মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে মোদির প্রতি সাংসদ ওয়েইসির কঠিন প্রতিক্রিয়া
মুসলিম জনসংখ্যা বেশি। তাদের গন্ডা গন্ডা বাচ্চা হয়। বিজেপি সহ বহু পন্ডিত দল এমন একটি বয়ান বহু দিন ধরে বাজারে খাওয়াচ্ছে। কিছু মানুষ তা অনেক দিন ধরে খাচ্ছেও। কেউ কেউ দীর্ঘদিন ধরে এটি খাচ্ছেন। কিন্তু এই অভিযোগের আর কোনো সারমর্ম নেই। কিন্তু বিজেপির রাজনৈতিক প্রচারে এর গুরুত্ব এখনও কমেনি। রাজস্থানে নির্বাচনী প্রচারে মোদি আবারও মুসলিম জনসংখ্যার দিকে কটাক্ষ করলেন।
রবিবার ফের জবাব দিলেন আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। তিনি বলেন, ‘হিন্দুরা আর কতদিন মুসলমানদের ভয় পাবে?’ খোদ মোদি সরকার যে রিপোর্ট সামনে এনেছে তাতে দেখা যাচ্ছে মুসলমানদের জনসংখ্যা কমছে। কিন্তু এটা প্রচার হলে বিজেপির জন্য কঠিন হবে। মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ছে,ভবিষ্যতে তারা হিন্দুদেরও ছাড়িয়ে যাবে। এটা প্রচার করে হিন্দুদের মনে ভয় জাগিয়ে তোলাকে বিজেপি তাদের ‘পবিত্র’ কর্তব্য বলে মনে করে। আরএসএস দীর্ঘদিন ধরেই এই কাজ করে আসছে।
মোদি উচ্চারণ করছেন সংঘের পরিচিত স্ক্রিপ্ট। হিন্দুদের মনে ভয় জাগানো এবং বিদ্বেষের প্রাচীর তৈরি করা ছাড়া মোদি কি আর কিছু করতে পারেন না? প্রশ্ন তুলেছেন হায়দরাবাদের দাপুটে এই সাংসদ। তিনি বলেন, আপনার সরকার রিপোর্ট করছে যে দেশে মুসলিম পুরুষরা সবচেয়ে বেশি গর্ভনিরোধক ব্যবহার করে? তাদের সংখ্যা কমছে। সেই রিপোর্ট দিয়েছে মোদী সরকার। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারণায় তার সরকারের দেওয়া প্রতিবেদনের তোয়াক্কা করছেন না তিনি। হিন্দুদের মনে ভীতি তৈরি করতে তিনি বলেন, মুসলমানরা জনসংখ্যা বাড়াচ্ছে। এই মিথ্যাচার বন্ধ করুন। আসাদউদ্দিন ওয়েইসির প্রতিক্রিয়া।
মোদি যেদিন রাজস্থানে প্রচারে গিয়ে মুসলিম জনসংখ্যা নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন সেদিনই জবাব দিয়েছিলেন আসাদউদ্দিন ও তার ভাই আকবর উদ্দিন। আমরা কি শুধু বহিরাগত? মুসলিম ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদির মন্তব্যে সরব আকবরউদ্দিন ওয়েইসি। একটি নির্বাচনী সমাবেশে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি কি জানেন অটল বিহারী বাজপেয়ীর কত ভাইবোন ছিল? সাতজন। মানুষ এখনো বলে মুসলমানদের সন্তান বেশি। অমিত শাহেরও সাত ভাইবোন ছিল। নরেন্দ্র মোদিরা ছয় ভাইবোন।
আসলেই কি মুসলিম শিশুদের সংখ্যা বেশি? তথ্য কি বলে?
মুসলিমদের অনেক সন্তানকে নিয়ে নরেন্দ্র মোদির এই মন্তব্য দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। আসলেই কি দেশে মুসলমানদের ঘরে সন্তানের সংখ্যা বেশি? দেশে এখন পর্যন্ত কী তথ্য পাওয়া গেছে? সর্বশেষ আদমশুমারি রিপোর্ট কি পরিসংখ্যান দেখায়? আসুন বিস্তারিত ব্যাখ্যায়
তথ্য কি বলে?
দেশে মসলিনের জনসংখ্যা কি সত্যিই বেশি?
একটি মুসলিম বাড়িতে একাধিক সন্তান থাকার বিষয়ে নরেন্দ্র মোদির মন্তব্য নিয়ে দেশটি উত্তাল। রাজস্থানে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ‘কংগ্রেস দেশের সম্পদ বাইরের লোকদের কাছে বিলিয়ে দিতে চায়। আপনার কষ্টার্জিত অর্থ তাদের মধ্যে বিতরণ করা হবে যাদের বাড়িতে অনেক সন্তান রয়েছে।’ তিনি যে মুসলমানদের টার্গেট করছেন তা বোঝার কেউ নেই। কিন্তু মুসলমানদের কি আসলেই একাধিক সন্তান আছে? আদমশুমারির রিপোর্ট কি বলে?
ধর্মভিত্তিক আদমশুমারির রিপোর্ট এখন ১৩ বছরের পুরনো। তারপর থেকে ধর্মীয় গোষ্ঠী দ্বারা জনসংখ্যা সম্পর্কে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে।
দেশে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ছে কি?
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, দেশে মুসলিম জনসংখ্যা ছিল ১৭.২২ কোটি। যা সেই সময়ে ভারতের মোট জনসংখ্যার ১৪.২ শতাংশ। ২০০১সালের আদমশুমারি অনুসারে, দেশের মোট মুসলিম জনসংখ্যা ছিল ১৩.৮১ কোটি। তখন দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ১০২.৮ কোটি। অর্থাৎ মুসলিম জনসংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ১৩.৪৩ শতাংশ। ২০০১থেকে ২০১১পর্যন্ত অর্থাৎ ১১ বছরে ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা ২৪.৬৯ শতাংশ বেড়েছে। ১৯৯১থেকে ২০০১সালের মধ্যে মুসলিম জনসংখ্যা ২৯.৪৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ধর্ম অনুসারে পরিবারের সদস্যদের সংখ্যা
জাতীয় নমুনা সমীক্ষার ৬৮ তম রাউন্ড অনুসারে, জুলাই ২০১১থেকে ২০১২ পর্যন্ত ধর্ম অনুসারে মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যদের সংখ্যার একটি বিশদ তথ্য পাওয়া যায়।
ধর্মীয় পরিবারের সদস্য সংখ্যা
হিন্দু ৪.৩
মুসলিম ৫
খ্রিস্টান ৩.৯
শিখ ৪.৭
অন্যান্য ৪.১
মুসলমানদের মধ্যে বেকারত্বের পরিসংখ্যান
তথ্য অনুযায়ী, শ্রমশক্তি অংশগ্রহণের হার (LFPR) এবং শ্রমিক জনসংখ্যা অনুপাতের (WPR) দিক থেকে মুসলমানরা পিছিয়ে রয়েছে। ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভিস অফিসের তথ্য বলছে এটিই একমাত্র ধর্মীয় গোষ্ঠী যাদের পরিসংখ্যান উভয় ক্ষেত্রেই ক্রমাগতভাবে হ্রাস পাচ্ছে। তবে মুসলিমদের মধ্যে বেকারত্বের হার দেশের সামগ্রিক বেকারত্বের হারের তুলনায় কম।