December 7, 2024
পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভে উত্তাল বাংলাদেশঃ তিন শ্রমিক নিহত

পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভে উত্তাল বাংলাদেশঃ তিন শ্রমিক নিহত

পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভে উত্তাল বাংলাদেশঃ তিন শ্রমিক নিহত

পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভে উত্তাল বাংলাদেশঃ তিন শ্রমিক নিহত

বাড়তি মজুরি ও সময়মতো বেতন পরিশোধের দাবিতে এক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ করছেন পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা। গতকাল সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুরের যেসব এলাকায় শিল্প কারখানা আছে সেখানেই  তারা বিক্ষোভ করেছেন । ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ, গাড়ি ভাঙচুর, পুলিশ বক্স, পিকআপ ও পোশাক কারখানায় আগুন দেওয়া হয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় এক শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়ে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়াসহ এখন পর্যন্ত তিন শ্রমিক নিহত হয়েছেন । এতে পুলিশ ও শ্রমিকসহ অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হন। এদিকে কারও কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের কাজে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান।

তারই ধারাবাহিকতায় শ্রমিকরা সড়কে অবস্থান নিয়েছে। ন্যায্য মজুরি, আওয়ামী লীগ-যুবলীগের শ্রমিকদের ওপর হামলা এবং হামলায় তিন শ্রমিক নিহত হওয়ার দাবিতে আবারও বিক্ষোভ করেছে গার্মেন্টস শ্রমিকরা, নিহতদের নাম ও পরিচয় প্রকাশের দাবিতে। বুধবার সকাল থেকে রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে অবস্থান নিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এ সময় সড়কে এক চিকিৎসকের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

সকাল ৯টা থেকে শ্রমিকরা মিরপুর ১১ নম্বর থেকে এসে ১০ নম্বর গোল চত্বরে অবস্থান নেয়। এছাড়া বিভিন্নভাবে বিভক্ত হয়ে মিরপুর ১, ২, ১০ ও ১০, কচুক্ষেত এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। এর মধ্যে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মিরপুর ২ নম্বর বড়বাগ এলাকায় দেশ অ্যাপারেলস নামে একটি পোশাক কারখানা ভাঙচুর করে।

সকাল থেকে তারা ১০ নম্বর গোল চত্বরে লাঠি হাতে সড়কের প্রতিটি প্রবেশ পথ অবরোধ করে রেখেছে। এ সড়কে রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা ও মোটরবাইক চলাচল করলেও বড় কোনো বাস চলাচল করতে পারে নাই ।

আন্দোলনরত এক শ্রমিক বলেন, একজন শ্রমিক আট হাজার টাকা বেতন পেলে তার পরিবারে পাঁচজন সদস্য থাকলে বাড়ি ভাড়া বাবদ খরচ হয় পাঁচ হাজার টাকা। বাকি টাকা দিয়ে সংসার চলবে কী করে? বাজারদরের অবস্থা। দুবেলা ভাত খাওয়ার অবস্থা নেই। আমরা কিভাবে বাঁচবো? কয়েক টাকা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে রাজপথে নেমেছি। কিন্তু এখন জীবনের সঙ্গে লড়াই করছি।

পোশাক শ্রমিকদের কঠিন  খাটুনিতে গড়া  পোশাক শিল্পের মাধ্যমে এবং বিদেশে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমে প্রবাসীদের রেমিটেন্সের মাধ্যমেই বাংলাদেশ অগ্রসরমান । সেখানে ন্যূনতম মজুরি শ্রমিকদের দেওয়া হয় ৮০০০ টাকার মতো ।  তা একজন মন্ত্রী অথবা এমপিকে দিয়ে এক মাসের  অন্যান্য সকল সুবিধা বন্ধ করে দেয়া হোক।  দেখা যাবে তাদের হায়াত ৩০ দিনের বেশি টিকে কিনা ?

এদিকে মালিকপক্ষ স্থানীয় রাজনৈতিক লোকজন নিয়ে শ্রমিকদের ওপর হামলা করেছে অভিযোগ করে এক মহিলা শ্রমিক বলেন, “গার্মেন্টস শ্রমিকরা নিজ নিজ কারখানার সামনে বিক্ষোভ করছিল। পরে কয়েকজন বহিরাগত এসে হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়।

লাঠিসোঁটা নিয়ে শ্রমিকদের বিক্ষোভ। মিরপুরে ২৩৫টি পোশাক রয়েছে। সকাল থেকেই মিরপুরের শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়াসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় প্রায় প্রতিটি পোশাকের শ্রমিকরা অবস্থান নিতে শুরু করেন। সকালে শেওড়াপাড়া ও কাজীপাড়ায় অবস্থানরত শ্রমিকরা পরে ১০ নম্বর গোলচত্বরে এসে অবস্থান নেয়।

তবে শ্রমিকদের অবস্থান নিয়ে পুলিশকে নমনীয় হতে দেখা যায়।  এটা তাদের ন্যায্য দাবি। এ দাবি পূরণে সংশ্লিষ্টরাও কথা বলছেন। তাদের দাবি পূরণ হলেই তারা সড়ক ছাড়বেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে কর্মীদের হত্যা ও হামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন , আমরা কর্মী হত্যার বিষয়ে কিছু জানি না। আন্দোলনরত শ্রমিকদের কোনো নেতা বা নেতৃস্থানীয় সংগঠন নেই। তাই তারা বিক্ষিপ্ত ও বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষোভ করছে। এই পুলিশ বলেন, আমি মনে করি শ্রমিক হত্যা একটি গুজব। আর স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের বিরুদ্ধে হামলার যে অভিযোগ শুনেছেন, থানায় তার  কোনো অভিযোগ বা মামলা হয়নি। অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায়ও যদি তারা মামলা করতে চায়, তাও আমরা যথাযথ তদন্তের স্বার্থে ব্যবস্থা নেব। কিন্তু কেউ কোনো মামলা বা অভিযোগ করছে না।

বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। এটা পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনের ধরন। তারা খুব হিংস্র নয়।’

এদিকে দায়িত্বরত সাংবাদিক ও অন্যান্য সাধারণ মানুষ ছবি বা ভিডিও তুলতে গেলে শ্রমিকদের ক্ষোভের শিকার হন।

এমন পরিস্থিতিতে সহিংসতার আশঙ্কা থাকলে কারখানা বন্ধের কথা বলেছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের বর্তমান মূল্যে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কত হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া অসম্ভব? আমি যেখানে বসে আছি তার উত্তর দিতে পারছি না। ন্যূনতম মজুরি বোর্ড তা নির্ধারণ করবে।

মালিকপক্ষ ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকার যে প্রস্তাব দিয়েছে তার চেয়ে বেশি হবে বলে জানিয়েছেন মন্নুজান সুফিয়ান। তিনি বলেন, ‘গার্মেন্টস শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিদাওয়ার কথা জানিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। শ্রমিকদের মধ্যে কে বা কারা বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে যে তাদের মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা নির্ধারণ হয়ে গেছে।  তারা এই বিভ্রান্তিতে ভুগছেন। মজুরি নির্ধারণের এখনো এক মাস বাকি আছে। আগামী ১ নভেম্বর মজুরি বোর্ডের সভা। কাজেই কারও কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে শ্রমিকদের কাজে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি, বলছি কারও ফাঁদে পা দেবেন না’।

বুধবার উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর আলোচনা সভায় আটলান্টিক গার্মেন্টসের মালিক জহির উদ্দিন স্বপন বলেন;

প্রতি মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) বিভিন্ন কাজে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। এখন এনবিআর কর্মকর্তারা যদি বলে আগামীকাল থেকে ঘুষ নেওয়া বন্ধ করুন, আমরা আগামীকাল থেকে শ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়ে দেব।

তিনি সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে কটাক্ষ করেন। স্বপন বলেন, শুধু এনবিআরই নয়, কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান (অবৈধ) টাকা ছাড়া কাজ করে না।

আরও পড়ুন

3 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X