October 18, 2024
কদবেলঃ এক অনন্য স্বাদের ফল

কদবেলঃ এক অনন্য স্বাদের ফল

কদবেলঃ এক অনন্য স্বাদের ফল

কদবেলঃ এক অনন্য স্বাদের ফল

কদবেল বা কাটবেল যার ইংরেজি শব্দ (sour wood apple) এক প্রকার ফল। এর খোসা শক্ত বেলের মত খসখসে। । গাছ ৩০-৫০ ফুট লম্বা হয়। কাঠ শক্ত যা ঘর  তৈরি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। কদবেলের পাতাগুলো কামিনী ফুলের পাতার মত।  এর  পাতা পিষলে লেবুর গন্ধ বের হয়। গাছটিতে সাদা ফুল থাকে এবং প্রতিটি ফুলে পাঁচটি পাপড়ি থাকে। এর বাইরের খোসা খুব শক্ত, তাই ফাটল খোলা সহজ নয়। ফলের বাইরের রং সবুজাভ বাদামি। ভেতরের খোসা আঠালো এবং বাদামী রঙের। শুঁটিগুলিতে ছোট সাদা বীজ থাকে এই অনন্য স্বাদের ফল কদবেলে । ফলগুলি টেনিস বলের আকারের,২-৩ ইঞ্চি ব্যাস, মিষ্টি এবং টক স্বাদযুক্ত ফল ।

কদবেল। গাছে ছোট ছোট  কাঁটা আছে। আগস্ট-নভেম্বরে ফল পাকে। ফুল সাদা। পাকলে পর্যাপ্ত পরিমাণে আমিষ,শর্করা, চর্বি, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি এবং সি থাকে। এটি একটি সুস্বাদু রুচিবর্ধক ফল আচার তৈরি করে মরিচ, লবণ ও চিনি দিয়ে খাওয়া হয়। প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৫০  ক্যালোরি রয়েছে।

কদবেল একটি সুপরিচিত দেশীয় ফল। মৌসুমি ফল হিসেবে এর জুড়ি মেলা ভার। এটি সব বয়সের মানুষের প্রিয় ফল। পথে প্রান্তরে প্রায়ই কদবেলের বিস্তৃতি দেখা যায়। কদবেল একটি দেশি ফল যা একটি শক্ত খোসা দ্বারা আবৃত মিষ্টি এবং টক স্বাদযুক্ত। ফলটিতে আমের চেয়ে সাড়ে ৩ গুণ বেশি, কাঁঠালের দ্বিগুণ এবং আমলা ও আনারসের চেয়ে প্রায় ৪ গুণ বেশি আমিষ রয়েছে। আমাদের আজকের আয়োজন কদবেলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার জন্য, যা পুষ্টির দিক থেকেও অনন্য।

বর্ষা শেষে বাজারে আর কোনো ফল পাওয়া যায় না অনেকটা টেনিস বলের মতো দেখতে এই ফলটিরই দেখা মেলে এই মৌসমে । পাকা কদবেলের খুব সুন্দর সুগন্ধ আছে। পাকা ফল এই ফলের খোসা কাটার জন্য একটি লাঠি দিয়ে বিভক্ত বা ছিদ্র করা হয়  । কাঁচা খোসার রঙ হালকা বাদামী-ধূসর, মিষ্টি-টক। কিন্তু পাকলে তা গাঢ় চকলেট বা পিথ বাদামী, গাঢ় বাদামী হয়ে যায়। শাঁস পাকলে নরম হয়, চটকালে মাখনের মতো হয়ে যায়। শুঁটির ভিতরে ছোট খুব হালকা বাদামী বীজ থাকে। বীজ থেকে সহজেই চারা গজায়। আপনি যদি টবে রোপণ করতে চান তাহলে চারা উপযুক্ত। কলমের চারা থেকে দুই বা তিন বছরের মধ্যে ফুল ও ফল ধরে।

বাজারে এখন প্রচুর কদবেল পাওয়া যায়। এই  টক-মিষ্টি স্বাদের ফলের রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। কদবেলের পুষ্টিগুণ কাঁঠাল ও পেয়ারা থেকে কম নয়। মাংসের পরিমাণ আমের সাড়ে তিন গুণ, কাঁঠালের দ্বিগুণ, লিচুর তিন গুণ, আমলকি ও আনারসের প্রায় চার গুণ। শক্ত খোসায় ঢাকা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই মৌসুমি ফলটি মূলত স্বাদের জন্য খাওয়া হয়। কিন্তু পুষ্টিগুণের দিক থেকে কদবেল সত্যিই অনন্য। চলুন জেনে নে ই কদবেল উপকারিতা সম্পর্কেঃ

প্রতি ১০০ গ্রাম কদবেলে রয়েছে

প্রতি ১০০ গ্রাম কদবেলের পুষ্টিমান পানীয় অংশ ৮৫ দশমিক ৬ গ্রাম, খনিজপদার্থ ২ দশমিক ২ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৪৯ কিলো ক্যালরি, আমিষ ৩ দশমিক ৫ গ্রাম, চর্বি শূন্য দশমিক ১ গ্রাম, শর্করা ৮ দশমিক ৬ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫ দশমিক ৯ মিলিগ্রাম, লৌহ শূন্য দশমিক ৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-বি শূন্য দশমিক ৮০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ১৩ মিলিগ্রাম এবং প্রতি ১০০ গ্রামের শক্তি উৎপাদন ক্ষমতা ৪৯ কিলো ক্যালরি।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করেঃ

কদবেলের খনিজ উপাদান ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। কদবেল ডায়াবেটিসের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

এতে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করেঃ

কদবেল শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং স্নায়ু শক্তি সরবরাহ করে। তাই কদবেল খেলে তাপ কম লাগে। ত্বকের জ্বালাপোড়া কমাতে মলম হিসেবেও কদবেল ব্যবহার করা হয়।

কিডনির জন্য ভালোঃ

কদবেল আয়ুর্বেদে উদ্দীপক এবং মূত্রবর্ধক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। নিয়মিত এই ফল খেলে কিডনি রক্ষা হয়। প্রাচীন ভারতীয় চিকিৎসাশাস্ত্রে, কদবেল কিডনির সমস্যার জন্য সেরা প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হত। ফলটি লিভার ও হার্টের জন্যও খুবই উপকারী।

পেপটিক আলসার ভালো হয়ঃ

নিয়মিত পানির সাথে কদবেল পাতার রস খেলে পেপটিক আলসার দ্রুত নিরাময় হয়। আলসার নিরাময়ে টাটকা কদবেল খুবই কার্যকরী।

শ্বাসকষ্টজনিত রোগে কদবেলঃ

কদবেল পাতার নির্যাস শ্বাসতন্ত্রের চিকিৎসায় কার্যকর ভূমিকা পালন করে। দুধ ও চিনির সঙ্গে কদবেল পাতা মিশিয়ে এক ধরনের খাবার তৈরি করা হয়। এই জুস শিশুদের পেট ব্যথার চিকিৎসায় ভালো কাজ করে।

রক্ত বিশুদ্ধ করে  কদবেলঃ

কদবেল রক্ত বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে। এটি হৃদস্পন্দন এবং নিম্ন রক্তচাপ প্রতিরোধেও সহায়ক। গুড় বা মিছরির সঙ্গে কদবেল মিশিয়ে খেলে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং রক্তশূন্যতা দূর হয়।

কদবেল পেট ভালো রাখেঃ

কদবেলে ট্যানিন নামক একটি উপাদান রয়েছে যা দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া এবং পেটের ব্যথা নিরাময় করে। ছোট এলাচ ও মধু দিয়ে কাঁচা কদবেল খেলে বদহজম উপশম হয়।

এছাড়াও কদবেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন, আয়রন, পেকটিন ইত্যাদি। এই উপাদানগুলো  আমাশয়ের জন্য দারুণ প্রতিকার হিসেবে কাজ করে।গলায় ঘা বা ক্ষত এবং ঘন ঘন হেঁচকির ক্ষেত্রে কদবেল খেলে দ্রুত সেরে যায় ।এটি ঠান্ডার জন্য উপকারী।  এটি দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য এবং দীর্ঘস্থায়ী আমাশয় থেকে মুক্তি দেয়। এটি সর্দি উপশম করে। কদবেল মহিলাদের হরমোনের ঘাটতিজনিত সমস্যা দূর করে। এমনকি এটি স্তন এবং জরায়ু ক্যান্সারও নিরাময় করে।

আরও জানতে

বাংলাদেশী ফল লটকনঃ অনেক উপকারী

3 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X