December 5, 2024
বাংলাদেশিদের জন্য সব ধরনের ভিসা স্থগিত করেছে ওমান

বাংলাদেশিদের জন্য সব ধরনের ভিসা স্থগিত করেছে ওমান

বাংলাদেশিদের জন্য সব ধরনের ভিসা স্থগিত করেছে ওমান

বাংলাদেশিদের জন্য সব ধরনের ভিসা স্থগিত করেছে ওমান

বাংলাদেশি নাগরিকদের নতুন ভিসা দেওয়া স্থগিত ঘোষণা করেছে ওমান। মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) রয়্যাল ওমান পুলিশ (আরওপি) এ ঘোষণা দিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে যে আজ থেকে সব শ্রেণীর বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য নতুন ভিসা ইস্যু স্থগিতাদেশ কার্যকর হবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।আরওপি নিশ্চিত করেছে যে ট্যুরিস্ট এবং ভিজিট ভিসায় ওমানে আসা প্রবাসীদের ভিসা পরিবর্তনের বিকল্পও স্থগিত করা হয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের আগে, প্রবাসীরা ভিজিট ভিসায় ওমানে প্রবেশ করতে পারতেন এবং পরবর্তীতে তা  কাজের ভিসায় পরিবর্তন করতে পারতেন। তবে এখন তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে এবং যদি তারা কাজের ভিসায় আবার আসতে চায়  তা  কাজের ভিসায় পরিবর্তন করতে পারবে  কিন্তু বাংলাদেশিরা এ সুযোগ টুকুনও  পাবেন না।

এক বিবৃতিতে, আরওপি বলেছে, নীতি পর্যালোচনার অংশ হিসাবে, আরওপি ওমান ভ্রমণকারী সমস্ত দেশের নাগরিকদের জন্য সমস্ত ধরণের ট্যুরিস্ট এবং ভিজিট ভিসার পরিবর্তন স্থগিত করছে। এতে আরও বলা হয়েছে, মঙ্গলবার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশি নাগরিকদের সব ধরনের ভিসা প্রদান স্থগিত থাকবে।

প্রায় দুই বছর ধরে দেশে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) কমছে। প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পড়েছে  বড়ই চাপে। এখন প্রণোদনা বাড়িয়ে প্রবাসী আয় বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। গত মাসে এই পদক্ষেপের কিছু ইতিবাচক ফলাফল দেখা গেছে। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশিদের জন্য তৃতীয় বৃহত্তম বিদেশি শ্রমবাজার থেকে নেতিবাচক খবর এসেছে। বাংলাদেশিদের জন্য সব ধরনের ভিসা স্থগিত করেছে ওমান। ফলে দেশে নতুন কর্মী পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়। এতে প্রবাসী আয় আরও ধাক্কা খেতে পারে। এই বাজার দ্রুত চালু করতে সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন অভিবাসন খাত সংশ্লিষ্টরা।

বিদেশে বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস মধ্যপ্রাচ্য। এই অঞ্চলে প্রায় ৮০ শতাংশ কর্মসংস্থান হয়। তাদের মধ্যে সৌদি আরব শীর্ষে রয়েছে। এ পর্যন্ত সাড়ে ৫ লাখের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক ওমান গেছেন। গত বছর সৌদি গিয়েছিলেন ৬ লাখ ১২ হাজার ৪১৮ জন। চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে দেশ ছেড়েছেন ২ লাখ ২৬ হাজার ১৫০ জন।

যদিও সংযুক্ত আরব আমিরাত মোট কর্মসংস্থানে দ্বিতীয়, তবে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে দেশটির অবস্থান কয়েক বছর ধরে  বাংলাদেশিদের জন্য  পিছলে গেছে। কখনও কখনও এই শ্রমবাজার কয়েক বছর বন্ধ ছিল। আগের তুলনায় এখনো কম কর্মী যাচ্ছে এসব দেশে। বাংলাদেশ ব্যুরোর অফ ম্যানপাওয়ার, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং (বিএমইটি) থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ওমান কয়েক বছর ধরে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার, যদিও মোট কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এটি তৃতীয়।

শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার অর্থ বিদেশে কর্মসংস্থান কম হওয়া। আর এর প্রভাব সরাসরি পড়বে প্রবাসী আয়ের ওপর।

রয়্যাল ওমান পুলিশের (আরওপি) একটি বিবৃতি উদ্ধৃত করে, ওমান-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টাইমস অফ ওমান এবং মাস্কাট ডেইলি নিশ্চিত করেছে যে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য সমস্ত ভিসা স্থগিত করার পদক্ষেপ গতকাল (৩১ অক্টোবর) কার্যকর হয়েছে।

এই মুহূর্তে হঠাৎ করে বাংলাদেশীদের জন্য সকল ক্যাটাগরিতে ওমানের ভিসা বন্ধ হয়ে যাওয়া।  এই খবর জনগণের কাছে ছড়িয়ে যাওয়ার পর জনমনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে, তারাও কি আমেরিকা কে অনুসরণ করতে শুরু করল কিনা; স্যাংশন খাদক বাংলাদেশের ওপর?

রয়্যাল ওমান পুলিশের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে পর্যটক এবং ভ্রমণ ভিসায় ইতিমধ্যে ওমানে আসা বিদেশীদের জন্য ‘ভিসা রূপান্তর’ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে। এর আগে প্রবাসীরা ট্যুরিস্ট অ্যান্ড ট্রাভেল ভিসায় ওমানে যেতে পারতেন এবং কর্মী ভিসা পেতে পারতেন। এই সুবিধা স্থগিত হওয়ার কারণে, যারা এখন ওমানে অবস্থান করছেন তাদের তাদের দেশে ফিরে যেতে হবে এবং কাজের ভিসা নিয়ে আবার ওমান যেতে হবে। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে,  বাংলাদেশিদের জন্য এ সুযোগও  থাকছেনা  । কারণ ওমানের বিবৃতি অনুযায়ী বাংলাদেশিদের জন্য সব ধরনের ভিসা সংক্রান্ত বিষয় স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বলবৎ থাকবে।

ওমানে বাংলাদেশিদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দেশটি এমন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে  কতিপয়ের বক্তব্য। তারা মনে করেন সাধারণত কোনো একটি দেশ থেকে অতিরিক্ত জনবল প্রবেশ করলে ওমান এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়।

তবে বিদেশে কর্মী পাঠায় এমন রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন বায়রার যুগ্ম মহাসচিব টিপু সুলতান মনে করেন, কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার হলে ১০ লাখের বেশি কর্মী পাঠানো যেত।তিনি আরও বলেন, সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরে কর্মী পাঠানোর শীর্ষে রয়েছে। তারা নিয়মিত কর্মী নিয়োগ করছে।

মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওমানের আকস্মিক ভিসা নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশের একটি বড় শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে গেছে। এই বাজার দ্রুত চালু করতে সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে। তা না হলে প্রবাসী আয়ে প্রভাব পড়তে শুরু করবে। আরেকটি বড় ধাক্কা খেতে পারে বাংলাদেশের ভঙ্গুর অচল রিজার্ভেূর দুর্বল  শরীরে।

অভিবাসন খাতের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, প্রবাসী আয় কমলেও দুই বছর ধরে বিদেশে কর্মসংস্থানের জোয়ার বইছিল । প্রতি মাসে গড়ে এক লাখের বেশি শ্রমিক বিভিন্ন দেশে যাচ্ছিল। এদিকে ওমানের খবরে ধাক্কা লেগেছে। নারীদের কর্মসংস্থানের জন্যও দেশটি গুরুত্বপূর্ণ। সৌদি আরবে নারীরা গৃহস্থালির কাজ হাতে নিলেও ওমানে পরিস্থিতি ভিন্ন। সেখানে পোশাক কারখানায় নারীরা ভালো বেতনের চাকরি পান। তাই প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান নিয়ে কাজ করতে হবে।

তবে ওমানের মতো গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে গেলে ধীরে ধীরে প্রবাসী আয়ে প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা

জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, গতকাল বিভিন্ন গণমাধ্যমে ওমানের ভিসা স্থগিতের খবর দেখেছি। তিনি বলেন,ভিসার অনেকগুলো ক্যাটাগরি রয়েছে কোন না কোন ক্যাটাগরিতে ভিসা বন্ধ করে বা স্থগিত করে ।  কিন্তু বাংলাদেশের জন্য  সকল ক্যাটাগরিতে ভিসা  স্থগিত কেন  করা হলো বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। দূতাবাস থেকে বন্ধের সঠিক কারণ জানতে হবে।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিলে ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X