বাংলাদেশী ফল লটকনঃ অনেক উপকারী
লটকন এক প্রকার দেশীয় ও অপ্রচলিত ফল, যা অত্যন্ত পুষ্টি ও ঔষধিগুণে ভরপুর। এটি মাঝারি আকারের চির সবুজ বৃক্ষ। ফল গোলাকার, পাকা ফলের রং হলুদ। প্রতিটি ফলে দুই থেকে পাঁচটি বীজ হয়। বীজের গায়ে লাগানো রসালো খাদ্য অংশ থাকে, যা জাতভেদে টক বা টক-মিষ্টি স্বাদের। এই ফল সরাসরি খাওয়া যায়, আবার জ্যাম তৈরি করেও খাওয়া যায়।বাংলাদেশে একসময় অপ্রচলিত ফলের তালিকায় ছিল লটকন। অধুনা এর বাণিজ্যিক উৎপাদন হচ্ছে। ব্যাপক আকারে। তাই আজকের লিখা বাংলাদেশী ফল লটকনঃ অনেক উপকারী।
টক-মিষ্টি স্বাদের একটি সুস্বাদু ফল লটকন। লবণ ও গোলমরিচের গুঁড়া মেশালে এই ফলটি দারুণ স্বাদের। গরমের তীব্রতা কমাতে এবং শরীরে ভিটামিন সি-এর অভাব পূরণ করতে লটকন খুবই উপকারী একটি ফল। এ ছাড়া গরম বিকেলে গরম কমাতে লবণ, কাঁচামরিচ, চিনি, কাসুন্দির সঙ্গে লটকন খান অনেকেই । এই সুস্বাদু ফলটি শুধু আপনার মুখের স্বাদই বদলাবে না, আপনার জিহ্বার রঙও বদলে দেবে হালকা বেগুনি রঙে। খাওয়ার ক্ষেত্রে, লটকন বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া হয়। অনেকে হালকা হাতে তালুতে লটকন ঘুরিয়ে তারপর পাকা লটকন খায়। পাকা লটকনের স্বাদ বেশিরভাগই মিষ্টি। আকারে ছোট হলেও এর গুণের তালিকা রয়েছে দীর্ঘ।
কর্ম ব্যস্ত আছেন, বা প্রবাসেই আছেন, সামান্য মুহূর্তের জন্য কর্ম থেকে নিজেকে বিরত রাখুন, এবং দুটি চক্ষু বন্ধ করে মনে মনে ভাবুন, আমি লটকন খাচ্ছি; মনের অজান্তেই চলে যাবেন বাংলাদেশের নরসিংদী জেলার মনোহরদী বা শিবপুরে। সে অন্যরকম এক ফিলিংস। তার নাম মহান রবের দান বাংলাদেশের মজাদার ফল লটকন।
জায়গা ভেদে লটকন অনেক নামে পরিচিত। এই ফলটি হাড়ফাটা, বুবি, ডুবি, লটকা, লটকাউসহআরও অনেক নামে পরিচিত। বুনো গাছ হিসেবে পরিচিত এ গাছের ফল বর্তমানে বর্ষা মৌসুমের অন্যতম সুস্বাদু ফল। যা শুধু স্বাদের দিক দিয়েই অতুলনীয় নয়, গুণের দিক থেকেও এর রয়েছে নানা দিক যা শরীরের জন্য উপকারী ও কার্যকরী।
ত্বক, দাঁত ও হাড় মজবুত করার জন্য লটকন একটি মৌসুমি ফল। প্রতিদিন অন্তত দুই থেকে তিনটি লটকন-লজেঞ্জ আপনার শরীরকে ভিটামিন সি শোষণ করতে সাহায্য করবে।
উন্নত জাতের সুমিষ্ট লটকনের চাষ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর জনপ্রিয়তাও বেশ বেড়েছে। আমাদের দেশের নরসিংদীতেই লটকনের ফলন বেশি। এ ছাড়া সিলেট, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাজীপুর—এসব জেলায়ও ইদানীং বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লটকনের চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে লটকন বিদেশেও রপ্তানি করা হয়।
আরও পড়ুন
ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের স্বীকৃতি পেল ‘বগুড়ার দই’
টনসিল অপারেশনের সময় শ্বাসনালী কেটে ফেলায় যুবকের মৃত্যু
ফলের খোসা ছাড়ালে ৪ /৫ টি রসালো অম্লমধুর স্বাদের বীজ পাওয়া যায়। ফল হিসেবেই ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কিছু স্থানে চাষ হচ্ছে যেমন- নরসিংদী, সিলেট, গাজীপুর, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ জেলা উল্লেখযোগ্য এলাকা। তার মধ্যে নরসিংদী জেলার সদর, শিবপুর, রায়পুরা ও বেলাব উপজেলায় সবচেয়ে বেশি লটকন চাষ হচ্ছে। নরসিংদীর লটকনের স¦াদ অত্যন্ত বেশি এবং সারাদেশ ব্যাপী এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
লটকনের পুষ্টিগুণঃ
লটকন অত্যন্ত পুষ্টিকর ও সুস্বাদু একটি ফল বর্ষার ফল লটকনে ছেয়ে গেছে বাজার। টক-মিষ্টি ও রসালো ফলটি খেতে যেমন মুখরোচক, তেমনি এর উপকারিতাও অনেক। । পরিপক্ব লটকনের প্রতি ১০০ গ্রাম শাঁসে আছে ১.৪২ গ্রাম আমিষ, ০.৪৫ গ্রাম চর্বি, ০.৯ গ্রাম মোট খনিজ পদার্থ, ০.৩ গ্রাম লৌহ এবং ৯১ কিলো ক্যালরি খাদ্যশক্তি। (লৌহ যা শরীরের রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে থাকে) এছাড়াও লটকনে রয়েছে ০.০৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি১ এবং ০.১৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি২। সাধারণত লটকনকে ভিটামিন বি২ সমৃদ্ধ ফল বলা হয়ে থাকে। ভিটামিন বি২ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন, যা শরীরের জন্য খুব প্রয়োজনীয় উপাদান। এই ফলে চর্বি অত্যন্ত কম থাকায় ও কোন শর্করা নেই বিধায় সকল বয়সের মানুষ নিশ্চিন্তে খেতে পারেন।
লটকনের ঔষধিগুণঃ
টক মিষ্টি এই লটকনের পুষ্টিগুণ যেমন রয়েছে তেমনি এর ঔষধি গুণও রয়েছে।
- লটকন খেলে বমি বমি ভাব দূর হয় এবং পিপাসা মেটে। এছাড়াও, শুকনো এবং গুঁড়ো লটকন পাতা ডায়রিয়া এবং মানসিক চাপ কমায়।
- টক মিষ্টি এই ফল একটি টক মধুর ফল তাই এই ফল খেলে আমাদের মুখে স্বাদ আসে
- লটকন ভিটামিন সি এর একটি চমৎকার উৎস। এতে থায়ামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও রয়েছে। যাদের মুখে ঘন ঘন ঘা হয় তারা প্রতিদিন লটকন খেতে পারেন ।
- রসে ভরা লটকন শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখে।
- মিষ্টি ও টক লটকন স্বাদ বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও বমিভাব কমায়।
- দৈনিক কয়েকটি লটকন খেলে শরীরের ভিটামিন সি এর চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করা সম্ভব।
- টক মিষ্টি এই ফল ত্বকের রুক্ষতা কমায়। ত্বক ফেটে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
- আর্দ্র বর্ষার আবহাওয়ায় ত্বকের বিভিন্ন সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। নিয়মিত লটকন খেলে চর্মরোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
- ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে ভরপুর এই ফলটি রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে খুবই উপকারী।
- গবেষণা বলছে, উপকারী উপাদানে ভরপুর এই ফল মানসিক ক্লান্তি দূর করতে পারে।
- ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লটকন ফ্লু; বর্ষাকালে বিভিন্ন রোগ যেমন জ্বর, সর্দি, কাশি থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে।
- লটকন মানবদেহে শক্তির উৎস বাড়ায়। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল এবং প্রোটিন থাকে যা আপনাকে সারাদিন সক্রিয় থাকতে সাহায্য করে।
লটকনের এই উপাদানগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যা শরীরকে সুস্থ রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বর্ষাকালে বেশি করে লটকন খান শরীরের চুলকানি সহ অন্যান্য চর্মরোগ থাকলেও সেরে যাবে ।
1 Comment