খাবারের ভয়াবহ সংকটে গাজা
তীব্র খাদ্য সংকটে পড়েছে গাজা। অত্যাবশ্যকীয় সাহায্যের অভাবের কারণে বেশিরভাগ মানুষ দিনে এক খাবারে বেঁচে আছে। ক্ষুধার্ত শিশুদের কান্নায় ভেঙে পড়ছে পরিবারগুলো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষ শুরু হতে পারে।
আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় খাদ্য সংকট ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। অনেকেই ক্ষুধায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে, বিশেষ করে শিশুরা। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় চিকিৎসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ভয়াবহতা চলছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে খাবারের অভাব। হাজার হাজার শিশু ক্ষুধার জ্বালায় চিৎকার করছে।
বকর আল-নাজি শরণার্থীদের জন্য নিয়মিত খাবার তৈরি করেন। কিন্তু তার হৃদয় ভেঙ্গে যায় যখন সে দেখে যে তার তৈরি খাবার ক্ষুধার্ত শিশুদের ক্ষুধা মেটাতে পারে না। তিনি বলেন, খাবারের অভাবে মানুষ মারা যাবে বলে আমার আশঙ্কা।
২৮ বছর বয়সী আল-নাজি ইসরায়েলি হামলার কারণে গাজা শহরে তার বাড়ি হারিয়েছেন এবং এখন রাফাহ সীমান্তে বসবাস করছেন। তিনি এখন গাজার এই দক্ষিণাঞ্চলে তার মতো ঘরবাড়ি হারিয়েছেন এমন লোকদের জন্য খাবার রান্না করতে স্বেচ্ছায় কাজ করছেন।
আল-নাজি বলেছেন যে হাজার হাজার মানুষ এখন রাফাহের তেকিয়ে শরণার্থী শিবিরে একটি ছোট খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি বলেন, “আমার জন্য সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত হ’ল হাতে হাতে খাবার বিতরণের সময়। খাবার ফুরিয়ে গেলে আমার বুকে ব্যথা হয়, এবং বাচ্চারা বলে তাদের পেট ভরেনি।” এ অবস্থায় বেশির ভাগ স্বেচ্ছাসেবক নিজেদের খাবার শিশুদের হাতে তুলে দেন।
জাতিসংঘের ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইপিসির মতে, ডিসেম্বরের শুরু থেকে ২০ লাখ গাজাবাসী মারাত্মক খাদ্য সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭৮,০০০ জন “চরম ক্ষুধার” সম্মুখীন।
আইপিসি বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে বলেছে যে গাজাবাসী দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে এবং সংকট দিন দিন খারাপ হচ্ছে। আর আগামী দিনে সব গাজাবাসী চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হবে।
অবরুদ্ধ উপকূলীয় অঞ্চল গাজায় পাঠানো মানবিক সাহায্যের পরিমাণ ক্রমশ কমছে। গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া নির্বিচারে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ ও স্থল হামলার কারণে নতুন ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হচ্ছে না।
রাফাহ এলাকায় বেড়ার বাইরে খাবারের বড় বড় হাঁড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় লোকজনকে। প্রাপ্তবয়স্ক এবং অনেক শিশু তাদের হাতে প্লাস্টিকের প্লেট নিয়ে খাবারের জন্য অপেক্ষা করছে।
প্রতিদিন প্রায় ১০,০০ মানুষকে খাবার সরবরাহকারী একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য খালেদ শেখ আল-ইদ বলেন, “বাজার থেকে মসুর ডাল এবং গমের আটা উধাও হয়ে গেছে। মটরশুটি এবং সবুজ মটরশুটিও পাওয়া যায় না।” তিনি জানান, কিছু দাতব্য সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবকদের অনুদানে তার কেন্দ্র চলছে।
আল-নাজি বলেন, “এই লোকেরা যুদ্ধের আগেও দরিদ্র ছিল। যারা দিনরাত পরিশ্রম করে তাদের ছেলে-মেয়েদের নাতি-নাতনিদের ভরণ-পোষণ দিতেন তারা এখন পরিস্থিতির সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে নেবেন? আমি ভয় পাচ্ছি যে, মানুষ খাবারের অভাবে মারা যাবে।”
খান ইউনিসের পাঁচ মাসের গর্ভবতী শরণার্থী নূর বারবাখ রাফাহ এলাকায় খাবার বিতরণের অনেক আগে থেকেই একটি কেন্দ্রে অপেক্ষা করছিলেন। “আমি খাবার পাচ্ছি না। আমার বাচ্চাদের ওজন কমে গেছে। তারা ক্ষুধায় রাত জেগে থাকে।
চলমান যুদ্ধ সত্ত্বেও তারা খান ইউনিসের কাছে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবছে উল্লেখ করে নূর বলেন, ক্ষুধায় মরার চেয়ে নিজ দেশে শহীদ হওয়া ভালো।