December 7, 2024
লোভনীয় লাভের ফাঁন্দে ফেলে প্রতারণা সব হারিয়ে সর্বস্বান্ত সহস্রাধিক গ্রাহক

লোভনীয় লাভের ফাঁন্দে ফেলে প্রতারণা সব হারিয়ে সর্বস্বান্ত সহস্রাধিক গ্রাহক

লোভনীয় লাভের ফাঁন্দে ফেলে প্রতারণা সব হারিয়ে সর্বস্বান্ত সহস্রাধিক গ্রাহক

লোভনীয় লাভের ফাঁন্দে ফেলে প্রতারণা সব হারিয়ে সর্বস্বান্ত সহস্রাধিক গ্রাহক

সেভিংস অ্যান্ড ক্রেডিট সোসাইটি নামে ঢাকা সহ সারা বাংলাদেশে আনাচে-কানাচে লোভনীয় অফার দিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার নাম-সর্বস্ব এই সকল কোম্পানিকে বাংলাদেশ সমবায় সোসাইটি অনুমোদনও দিয়েছে । কিন্তু তাদের কার্যক্রম বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অমানবিক এবং ফাঁকিবাজি দ্বারা ভরপুর। আমাদেরকে বোঝে-শুনে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নওগাঁর এই ঘটনাটির বর্ণন করা হলো।

ডলফিন সেভিংস অ্যান্ড ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেড কোম্পানির প্রধান কার্যালয় নওগাঁ সদর উপজেলার ফতেপুর বাজার এলাকায় । তারাই মানুষকে লোভ দেখিয়ে অনেক টাকা মাসে লাভ দিবে বলে গরিব মানুষদের কাছথেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যে মানুষগুলোর সংখ্যা তদন্ত মতে হাজারের উপরে।সতর্কতার স্বার্থে আজকে এই লিখা।

নওগাঁয় ডলফিন সেভিংস অ্যান্ড ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লোভনীয় মুনাফার ফাঁদে ফেলে মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। হাজার হাজার গ্রাহক মুনাফার আশায় কোম্পানিতে তাদের শেষ সঞ্চয় রেখে গেছেন। গত শনিবার প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রাজ্জাকসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এরপর রোববার তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লোভনীয় মুনাফার ফাঁদে পড়ে কোম্পানির টাকা হারিনো ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের অধিকাংশই ক্ষুদ্র কৃষক, দিনমজুর, রিকশাচালক, ভ্যান চালক এবং ছোট ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমবায় অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নিয়ে ২০১৩ সালে নওগাঁ সদর উপজেলার ফতেপুর বাজারে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন একই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক। তিনি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। সংগঠনটি ফতেপুর বাজারের একটি ভবনে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে গ্রামের মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে স্থায়ী আমানত ও ক্ষুদ্র সঞ্চয় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। অফিসে ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ২০-২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বেশি মুনাফা দেওয়ার অফার  করে গ্রামের লোকজনকে তাদের প্রতিষ্ঠানে টাকা জমা দেওয়ার পরামর্শ দেন। এসব কথা বিশ্বাস করে শুরুতে কেউ কেউ প্রতিষ্ঠানে আমানত হিসেবে টাকা রাখেন। এরপর গ্রাহকদের আমানতের বিপরীতে নিয়মিত লভ্যাংশ দেওয়া হতো। ধীরে ধীরে কোম্পানির গ্রাহক সংখ্যা বাড়তে থাকে।

ভুক্তভোগীরা জানানঃ
  • বাড়তি লাভের আশায় কেউ মেয়ের বিয়ের টাকা জমিয়েছেন,
  • কেউ বিদেশে যাওয়ার টাকা জমিয়েছেন,
  • আবার কেউ গরু-ছাগল বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানে দিনমজুরির কাজ করে টাকা জমিয়েছেন।

কাগজপত্র জমা দেওয়া গ্রাহকের সংখ্যা ছয় শতাধিক। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আমানতের বিপরীতে লভ্যাংশ প্রদান বন্ধ রয়েছে। এরপর থেকে আমানতকারীরা টাকা ফেরত দিতে কোম্পানির কর্মকর্তাদের চাপ দিতে থাকে এবং ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে যায়। ওই দিন থেকে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ কোম্পানির অন্যান্য কর্মকর্তারা লাপাত্তা-নিখোঁজ । এমন পরিস্থিতিতে প্রতিকারের আশায় ভুক্তভোগীরা জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

ডলফিন সেভিংস অ্যান্ড ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেডে টাকা জমা দিয়েছেন সদর উপজেলার ফতেপুর গ্রামের এক গরীব দিনমজুর । তিনি জানান, অন্যের জমিতে কাজ করে তার সংসার চলে। দিন এনে দিন খাওয়ার অবস্থা। দুই মেয়ের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে চার বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে দেড় লাখ টাকা সঞ্চয় করেন। কিন্তু এখন কবে টাকা ফেরত পাবেন বা আদৌ পাবেন কিনা তা নিয়ে চিন্তিত।

আরেক ইনভেস্টর নরসুন্দর বলেন, “চুল কেটে সংসারের খরচ চালানোর পাশাপাশি ডলফিন এনজিওতে এক লাখ টাকা সঞ্চয় করতাম। প্রতি মাসে তা থেকে ২ হাজার টাকা লাভও পেতাম।  সেটা তো অনেক টাকাই। কিন্তু জানুয়ারি থেকে সেই টাকা বন্ধ হয়ে যায়। বেশ কয়েকদিন ধরে অফিস বন্ধ। এনজিওর মালিকসহ আরও বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমি আর লাভ চাই না। টাকা ফেরত পেলেই খুশি। আর কিছু না পেলে আমার স্বপ্ন ও আশা শেষ হয়ে যাবে।’

বর্তমানে আটক আব্দুর রাজ্জাকের গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার ফতেপুর পূর্ব পাড়ায় বাড়ির প্রধান গেটে তালা ঝুলতে দেখা যায়। তার বাবা-মা বড় ভাইয়ের বাড়িতে থাকেন। আব্দুর রাজ্জাকের মা মর্জিনা বেগম জানান, তার ছেলে আগে বিদেশে ছিল। বিদেশ থেকে এসে এনজিও খোলেন। আব্দুর রাজ্জাক কার কাছ থেকে কত টাকা নিয়েছেন তার কিছুই তারা জানেন না।

নওগাঁ জেলা সমবায় কর্মকর্তা খোন্দকার মনিরুল ইসলাম জানান, গত বছরের জুন মাসে প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে ৩৮ লাখ টাকা জমার তথ্য পাওয়া গেছে। কাগজে কলমে ওই কোম্পানির গ্রাহক সংখ্যা ছয় শতাধিক। তবে দলিল ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে কারো কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করতে প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ব্যবহার করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তে অর্থ আত্মসাতের সত্যতা পাওয়া গেলে ওই প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাতিলসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রাহকের দায়ের করা মামলায় আদালত তথ্য চাইলে সেখানেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X