July 26, 2024

Warning: Undefined array key "tv_link" in /home/admin/web/timetvusa.com/public_html/wp-content/themes/time-tv/template-parts/header/mobile-topbar.php on line 53
বাংলাদেশে বায়ু দূষণঃ বসবাস অনুপযোগিতার এক ভয়াবহ চিত্র

বাংলাদেশে বায়ু দূষণঃ বসবাস অনুপযোগিতার এক ভয়াবহ চিত্র

বাংলাদেশে বায়ু দূষণঃ বসবাস অনুপযোগিতার এক ভয়াবহ চিত্র

বাংলাদেশে বায়ু দূষণঃ বসবাস অনুপযোগিতার এক ভয়াবহ চিত্র

বায়ুর কণা দূষণ বাংলাদেশের আয়ুষ্কালের ক্ষেত্রে মানব স্বাস্থ্যের জন্য দ্বিতীয় বৃহত্তম হুমকি (হৃদরোগ সহ)। AQLI(Air Quality Life Index) অনুযায়ী, এই দূষণের কারণে বাংলাদেশীর গড় আয়ু ৬.৮  বছর কমে যায়। যেখানে  ক্ষতিকর তামাক ব্যবহার করলেও মানুষের গড় আয়ু এতটা কমে না। তামাক ব্যবহার গড় আয়ু ২.১  বছর হ্রাস করে। এছাড়াও, শিশু ও মাতৃ অপুষ্টির কারণে আয়ু ১.৪ বছর কমে যায়।

সর্বশেষ এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স (AQLI) বাংলাদেশকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও তারা চারটি নতুন ঘনবসতিপূর্ণ জেলাকে বায়ু দূষণের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত সর্বশেষ এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স অনুযায়ী,শিল্প কারখানা বেশি থাকা গাজীপুর জেলায় বাতাসে ৮৯.৮ পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম২.৫) রয়েছে, যা দেশের সর্বোচ্চ। এরপরই রয়েছে নোয়াখালী। এখানে বাতাসে ৮৮.৭ পিএম-২.৫ কণা রয়েছে। ঢাকার বাতাস ৮৭.২  পিএম২.৫; কুমিল্লার বায়ুতে ৮৮.২ পিএম ২.৫; এবং টাঙ্গাইলের বায়ুতে ৮১ পিএম ২.৫ দূষণকারী কণা রয়েছে।

যেটা বাংলাদেশের ১৬৪.৮ মিলিয়ন মানুষ এমন এলাকায় বাস করে যেখানে দেশের নিজস্ব জাতীয় মান (প্রতি ঘনমিটারে ১৫ মাইক্রোগ্রাম) উভয়কেই ছাড়িয়ে যায়। এমনকি সবচেয়ে কম দূষিত জেলা সিলেটেও কণার দূষণ WHO পিএম ২.৫ নির্দেশিকা থেকে ৯.৭ গুণ বেশি এবং জাতীয় মানদণ্ডের চেয়ে ৩.২ গুণ বেশি।আগের সূচকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহ ছিল শীর্ষ পাঁচ ঝুঁকিপূর্ণ জেলা।

AQLI এর মতে, বাংলাদেশে বায়ু দূষণকারী কণা নিয়ন্ত্রণে থাকলে বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) নির্দেশিকা অনুযায়ী  পিএম ২.৫ এর ঘনত্ব প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রামের মধ্যে থাকলে, গাজীপুর, নোয়াখালী, ঢাকা, কুমিল্লার বাসিন্দাদের আয়ুষ্কাল আর টাঙ্গাইল ৮ বছর বাড়বে।

বায়ুর কণা দূষণ বাংলাদেশের আয়ুষ্কালের ক্ষেত্রে মানব স্বাস্থ্যের জন্য দ্বিতীয় বৃহত্তম হুমকি (হৃদরোগ সহ)। AQLI এর মতে, এই দূষণের কারণে একজন বাংলাদেশীর গড় আয়ু ৬.৮বছর কমে যায়। বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশে ২০% অকাল মৃত্যু: বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন

তবে ক্ষতিকর তামাক ব্যবহার করলেও মানুষের গড় আয়ু এতটা কমে না। তামাক ব্যবহার গড় আয়ু ২.১ বছর হ্রাস করে। এছাড়াও, শিশু ও মাতৃ অপুষ্টির কারণে আয়ু ১.৪ বছর কমে যায়।

পিএম ২.৫ হলো ২.৫ মাইক্রোমিটার বা তারচেয়ে কম ব্যাসের সূক্ষ্ম কণা। অন্যান্য দূষণকারী  কণার মধ্যে এই কণাগুলি সবচেয়ে বিপজ্জনক কারণ তারা ফুসফুসের বাধা ভেদ করে রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করতে পারে। যা পরবর্তীতে কার্ডিওভাসকুলার এবং শ্বাসযন্ত্রের রোগ এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত নিয়ে যায়।

২০২০ সালের মাত্রার তুলনায় কণা দূষণ ২.১% কমলেও, বাংলাদেশে কণা দূষণ গত এক দশকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকাগুলির চেয়ে ১৪ থেকে ১৫ গুণ বেশি হয়েছে।

বায়ু দূষণ গবেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের গবেষণায় বলা হয়, শুষ্ক মৌসুমে সিলেট ছাড়া পুরো বাংলাদেশই দূষিত বাতাসে ঢেকে যায়।

“এর অভ্যন্তরীণ উৎস হল ইটভাটা, চালের কল এবং রাস্তায় চলাচলের জন্য অযোগ্য পরিবহন; এগুলোর সবই চলে নিম্নমানের জ্বালানিতে। এছাড়াও, শীতের বাতাসের সাথে উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত আন্তঃসীমান্ত কণা দূষণও বাংলাদেশের বায়ুর গুণমানকে মারাত্মকভাবে দূষিত করে।

ডব্লিউএইচও বায়ু দূষণকে মানব স্বাস্থ্যের জন্য একক সবচেয়ে বড় পরিবেশগত হুমকি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রতি বছর, এটি অনুমান করা হয় যে, লাখেরও বেশি মানুষ বায়ু দূষণের সংস্পর্শে অকালে মারা যায়।

প্রিভেনটিভ মেডিসিন  বিভাগের  গবেষণায় দেখানো হয় যে, বায়ু দূষণ সবচেয়ে বেশি শ্বাসযন্ত্রের রোগ সৃষ্টি করে এবং ফলস্বরূপ, হাঁপানি রোগীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তারা লক্ষ্য করেছেন যে বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর যক্ষ্মা এবং হাঁপানির নতুন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এছাড়াও শ্বাসযন্ত্রের অ্যালার্জি, হাঁচি এবং কাশির মতো সমস্যা বাড়ায়।

দূষণের কারণে শ্বাসতন্ত্রের পাশাপাশি কিডনি ও লিভারও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বায়ু দূষণ ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্যও দায়ী।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭২ বছর চার মাস।

কিন্তু প্রিভেনটিভ মেডিসিন মতে, বাংলাদেশে গড় আয়ু বাড়ছে তা আদর্শ নয়। যেখানে দূষণের কারণে বিভিন্ন রোগ আমাদের জীবনযাত্রার মান নষ্ট করছে; সেখানে গড় আয়ু বাড়ছে বলাটা কোনভাবেই আদর্শিক নয়।

যদিও বাংলাদেশে বায়ু দূষণজনিত মৃত্যুর কোনো সরকারি নথি নেই, তবে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ডিজিজেস অফ দ্য চেস্ট অ্যান্ড হাসপাতাল ২০২১ সালে বহিরাগত এবং জরুরি বিভাগে ২১০,০০০ রোগীকে চিকিত্সা করেছে। সাত বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ৮৫ হাজার। যেখানে ২০২৩ এর বারবার নাম্বার ওয়ানে আসা  দূষিত শহরের মধ্যে ঢাকা চ্যাম্পিয়ন। সেখানে হিসাবটা এখনো প্রকাশ করা হয়নি তা কত ভয়াবহ হতে পারে সহজেই অনুমেয়।

আরও পড়ুন

বায়ু দূষণ রোধে রাজধানী পরিবর্তন

বায়ু দূষণ অন্যান্য দূষণকারীর তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক মানুষকে প্রভাবিত করে। বিশ্বের দেশগুলো বায়ু দূষণের মাত্রা কমিয়ে রোগের বোঝা কমাতে পারে। AQLI অনুযায়ী এটি দীর্ঘমেয়াদী এবং স্বল্পমেয়াদী অসুস্থতা কমাতে পারে।

বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল এবং পাকিস্তান বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২২.৯% বাস করে। কিন্তু এই চারটি দেশই বিশ্বের শীর্ষ দূষণকারী দেশ।২০১৩ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে কণার দূষণ ১২.৪% বৃদ্ধি পেয়েছে, ভারতে ৯.৫% এবং পাকিস্তানে ৮.৮% বেড়েছে।

এদিকে, ২০১৪ সালে ‘দূষণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ ঘোষণা করার পর থেকে চীন দূষণ কমানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। ২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দেশে দূষণ ৪২.৩% কমেছে এবং এর জনসংখ্যার গড় আয়ু ২.২ বছর বেড়েছে।

“চীন তাদের প্রায় সব কয়লাচালিত শিল্প বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া, চীনের কঠোর ট্রাফিক নিয়ম নোংরা জ্বালানি এবং অদক্ষ পরিবহনের ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছে। আমরা যদি এই পদক্ষেপগুলিকে বাংলাদেশের সাথে তুলনা করি, তাহলে আমরা সহজেই বুঝতে পারব কেন বাংলাদেশ বায়ু নিয়ন্ত্রণে কঠিন ভাবে ব্যর্থ হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X