November 23, 2024
বৈঠকের নামে পাহাড়ে সংসদীয় কমিটির ‘প্রমোদভ্রমণ’

বৈঠকের নামে পাহাড়ে সংসদীয় কমিটির ‘প্রমোদভ্রমণ’

বৈঠকের নামে পাহাড়ে সংসদীয় কমিটির 'প্রমোদভ্রমণ'

বৈঠকের নামে পাহাড়ে সংসদীয় কমিটির ‘প্রমোদভ্রমণ’

যদিও  বর্তমান পাহাড়ের উত্তালএই  পরিস্থিতি আলোচনায় স্থান পায়নি তবে সংসদ ভবনের পরিবর্তে রাঙামাটিতে উড়ে গেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। বৃহস্পতিবার রাঙামাটি জেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে বৈঠক হলেও পাহাড়ের বর্তমান উত্তাল পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়নি। কমিটির সভাপতি বীর বাহাদুর উ শাই সিং নিশ্চিত করেছেন, যৌথ বাহিনীর অভিযান বা পাহাড়ে অস্থিতিশীলতা নিয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি।

গত ১৯ মার্চ সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির প্রথম বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, প্রকৃত পরিস্থিতি ভালোভাবে বোঝার জন্য পাহাড়ের তিন জেলায় সংসদীয় কমিটির তিনটি বৈঠক হবে। কমিটির গতকালের বৈঠককে ‘সফল’ করতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব ও একজন উপসচিবসহ সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বুধবার ঢাকা থেকে এসেছে। গতকাল দুপুরের আগে বৈঠক শেষ হলে কমিটির সদস্যরা বিমানে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। তবে মন্ত্রণালয় ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা এখনো রাঙামাটিতে অবস্থান করছেন। শুক্রবার তারা ঢাকার উদ্দেশে রওনা হতে পারেন বলে জানা গেছে। কমিটির এই কর্মকাণ্ডকে অনেকেই জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আনন্দ ভ্রমণ বলে অভিহিত করেছেন।

কমিটির সভাপতি বীর বাহাদুর ছাড়াও বৈঠকে মন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপঙ্কর তালুকদার, যশোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিন ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য জ্যোর্বতী তঞ্চঙ্গ্যাসহ অন্যান্য সদস্যরা অংশ নেন। ১০ সদস্যের এই কমিটিতে অন্যরা অংশ নেননি।

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সদস্য বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ সমকালকে বলেন, ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে তিনি বৈঠকে আসতে পারেননি। তবে পাহাড়ের তিন জেলায় কমিটির তিনটি বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি। পঙ্কজ নাথ বলেন, বাইরে থেকে দেখার চেয়ে স্থানীয় সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলো ভালোভাবে বোঝার জন্য পাহাড়ে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

পাহাড়ে সম্প্রতি ‘কেএনএফ’ নামের একটি সশস্ত্র সংগঠনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঠেকাতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ অভিযান চলছে। গত ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশও অংশ নেয়।

তবে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এখতিয়ার বলে মনে করেন সংসদীয় কমিটির সভাপতি বীর বাহাদুর। কোনো অনুমানমূলক সুপারিশ করার সুযোগ নেই। তাই এ নিয়ে কমিটিতে কোনো আলোচনা হয়নি। বিষয়টি বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে ছিল না। গতকাল সমকালের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, কমিটি শুধু উন্নয়ন কাজের তদারকি করবে।

তবে সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সংসদীয় কমিটির অন্যতম কাজ হলো নির্বাহী বিভাগের কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং তাদের নীতি নির্ধারণে সুপারিশ করা। সংসদ ধীরে ধীরে এই ইস্যু থেকে সরে যাচ্ছে। ফলে সদস্যরা আর এসব বিষয়ে নিজেদের জড়াতে চান না।

এ বিষয়ে সংসদ বিষয়ক গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্যরা অনেকেই বোঝেন না এবং বোঝার চেষ্টাও করেন না নির্বাহী বিভাগের কাজের পার্থক্য। তবে পাহাড়ে বর্তমান অস্থিতিশীলতা রাজনৈতিক ইস্যু হওয়ায় সম্ভবত নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে কমিটির সদস্যরা এ আলোচনায় জড়াতে আগ্রহী হননি।

বৈঠকের পর সংসদ সচিবালয়ের জনসংযোগ দফতর থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে তিন পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন প্রকল্পের ওপর প্রতিবেদন, প্রাথমিক শিক্ষার সর্বশেষ অগ্রগতি নিয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। পর্যটন শিল্পের অবস্থা ও বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে পার্বত্য এলাকার কৃষকদের তিল চাষে উৎসাহিত করতে বিনামূল্যে তিলের বীজ সরবরাহ এবং বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে এবং তা সারা বছর ব্যবহারের জন্য মিঠা পানির অভাব নিরসনের জন্য একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X