November 22, 2024
যে পাপে বা কর্মে অভিশাপ নেমে আসে (১ম পর্ব)

যে পাপে বা কর্মে অভিশাপ নেমে আসে (১ম পর্ব)

যে পাপে বা কর্মে অভিশাপ নেমে আসে (১ম পর্ব)

যে পাপে বা কর্মে অভিশাপ নেমে আসে (১ম পর্ব)

এমন কতিপয় পাপ রয়েছে যেগুলো মহাপাপ।  যেগুলো করলে আল্লাহতালার পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপর অভিশাপ নেমে আসে । সেগুলো খুবই ভয়ঙ্কর।  সেই পাপসমূহের মধ্যে কতিপয় পাপ বা গুনাহ নিচে  দুইটি পর্বে নিম্নে উল্লেখ করছি। সময় সাপেক্ষে অভিশাপের পাপসমূহ কে আমাদের লেখায় নিয়ে আসা হবে ইনশাআল্লাহ।

অভিশপ্তের পরিণতি:

আল্লাহ যাদের অভিসম্পাত করেছেন তাদের ভয়াবহ পরিণতির কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ পার্থিব জীবনে তাদের সাহায্য করবেন না। পরকালে তাদের জন্য অপমানজনক শাস্তি এবং আরও খারাপ পরিণতি অপেক্ষা করছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এরাই তারা যাদেরকে আল্লাহ লানত করেছেন। আল্লাহ যাকে অভিশাপ দেন, আপনি তার জন্য কোন সাহায্যকারী পাবেন না।’ (সূরা নিসা: ৫২)

অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট। তাদের অভিশাপ দিয়েছেন। তাদের জন্য জাহান্নাম প্রস্তুত করা হয়েছে। এটা কি নিকৃষ্ট আবাস!’ (সূরা ফাতাহ : ৬)

আর এরশাদ হচ্ছে, যেদিন সীমালংঘনকারীদের ওজর-আপত্তি কোন কাজে আসবে না, ওদের জন্য রয়েছে অভিশাপ এবং ওদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট আবাস।’ (সূরা আল মু’মিন : ৫২)

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ তাদের ইহকাল ও পরকালে অভিশাপ দেন। তিনি তাদের জন্য অপমানজনক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।’ (সূরা আহযাব: ৫৭)

সে কর্ম পাপ বা গুনা গুলো হলঃ
কুফর ও শিরকে মৃত্যু:

যদি কেউ শিরক বা কুফর করার পর তওবা না করে মৃত্যুবরণ করে তাহলে এমন ব্যক্তির উপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হবে।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই যারা কুফরি করে এবং কুফরি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তাদের ওপর আল্লাহ ও ফেরেশতাদের অভিসম্পাত এবং সমগ্র মানবজাতির অভিসম্পাত’। (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৬১-১৬২)

আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে পশু জবাই করা:

নামাজ-রোজা, কোরবানি শুধুমাত্র আল্লাহর নামে হতে হবে। এসব কাজ যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে করা হয় তাহলে তার উপর  অভিশাপ নেমে আসবে। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে যবেহ করে আল্লাহ তাকে অভিশাপ দেন।(মুসলিম)

রাসুল (সাঃ) কে অমান্য করাঃ

যারা রাসুল (সাঃ) কে অমান্য করেছে তাদেরকে তিনি অভিশাপ দিয়েছেন। আর কেয়ামতের দিনও তারা একে অপরকে অভিশাপ দিতে থাকবে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,যেদিন তাদের চেহারাগুলো আগুনে উপুড় করে দেয়া হবে, তারা বলবে, ‘হায়, আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম এবং রাসূলের আনুগত্য করতাম’!

তারা আরো বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আমাদের নেতা ও বড় বড় লোক (বুযুর্গ)দের আনুগত্য করেছিলাম, সুতরাং ওরা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল।

হে আমাদের রব! আপনি তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং তাদেরকে দিন মহাঅভিসম্পাত।’ (সূরা আহযাব, আয়াত ৬৬-৬৮)

 কবরকে সিজদার স্থান করা:

কবরের উপর বা কবরের সামনে সিজদা করা অভিশপ্ত হওয়ার পাপ । আবদুল্লাহ (রাঃ) এবং আয়েশা (রাঃ) উভয়েই বর্ণনা করেন যে, নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা ইহুদী ও খ্রিস্টানদের অভিসম্পাত করেছেন। কারণ তারা তাদের নবীদের কবরকে সিজদার স্থান বানিয়েছে। (বুখারি)

আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা:

যারা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করে তাদের উপর আল্লাহ তায়ালা অভিসম্পাত করেছেন।

আল্লাহ বললেন,ক্ষমতা পেলে সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে আর আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে।

এদের প্রতিই আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, অতঃপর তাদেরকে বধির করেন আর তাদের দৃষ্টিশক্তিকে করেন অন্ধ।(সূরা: মুহাম্মদ, আয়াত:২২-২৩)

বিপরীত লিঙ্গের ছদ্মবেশীকরণ / ট্রান্সজেন্ডার:

আল্লাহর রাসূলের অভিশাপ সেই সমস্ত মহিলাদের উপর যারা পুরুষের পোশাক গ্রহণ করে এবং পুরুষদের যারা মহিলাদের পোশাক, চলাফেরা বা শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অনুকরণ করে।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলাদের পোশাক পরিধানকারী পুরুষদের এবং পুরুষদের পোশাক পরিধানকারী মহিলাদের অভিশাপ দিয়েছেন। (বুখারি)

সমকামিতা:

সমকামিতা হল পুরুষ-পুরুষ এবং মহিলা-মহিলাদের মধ্যে জৈবিক চাহিদা মেটানোর জন্য যৌনাঙ্গের ব্যবহার। যেটা খোদার দুনিয়ার অন্যতম খারাপ কাজের একটি। ট্রান্সজেন্ডার যেটার সবচেয়ে বড় সুযোগ করে দেয়। এটা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) এর অভিশাপের কারণ।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যারা সমকামী তাদের উপর অভিশাপ। (তিরমিযী)

একজন সতী মহিলার উপর অপবাদ:

একজন মহিলার উপর অপবাদ আল্লাহর অভিশাপ নিয়ে আসে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, “যারা সতী, মুমিন নারীদের (ব্যভিচারের) অপবাদ দেয়, তারা ইহকাল ও পরকালে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। (সূরা: নূর, আয়াত: ২৩)

ঘুষ দেওয়া ও গ্রহণ করা:

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, “ঘুষের বিনিময় শাস্তির কারণ।”

হাদিসে বলা হয়েছে, ‘রাসূল (সা.) ঘুষদাতা ও ঘুষদাতাকে অভিশাপ দিয়েছেন। (আবু দাউদ)

মাদকের সাথে সম্পৃক্ততা:

যারা মদ পান, মদ বহন, মদ বিক্রি ইত্যাদির সাথে জড়িত তাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ। আনাস বিন মালেক (রা.) বলেন, ‘রাসূল (সা.) দশ শ্রেণির মানুষকে কে অভিশাপ দিয়েছেন যে মদ্যপানের সাথে জড়িত ছিল। মদ প্রস্তুতকারক, যিনি মদ প্রস্তুত করতে বলেন, পানকারী, বহনকারী, যার জন্য বহন করা হয়, যিনি পান করেন, বিক্রেতা, যিনি মূল্য নেন, যিনি মদ কেনেন এবং যার জন্য এটি কেনা হয়।’ (তিরমিযী)

আল্লাহ আমাদেরকে অভিশাপ যুক্ত পাপ সহ সকল রকমের পাপ থেকে বাঁচার তৌফিক দান করুন আমীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X