনটি ফরম্যাটে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন । রহিম সেপ্টেম্বর ২০১১ থেকে জাতীয় দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হন এবং ২০১৪ সাল পর্যন্ত অধিনায়কত্ব অব্যাহত রাখেন। মূলত তিনি একজন উইকেট-রক্ষক এবং মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। ক্ষীণ বিল্ডের সদা হাস্যোজ্জ্বল খেলোয়াড় স্ট্যাম্পের পিছনে দেশের জন্য চেচামেচিতেই পরিচিত। তিনি বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি এবং সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। তিনি ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২-এ টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেন।
বাংলাদেশের প্রাক্তন কোচ জেমি সিডন্সের মতে, “রহিমের ব্যাটিং এতটাই বহুমুখী যে সে এক থেকে ছয় পর্যন্ত যেকোনো ফর্মেই খেলতে পারে। মুশফিক ছিলেন বগুড়া জিলা স্কুল এবং বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ স্পোর্টস এডুকেশনের ছাত্র। মুশফিক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী ইতিহাসে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন মুশফিক।
২০১৮ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২য় টেস্টে, তিনি এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসে একজন ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ২টি ডাবল সেঞ্চুরি এবং একজন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ২টি ডাবল সেঞ্চুরি করেন।
মুশফিকুর রহিম প্রথম বাংলাদেশী ক্রিকেটার যিনি ICC প্লেয়ার অফ দ্য ম্যান (মে, ২০২১) পুরস্কার জিতেছেন। তিনি ২০২১ সালের মে মাসে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তাদের হোম গ্রাউন্ডে একটি টেস্ট এবং দেশের ভেন্যুতে তিনটি ওয়ানডে খেলেছিলেন। তিনি ম্যান অফ দ্য সিরিজ নির্বাচিত হন এবং শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি করলেন মুশফিকুর রহিম। তিনি ৩২১ বলে ২২ চার ও ১ ছক্কায় ২০০ রান করেন। ২০১৩ সালের শ্রীলঙ্কা সফরে তিনি এই রেকর্ড করেছিলেন। তিনি টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করা ৮ম উইকেটরক্ষক এবং টেস্টে ৬ নম্বরে ব্যাট করে ডাবল সেঞ্চুরি করা নবম ব্যাটসম্যান। ২০১৮ সালের নভেম্বরে, মুশফিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি করে টেস্টে দুটি ডাবল সেঞ্চুরি করার ইতিহাসের প্রথম উইকেট-রক্ষক ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে দুটি ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন।
২০২২সালে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে মুশফিকুর রহিম অবসর নেন। প্রায় দেড় বছর পর এ নিয়ে নির্ভয় বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন টাইগার ক্রিকেটার। মিস্টার ডিপেন্ডেবল। ইঙ্গিত দিলেন যে, তিনি তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অবসর নিয়েছেন।
২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপে সুবিধা করতে পারেননি মুশফিকুর রহিম। মিস্টার ডিপেন্ডেবল ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর সোশ্যাল মিডিয়ায় অবসরের ঘোষণা দেন। সেই পোস্টে, তিনি লিখেছেন যে বাংলাদেশের হয়ে অন্য দুটি সংস্করণ, টেস্ট এবং ওয়ানডেতে মনোযোগ দিতে তিনি টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিচ্ছেন।
সংক্ষিপ্ত ফরম্যাট থেকে অবসর নেওয়ার পর দুই বিপিএলে শক্তিশালী পারফরম্যান্স দিয়েছেন মুশফিক। গতবার, মুশফিক সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে ১৫ ইনিংসে ৩৯ গড়ে এবং ১৩৩২ স্ট্রাইক রেটে ৩৫৭ রান করেছিলেন। এখন পর্যন্ত ১৪ ইনিংসে মুশফিকের সংগ্রহ ৩৩ গড়ে ৩৬৭ এবং ১২৩ স্ট্রাইক রেট। তার দল দুইবার বিপিএল ফাইনালিস্ট ছিল। ইন-ফর্ম মুশফিকের টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত কি জ্বলছে? বুধবার বিপিএলের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে রংপুর রাইডার্সকে হারানোর পর ফরচুন বরিশালের ব্যাটসম্যান মুশফিক রহস্যজনকভাবে বলেন, ভাই আপনি কি অবসর নিয়েছেন?কিছুক্ষণ মাথা ঝাঁকিয়ে বলেন, ‘হ্যাঁ, অবসর নিয়েছিলাম তো।’ এরপর মুশফিক বলেন, ‘না! না! (অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে) আক্ষেপ নেই কোনো। আক্ষেপের কী আছে?’এরপর হাসি দিলেন ।
বিপিএলের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মুশফিকুর রহিম।
মিস্টার ডিপেন্ডেবল ১২৫ ম্যাচ খেলে৩৬.৯২ গড়ে ৩ হাজার ২৪৯ রান এবং ১৩২.১৮ স্ট্রাইক রেট সংগ্রহ করেছেন।
শীর্ষে তামিম ইকবালের রান ৩ হাজার ৩৮৩। বিপিএলে ২০০০-এর বেশি রান এবং ১৩০-এর বেশি স্ট্রাইক রেট নিয়ে মুশফিকুরের (১৩২) চেয়ে এগিয়ে আছেন মাত্র একজন, সাকিব আল হাসান। ১৩৯ স্ট্রাইক রেটে সাকিবের সংগ্রহ ২ হাজার ৩৯৭ রান। দুর্দান্ত ফর্ম ও সমৃদ্ধ ক্যারিয়ারের মালিক মুশফিক অবশ্যই টি-টোয়েন্টি দলে বাংলাদেশ পেতে চাইবেন? জবাবে মুশফিক বলেন, ‘ভালো খেলার পর এখন এসব বলছেন তিনি। এটা আগে কেউ বলেনি।’
এরপর বিস্ফোরক মন্তব্য করে মুশফিক বলেন, ‘আমি শুধু একটি প্রশ্ন করি, আমি কি নিজের ইচ্ছায় টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছি? যে সব বলার আছে। আমি যখন অবসর নিয়েছি, তার আগের এক মাস একটু দেখে নিয়েন। আর কিছু বলার নেই।’