December 5, 2024
জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে নাটোরের বিখ্যাত মিষ্টান্ন কাঁচাগোল্লা

জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে নাটোরের বিখ্যাত মিষ্টান্ন কাঁচাগোল্লা

জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে নাটোরের বিখ্যাত মিষ্টান্ন কাঁচাগোল্লা

জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে নাটোরের বিখ্যাত মিষ্টান্ন কাঁচাগোল্লা

যে কোনো অনুষ্ঠানে বা সুখবরে হাসিমুখে হাসি ফোটানোর প্রথা বহুকাল ধরেই চলে আসছে বাঙালি সমাজে। এখনো চলছে. আর সেই মিষ্টি যদি হয় নাটোরের কাঁচাগোল্লা, তাহলে তো সোনায়-সোহাগা। যারা কখনো নাটোরের কাঁচাগোল্লার স্বাদ পাননি, তাদের জিভ চিরকালই অমৃত স্বাদের এই বিখ্যাত মিষ্টির জন্য  ভেজা ভেজাই রয়ে যাবে। কাঁচাগোল্লা গোলাকার নয়, লম্বাও নয়, কাঁচাও নয়। তবুও তার নাম কাঁচাগোল্লা! দেশে-বিদেশে এ নামেই পরিচিত।

এবার জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেল নাটোরের কাঁচাগোল্লা। নাটোরের এই মিষ্টান্নটি দেশের ১৭তম জিআই পণ্য।

মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমানের স্বাক্ষরে নাটোরের জেলা প্রশাসকের নামে কাঁচাগোল্লার জিআই স্বীকৃতির অনুমোদন দেওয়া হয়। . বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) জিআই সার্টিফিকেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়।

নাটোরের কাঁচাগোল্লা শুধু একটি মিষ্টির নামই নয়, এটি ইতিহাসের অংশ। প্রায় আড়াইশ বছর আগের ইতিহাসে পাওয়া যায় নাটোরের কাঁচাগোল্লা। প্রাচীনকাল থেকেই এই কাঁচাগোল্লা মিষ্টি  মিষ্টি প্রেমিদের তৃপ্তি দিয়ে আসছে। ১৭৫৭ সাল থেকে, এই মিষ্টি ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। ছানাকে চিনির রসে ডুবানোর আগে কিছু করতে হয় না অর্থাৎ কাঁচা ছানা চিনির রসে ডুবিয়ে রাখা হয়, রসগোল্লা ছানা তেলে ভেজে চিনির রসে ডুবিয়ে রাখা হয়। তাই তার নাম হয় রসগোল্লা। কাঁচা ছানার রসে ডুবিয়ে রাখা হয় বলে একে কাঁচাগোল্লা বলা হয়। কাঁচাগোল্লার স্বাদ রসগোল্লা, পানিতোয়া, এমনকি উকরন সন্দেশকেও হার মানায়। এ মিষ্টিতে কাঁচা ছানার স্বাদ রয়েছে যা অন্য মিষ্টির মতো নয়। ‘নাটোরের কাঁচাগোল্লা’ নাটোরের বনলতা সেনের মতোই জনপ্রিয়। বাঙালি ভোজনরসিক, আর সে কারণে আতিথেয়তার পর মিষ্টি খেতেই চাই।

কাঁচাগোল্লা সৃষ্টির এক অপূর্ব গল্প আছে। জনশ্রুতি রয়েছে এই মিষ্টি অনেকটা ঠেকায় পড়ে এবং বাধ্য হয়ে তৈরি করে ফেলেছিলেন মধুসূদননগরীর লালবাজারে মধুসূদন পালের দোকান ছিল নাটোরের বিখ্যাত মিষ্টির দোকান। দোকানে বেশ কয়েকটি বড় বড় চুলা ছিল। মধুসূদন এই চুলায় দেড় থেকে দুই মণ ছানা দিয়ে রসগোল্লা, পানিটোয়া, চমচম, কালোজাম ইত্যাদি মিষ্টি তৈরি করতেন। দোকানে দশ থেকে পনের জন কারিগর কাজ করতেন। হঠাৎ একদিন কারিগররা আসেনি। মধুসূদনের মাথায় হাত! কে মিষ্টি বানাবে? এখন এতগুলো ছানা দিয়ে কি হবে? সে চিন্তায় অস্থির। তিনি ছানাগুলোর গায়ে চিনির রস ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিতে বলেন, যাতে সেগুলো নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পায়। এর পরে, মুখে দিয়ে  দেখা যায় চিনিযুক্ত ছানার দুর্দান্ত স্বাদ । নতুন মিষ্টির নাম কি রাখব ভাবতে লাগলাম। ধীরে ধীরে এই মিষ্টির প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকে মানুষ । এরপর থেকে মধুসূদন নিয়মিত এই মিষ্টি তৈরি করতে শুরু করেন। কাঁচাগোল্লার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে বহুদূর। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মধুসূদন পালের দোকানে প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন মণ ছানা উৎপাদন শুরু হয়। তখন কাঁচাগোল্লার কথা জানাতে ঢোল বাজানো হতো।

দেশে-বিদেশে কাঁচাগোল্লা: ১৭৬০ সালে অর্ধবঙ্গেশ্বরী বাংলার দানশীল শাসক রানী ভবানীর রাজত্বকালে কাঁচাগোল্লার খ্যাতি দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তখন নাটোরে মিষ্টির দোকান খুব কম ছিল। বিখ্যাত কাঁচাগোল্লা ছাড়াও এসব দোকানে সন্দেশ, রাঘবশাহী, চমচম, রাজভোগ, রসমালাই, পানিতোয়া প্রভৃতি মিষ্টি ছিল, তবে কাঁচাগোল্লা উঠে এসেছে উপরে। ফলে সেই সময়ে জমিদারদের মিষ্টিমুখ করতে ব্যবহৃত হত এই বিখ্যাত কাঁচাগোল্লা। এমনকি বিলেতের রাজপরিবারও এই কাঁচাগোল্লা ভক্ষণ করত। তিনি ভারতের সর্বত্র যেতেন। রাজশাহী গেজেটেও কাঁচাগোল্লার খ্যাতির কথা বলা হয়েছে। কলকাতার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সে সময় কাঁচাগোল্লার খ্যাতি নিয়ে লেখালেখি হয়েছে। এভাবেই আন্তর্জাতিকতা সবুজ আলো পায়। আজ জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়  নাটোরের এই রসদার কাঁচাগোল্লা।

নিজে বানাবেন যেভাবে

কাঁচাগোল্লা তৈরির প্রধান উপকরণ খাঁটি দুধের ছানা ও চিনি। ১ কেজি কাঁচা গোল্লা তৈরি করতে প্রায় ১কেজি কাঁচা ছানা এবং ৪০০ গ্রাম চিনির প্রয়োজন হয়। প্যানে পানি দিয়ে চিনি ফুটিয়ে নিন। চিনি পরিষ্কার করার জন্য সামান্য কাঁচা দুধ যোগ করতে হবে। প্যানের গাদ পরিষ্কার হয়ে গেলে কড়াইয়ে ছানা ঢেলে দিতে হয়।। তারপর একই সময়ে জ্বাল  দিতে থাকুন  এবং কাঠের চিপ দিয়ে নাড়ুন। এভাবে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট একটানা নাড়লে তৈরি হয় কাঁচাগোল্লা। কিন্তু এই নাড়াতেই রয়েছে আসল শৈল্পিক কৌশল ।

ভালো কাঁচাগোল্লা কোথায় পাবেন : নাটোরের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দোকান ছাড়া এই মিষ্টি পেতে প্রতারণার সম্ভাবনা রয়েছে। লালবাজারের মধুসূদন পালের দোকানে, নীচা বাজারের কু-উ মিষ্টির দোকানে, স্টেশন বাজারে বনলতা মিষ্টির দোকানে, ডাবপট্টি মিষ্টির দোকানে এবং স্টেশন বাজার রেলগেটের জগন্নাথ মিষ্টির দোকানে ভাল মানের কাঁচাগোল্লা পাওয়া যায়। . তবে বর্তমানে কাঁচাগোল্লার শীর্ষ বিক্রেতা মধু মৌমাছি মিষ্টান্ন। তাদের নিজস্ব ৩৮টি গরু রয়েছে। তারা নিজেদের জমিতে গবাদি পশুর জন্য ঘাস চাষও করে।

তবে হ্যাঁ,নাটোর থেকে ফেরার সময় কেউ কাঁচাগোল্লা নিতে ভুল করে না।

আরও জানতে

ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের স্বীকৃতি পেল ‘বগুড়ার দই’

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X