November 23, 2024
মুসলিম পক্ষ বারাণসীতে জ্ঞানবাপির দখল ছাড়বে না: ওয়েইসি

মুসলিম পক্ষ বারাণসীতে জ্ঞানবাপির দখল ছাড়বে না: ওয়েইসি

মুসলিম পক্ষ বারাণসীতে জ্ঞানবাপির দখল ছাড়বে না: ওয়েইসি

মুসলিম পক্ষ বারাণসীতে জ্ঞানবাপির দখল ছাড়বে না: ওয়েইসি

অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমীনের (মিম) প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি সতর্ক করেছেন যে মুসলিম পক্ষ কোনো অবস্থাতেই বারাণসীতে জ্ঞানবাপীর ‘দখল’ ‘ ছাড়বে না। সোমবার হায়দরাবাদের সাংসদ বলেন, আমরা  জ্ঞানবাপি মসজিদের কোনো দখলই  ছাড়ব না। অনেক হয়েছে।

বারাণসী জেলা আদালত দেড় বছর আগে ‘আঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া (জ্ঞানবাপি) মসজিদ কমিটির’ আবেদন প্রত্যাখ্যান করার পরে এবং জ্ঞানবাপিতে পূজার্চনার অনুমতি চেয়ে হিন্দু পক্ষের দায়ের করা আপিলের শুনানির জন্য সম্মত হওয়ার পরেই ওয়েইসি তার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেন, বারানসির জ্ঞানবাপী মামলা অযোধ্যার বাবরি মসজিদ-রামমন্দির মামলার মতো একই পরিণতির দিকে এগোচ্ছে।

৩১ জানুয়ারী, জেলা বারাণসী আদালতের বিচারক অজয় কুমার ভিসভেস হিন্দু ভক্তদের জ্ঞানবাপির একটি ‘সিল করা’ বেসমেন্টে আরতি ও পূজা করার অনুমতি দিয়েছিলেন। পরের দিন থেকে সেই ‘ব্যাস কা তাহখানা’-তে পাঁচটি দৈনিক আরতি শুরু হয়। মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে একটি আপিল দায়ের করা হয়েছিল, কিন্তু ২ ফেব্রুয়ারি তা খারিজ হয়ে যায়। এর পরে, মসজিদ কমিটি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়।

এই পরিবেশে ওয়েইসির দাবি, বারাণসী জেলা আদালতের নির্দেশে রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ পরিস্থিতির মতো দেশে নতুন করে অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। এই প্রসঙ্গে, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যায় কারসেবকদের দ্বারা বাবরি ধ্বংসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্রতিপক্ষ যদি ৬ ডিসেম্বর আবার করতে চায়, আমরাও দেখব কী হয়।” আমরা একবার প্রতারিত হয়েছি, আর প্রতারিত হব না।’

উল্লেখ্য যে ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ (এএসআই) ২৫ জানুয়ারি বারাণসী জেলা আদালতে জমা দেওয়া একটি প্রতিবেদনে বলেছিল যে বারাণসীতে জ্ঞানবাপি মসজিদের কাঠামোর নীচে একটি ‘বড় হিন্দু মন্দির’ ছিল। আদালতের নির্দেশিত সমীক্ষার ৮৩৯ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন অনুসারে, জ্ঞানবাপী স্কোয়ারে পাওয়া একটি শিলালিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব ২ নভেম্বর, ১৬৬৯ সালে জ্ঞানবাপীতে মন্দির ভেঙে একটি মসজিদ নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘মসজিদ নির্মাণের সময় কাঠামোতে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছিল। মন্দিরের স্তম্ভ ও অন্যান্য অংশে সামান্য পরিবর্তন করে ব্যবহার করা হয়েছে। নতুন কাঠামো তৈরির জন্য হিন্দু মন্দিরের স্তম্ভগুলির চরিত্রে সামান্য পরিবর্তন করা হয়েছিল। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই বারাণসী জেলা আদালত জ্ঞানবাপীকে পূজার্চন ও আরতির অনুমতি দেয়।

আদালতের নির্দেশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভারতের উত্তর প্রদেশের বারাণসীতে জ্ঞানবাপী মসজিদের একটি অংশে পূজা শুরু হয়। জেলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বুধবার গভীর রাতে মসজিদের বেসমেন্টে পূজা ও আরতি করা হয়।

আদালতের আদেশের পর প্রশাসনের নির্দেশে মসজিদের বেসমেন্ট এলাকা থেকে ব্যারিকেড অপসারণ করা হয়। পুরো এলাকা পুলিশি নিরাপত্তায় ঘেরাও করা হয়েছে।

আদালতের রায়ের  পর পরই  প্রশাসনের নির্দেশে মসজিদের বেসমেন্ট এলাকা থেকে ব্যারিকেড অপসারণ করা হয়। তখন  পুরো এলাকা পুলিশি নিরাপত্তায় ঘেরাও করা হয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) জানিয়েছে যে তিন দশক বন্ধ থাকার পর বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদের একটি অংশে হিন্দুরা পূজা শুরু করেছে। বুধবার গভীর রাতে জ্ঞানবাপীর মসজিদের নিচতলায় অর্থাৎ  বেইজমেন্ট  পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

খবর অনুযায়ী, ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরপরই উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদবের নির্দেশে ৩০ বছর আগে নামাজ বন্ধ করা হয়েছিল।

হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, আদালতের নির্দেশের পর মসজিদের বেসমেন্ট এলাকা থেকে ব্যারিকেড সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পুরো এলাকা পুলিশি নিরাপত্তায় ঘেরাও করা হয়েছে। বেলা ২টার দিকে পুলিশ কমিশনার ও জেলা প্রশাসক একসঙ্গে বেসমেন্ট থেকে বেরিয়ে আসেন।

এরপর রাত তিনটার দিকে জ্ঞানবাপী মসজিদের বেসমেন্টে পুজো শুরু করেন ব্যাস পরিবারের সদস্যরা।

বুধবার জ্ঞানবাপী মসজিদের বেসমেন্টে পূজার অনুমতি দেয় আদালত। আদালতের রায় অনুযায়ী, এখন থেকে জ্ঞানবাপী মসজিদের বন্ধ বেসমেন্টে ইবাদত করতে পারবেন আবেদনকারীরা। তবে স্থানীয় বিশ্বনাথ মন্দিরের পুরোহিতের উপস্থিতিতে এই পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে জ্ঞানবাপী মসজিদে সমীক্ষার দাবি জানিয়েছে হিন্দুত্ববাদীরা। ভারতের সুপ্রিম কোর্টে আবেদনে বলা হয়েছে, বারাণসীর ওই মসজিদের সিন্দুকে একটি ‘শিবলিঙ্গ’ রয়েছে বলে তারা বিশ্বাস করেন।

গত মাসে ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম মন্দিরের উদ্বোধন করা হয়। সেই ঘটনার পর বারাণসীর কাশী বিশ্বনাথ মন্দির সংলগ্ন জ্ঞানবাপি মসজিদ নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, এই মসজিদের নিচে একটি মন্দির রয়েছে।

স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (২৯ জানুয়ারি) ভারতের সুপ্রিম কোর্টে এক আবেদনে হিন্দুত্ববাদীরা জ্ঞানবাপী মসজিদের জরিপের দাবি জানিয়েছে। তারা বিশ্বাস করে যে, মুসলিমরা যেটি অজুখানার ফোয়ারা বলে দাবি করে আসছে, সেটি আদতে শিবলিঙ্গ।

আরও পড়ুন

ভারতের বাবরি মসজিদের নিচে কোনো মন্দির নেই: প্রত্নতাত্ত্বিকরা

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X