জলদস্যু মুক্ত হয়ে এমভি আব্দুল্লাহ এখন কুতুবদিয়ায়
সৃষ্টিকর্তার বিশেষ রহমত ও অনেকগুলো মানুষের দোয়া ও প্রচেষ্টায় অবশেষে ২ মাসেরও বেশি সময় ধরে জিম্মি থাকার পর দেশে ফিরেছে সোমালি জলদস্যু জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। জাহাজটি ২৩ জন নাবিক নিয়ে বিকেলে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় পৌঁছায়। পরে সেখানে সন্ধ্যা ৬টায় নোঙর করা হয়। জোয়ার অনুকূলে থাকায় এমভি আবদুল্লাহ নির্ধারিত সময়ের আগেই কুতুবদিয়ায় পৌঁছান।
কুতুবদিয়া বন্দরের জলসীমায় নোঙর করার পর জাহাজের ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুর রশিদ ইনডিপেনডেন্টকে বলেন, “আজ ১৩ মে কুতুবদিয়া উপকূলে আমরা ছয়বার নোঙর করেছি। জাহাজের সব কর্মকর্তা সুস্থ ও ভালো আছেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে, শীঘ্রই কার্গোটি আনলোড করা হবে আমি আমাদের সমস্ত অফিসারদের পক্ষ থেকে সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
জাহাজটির মালিক এসআর শিপিং জানান, ১৩ বছর আগে সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়া জাহাজ এমভি জাহান মনিতে করেই নাবিকদের মঙ্গলবার চট্টগ্রামে আনা হবে। জাহাজ থেকে ১০,৫০০ টন চুনাপাথর আনলোড করার পর এমভি আবদুল্লাহ ১৫ মে রাতে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার আলফা নাংকোরেজে পৌঁছাবেন।
এর আগে, ১ মে এমভি আবদুল্লাহ ১২সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফুজাইরা বন্দর থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হন। ১২ দিন একটানা পাল তোলার পর সোমবার ভোরে এমভি আবদুল্লাহ বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করেন। আগে বাংলাদেশে প্রবেশের পর জাহাজের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০.৫ নটিক্যাল মাইল হলে অনুকূল জোয়ারের কারণে গতি ২ নটিক্যাল মাইল বেড়ে ১২.১ নটিক্যাল মাইল হয়। ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই সন্ধ্যা ৬টায় নোঙর করতে সক্ষম হন এমভি আবদুল্লাহ কুতুবদিয়া।
১২ মার্চ, এমভি আবদুল্লাহ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের দ্বারা বন্দী হয়। প্রায় এক মাস পর জাহাজটি জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্ত হয়। এরপর গত ১ মে সোমালি জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত হওয়া জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ জ্বালানি ও প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) ফুজাইরা বন্দর ছেড়ে চট্টগ্রামের পথে। সোমালি জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার ঠিক এক মাস পর বাংলাদেশে এসেছে এমভি আবদুল্লাহ নামের জাহাজটি।
কিভাবে নাবিকদের ফিরিয়ে আনা হবে:
দীর্ঘ এক মাস অপহরণের পর এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ২৩ জন নাবিককে ১৩ এপ্রিল সোমালিয়া সময় রাত ১২টায় এবং বাংলাদেশ সময় ভোর ৩টায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
মুক্তির পর, জাহাজটি কয়লা খালাসের জন্য ২২ এপ্রিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে পৌঁছায়। সেখান থেকে চুনাপাথর আমদানি করতে শনিবার মিনা সাকার বন্দরে যান।
জাহাজটি দুই দিনে ৫৩ হাজার মেট্রিক টন চুনাপাথর বোঝাই করে ১৪ দিন আগে বাংলাদেশের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
সোমবার সন্ধ্যায় জাহাজটি কুতুবদিয়ায় পৌঁছানোর পর নাবিক ও ক্রু সদস্যদের একটি নতুন ব্যাচ জাহাজটিতে পাঠানো হবে। জাহাজটিতে বর্তমানে থাকা ২৩ জন ক্রুকে আগামীকাল মঙ্গলবার একটি লাইটারেজ জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরের নেট টার্মিনালে আনা হবে।
মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম গ্রুপের সিইও মি. করিম বলেন, “আগামীকাল আবহাওয়া ঠিক থাকলে আমি তাদের আরেকটি লাইটারেজ জাহাজ নামিয়ে দেব। তাদের সবাইকে একসাথে আনুন এবং তাদের কিছু ইমিগ্রেশন আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হবে।”
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে তাদের পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামের সদরঘাট এলাকায় কেএসআরএম গ্রুপের নিজস্ব জেটিতে জিম্মি থেকে মুক্তি পাওয়া ২৩ জন নাবিককে বহনকারী লাইটারেজ জাহাজটিকে নোঙর করার।
কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, “নাবিকদের পরিবারের সদস্যরা থাকবেন। তবে আনুষ্ঠানিক কোনো অনুষ্ঠান হবে না।”
উল্লেখ্য, এমভি আবদুল্লাহ ৪ মার্চ মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে ৫০,০০০ টন কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশ্যে রওনা হন। জাহাজটি ১৯ মার্চ আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল।
মাপুতো ছাড়ার চার দিন পর, জাহাজটি ২৩ জন নাবিকসহ ভারত মহাসাগরে ১২ মার্চ সোমালি জলদস্যুদের দ্বারা আটক হয়।
জলদস্যুরা তখন জাহাজ কর্তৃপক্ষের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে। জাহাজ কর্তৃপক্ষ প্রায় ২০ দিন ধরে মালিকের সাথে আলোচনা করেছে।
এরপর হেলিকপ্টার থেকে মুক্তিপণ নামিয়ে দেন মালিক। দীর্ঘ ৩৩ দিন জিম্মি থাকার পর ১৩ এপ্রিল মধ্যরাতে সোমালি জলদস্যুরা জাহাজ থেকে নেমে আসে। ২৩ জন নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহকে মুক্ত করা হয়।
মুক্তির আট দিন পর এমভি আবদুল্লাহ ২১ এপ্রিল বিকেলে নাবিকদের নিয়ে দুবাই পৌঁছেন।
জাহাজটি ২২ এপ্রিল দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরের জেটিতে ডক করে। সেই বন্দরে ৫০,০০০ মেট্রিক টন কয়লা আনলোড করার পরে, নতুন ভ্রমণের জন্য চুনাপাথর লোড করার জন্য জাহাজটিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মিনা সাক্কারা বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়।
এমভি আবদুল্লাহ ৫৩ হাজার টন চুনাপাথর নিয়ে গত ৩০ এপ্রিল দুবাই মিনা সাক্কারা বন্দর থেকে দেশের উদ্দেশে রওনা হন।