বিএনপি থেকে ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ভারতীয় চাদর ছুঁড়ে ফেললেন রিজভী
এই খবরটি লেখার অন্যতম কারণ হলো, যেকোনো আন্দোলন সফল হতে হলে রাজনৈতিক শক্তির সংহতি প্রয়োজন হয়। আর সেই রাজনৈতিক শক্তি যদি দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের হয় ; জনগণের সাথে সম্পৃক্ত হয় তাহলে ওই আন্দোলন সফল হয়েছে বলেই ধরে নেওয়া যায়। দেরিতে হলেও দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি ইন্ডিয়া আউট আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে। তাতে আওয়ামী লীগ ও ইন্ডিয়ার চিন্তা বেড়ে না যাওয়ার কোনো কারণ নেই।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় পণ্য বয়কটের যে ঢেউ দেখা যাচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী ভারতীয় পণ্য বয়কটের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। তাই ভারতীয় পণ্য বর্জনের এই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করছে জনগণের দল হিসেবে বিএনপিসহ ৬৩ টি গণতন্ত্রপন্থী দল ও দেশপ্রেমিক মানুষ। গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের জনগণ ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে এবং নৈরাজ্যবাদী, ডাকাত, খুনি ও স্বৈরাচারী শাসকদের সহযোগিতা করছে। অত্যাচারী-খুনী-মাফিয়া সরকারকে প্রকাশ্যে সাহায্য ও মদদ দেওয়া। আওয়ামী লীগ এখন ভারতীয় পণ্যে পরিণত হয়েছে। যা একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বার্থ ও মর্যাদার পরিপন্থী।
রিজভী বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. হাছান মাহমুদ জনগণের ভোটাধিকার বঞ্চিত, গণতন্ত্রকে হত্যা ও অবৈধ ক্ষমতাকে অমর করতে প্রতিবেশী ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও সমর্থনের কথা স্বীকার করে উচ্চবাচ্য করছেন। ভোট ছাড়াই নির্বাচিত প্রায় সব মন্ত্রীই ভারত বন্দনায় মত্ত। তাদের কথাবার্তা ও আচরণ থেকে মনে হয় বাংলাদেশ এখন ভারতের স্যাটেলাইট রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
নির্বাচনে ভারতের ভূমিকা নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, গত ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জনগণের সমর্থন বা শক্তিতে নয়, শক্তিতে অবৈধভাবে ক্ষমতায় রয়েছে। এবং তাতে ছিল ভারতের সমর্থন। আর এই টিকে থাকার জন্যই সব দমন-নিপীড়ন-গুম-খুন-খুন-মামলা-হামলা-অন্যায়-অবিচার সরাসরি ভারতের পক্ষে করা হচ্ছে বলে জানান বিএনপি ।
রিজভী বলেন, ওবায়দুল কাদের ও ড. হাছান মাহমুদের অকপট স্বীকারোক্তি প্রমাণ করে জাতিসংঘ সনদের ২ (৪) ধারা সরাসরি লঙ্ঘন করে ভারত আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটাধিকার সব কিছুর উপর সরাসরি নগ্ন হস্তক্ষেপ করে চলেছে। ২ (৪) ধারায় বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সকল সদস্য-রাষ্ট্র আঞ্চলিক অখণ্ডতার বিরুদ্ধে কিংবা অন্য কোনো রাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ, ভীতি প্রদর্শন থেকে এবং জাতিসংঘের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন কোনো উপায় গ্রহণ করা থেকে নিবৃত্ত থাকবে’।
এই নীতি লঙ্ঘন করে ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের কথায় স্পষ্ট।
সংবাদ সম্মেলন শেষে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ভারতীয় চাদর ছুড়ে ফেলে দিয়ে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ঘোষণা দেন রুহুল কবির রিজভী।
ইন্ডিয়া আউট প্রচারণা গতি পাচ্ছে
ভারত বাংলাদেশের সীমান্তে যেভাবে মানুষ হত্যা করেছে পৃথিবীর কোনো দেশ সীমান্তে এত মানুষ হত্যা করেনি। আর ভারত বরাবরই বাংলাদেশের ন্যায্য পাওনা নিয়ে বিরূপ আচরণ করে আসছে। এবং সকল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বাংলাদেশকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ৭জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন।
৭ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারত গোপনে আঁতাত হওয়ায় বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ ক্ষুব্ধ। ওই নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় ফিরে আসে। বাংলাদেশের ভোটারদের অভিযোগ, ভারতের কারণে আওয়ামী লীগ এককভাবে নির্বাচন করতে পেরেছে। শুধু তাই নয়, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো বিতর্কিত নির্বাচনের পরও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ব দরবারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য দ্বিগুণ দায়িত্ব পালন করছে ভারত। এ কারণেই বাংলাদেশে ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণা শুরু করেছে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবশালীরা। দেশি-বিদেশি মিডিয়া নিয়মিতই সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ভারতীয় পণ্য বয়কট’ আন্দোলন নিয়ে লিখছে। ভারতীয় পণ্য বিক্রিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
জানুয়ারিতে আরেকটি একতরফা সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় ফিরেছে আওয়ামী লীগ। এর পরপরই বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়া প্রভাবশালীরা ‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন শুরু করে। মূলত, এই ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণা ভারতের প্রতি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের অসন্তোষেরই প্রতিফলন। এটা শুধু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক নির্বাচনী কারচুপির বিরুদ্ধে একটি পদক্ষেপ নয়, ভারতকে কঠিন পাঠ শেখানোর একটি পদক্ষেপও।
ভারতের সাধারণ মানুষ মূলত তাদের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষার জন্য আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে। এই সমর্থন দিয়ে নয়াদিল্লি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে ক্ষুণ্ন করেছে। সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্টরা তাই অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের নিরলস হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে বাংলাদেশ এবং বিদেশে ভারতীয় পণ্য বয়কটের আহ্বান জানিয়েছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গত এক দশকে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপি করেছে। এতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিশুদ্ধতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ভারত শুধু আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কারচুপি উপেক্ষা করেই নয়, প্রার্থীদের পছন্দকে প্রভাবিত করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট গঠনে সাহায্য করেছে বলে মনে করা হয়।