November 25, 2024
রাশিয়ায় নির্বাচন: ইউক্রেনে দূরপাল্লার ড্রোন হামলার মধ্য দিয়ে শেষ হলো ভোট

রাশিয়ায় নির্বাচন: ইউক্রেনে দূরপাল্লার ড্রোন হামলার মধ্য দিয়ে শেষ হলো ভোট

রাশিয়ায় নির্বাচন: ইউক্রেনে দূরপাল্লার ড্রোন হামলার মধ্য দিয়ে শেষ হলো ভোট

রাশিয়ায় নির্বাচন: ইউক্রেনে দূরপাল্লার ড্রোন হামলার মধ্য দিয়ে শেষ হলো ভোট

ইউক্রেনে ব্যাপক ড্রোন হামলার মধ্যে রোববার রাশিয়ার তিন দিনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শেষ হয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে যে শনিবার রাতে মস্কো অঞ্চলে চারটি সহ ৩৫টি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। রোববার ভোটের শেষ দিনেও ইউক্রেন হামলা অব্যাহত রেখেছে। এটি রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত জাপোরিজিয়া অঞ্চলের একটি ভোটকেন্দ্রেও আঘাত হানে। এভাবে বিক্ষোভ ও হামলায় ভোট শেষ হয়

তিনদিনের ভোটের শেষ দিনে দুপুরে পুতিন বিরোধীরা বিক্ষোভের ডাক দেন।

ইউলিয়া নাভালনায়া ক্রেমলিনের সমালোচক আলেক্সি নাভালনির স্ত্রী, রবিবার, জার্মানির বার্লিনে রাশিয়ান দূতাবাসের সামনে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে যোগ দিয়েছেন৷

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে ইউক্রেন হামলা জোরদার করেছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এসব হামলার কড়া জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এদিকে এসব হামলার ঘটনার   মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তিনদিনের ভোটগ্রহণ রোববার শেষ হয়েছে।

শুক্রবার, ভোটের প্রথম দিনে, পুতিন ইউক্রেনকে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট বিঘ্নিত করার চেষ্টা করার অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, এই সর্বশেষ হামলার জন্য কিয়েভের শাস্তি হওয়া উচিত।

দেশটির নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে পুতিন বলেন, রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে বারবার হামলা হয়েছে। প্রায় ২৫০০ ইউক্রেন সমর্থিত যোদ্ধা ট্যাঙ্ক নিয়ে রাশিয়ার দুটি অঞ্চলে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, এসব হামলার জন্য শত্রুদের শাস্তি পেতে হবে।

ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলেছেন, রুশ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো হামলা চালিয়েছে। এই দলগুলো ক্রেমলিন শাসনের বিরোধিতা করে আসছে।

শুক্রবার ইউক্রেনের ওডেসার কৃষ্ণ সাগর বন্দরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ৭০ জন। এটি ছিল কয়েক সপ্তাহের মধ্যে রাশিয়ার সবচেয়ে মারাত্মক হামলা। হামলার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়াকে  এই অশুভ হামলার উপযুক্ত জবাব দেয়া হবে।

ড্রোন হামলা হয়েছে ভোট কেন্দ্রেও

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নির্বাচনের সময় দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের বাহিনী কয়েক ডজন ড্রোন ধ্বংস করেছে।

সবচেয়ে বড় হামলাটি ঘটেছে দক্ষিণ ক্রাসনোদর অঞ্চলে। সেখানে একটি তেল শোধনাগারে হামলা চালানো হয়। ক্রাসনোদর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্লাভিয়ানস্ক-অন-কুবান এলাকায় ১৭  টি ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। এই ড্রোনগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। তবে একটি ড্রোন শোধনাগারে আঘাত করলে আগুন ধরে যায়।

রাশিয়ান নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের প্রশাসক ভ্লাদিমির রোগভ বলেছেন, রবিবার দুটি ইউক্রেনীয় ড্রোন একটি ভোট কেন্দ্রে আঘাত হানে। ভবনটিতে আগুন লেগে গেলেও কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

ইউক্রেন রাশিয়ার তেল শোধনাগারে ড্রোন হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে যে হামলার কারণে তেল শোধনাগারে আগুন লেগেছে। রাশিয়ার অর্থনীতি ও দেশটির তেল রপ্তানিকে দুর্বল করতে এ হামলা চালানো হয়েছে।

সীমান্ত শহর বেলগোরোডে ইউক্রেনের গোলাগুলিতে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরী নিহত হয়েছে। আঞ্চলিক গভর্নর জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় মেয়েটির বাবা আহত হয়েছেন।

রাতে মস্কোর কাছে কয়েকটি ড্রোনও গুলি করে ভূপাতিত করা হয়। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইউক্রেনের বাহিনী এ ধরনের হামলা বাড়িয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট বিমান হামলায় নতুন ড্রোনের সক্ষমতার প্রশংসা করেছেন।

নির্বাচনের দিন প্রতিবাদের ডাক

এদিকে নির্বাচনের শেষ দিনে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে পুতিনবিরোধীরা। দেশটির প্রয়াত বিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া রোববার বিকেলে অনুসারীদের প্রতিবাদ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নাভালনির মৃত্যুর দুই সপ্তাহ আগে বিক্ষোভের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

মস্কোতে ভোট কেন্দ্রের সামনে সুশৃঙ্খল সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় লোকজনকে। তবে তাদের কাউকেই প্রতিবাদ বা রাজনৈতিক স্লোগান দিতে দেখা যায়নি।

তবে বিভিন্ন দেশে প্রবাসী রুশদের বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। ইউলিয়া বর্তমানে জার্মানিতে অবস্থান করছেন। তিনি বার্লিনে পুতিন বিরোধী বিক্ষোভে যোগ দেন।

জর্জিয়ার রাজধানী তিবিলিসিতে পুতিনবিরোধী শত শত কর্মী বিক্ষোভ করেছে। এ সময় তাদের হাতে স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকেও বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানে রুশ দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়।

ভোট পড়েছে সাড়ে ৬৭ শতাংশ

একটি বৃহৎ দেশ হওয়ায়, রাশিয়ার নির্বাচন ১১টি টাইম জোন  অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস জানিয়েছে, কিছু এলাকায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে ৬৭.৫৪ শতাংশ ভোট পড়েছে।

২০১৮ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তুলনায় এই ভোটারদের ভোটদানের হার কিছুটা বেশি। ওই নির্বাচনে ৬৭ দশমিক ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া নির্বাচনে বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ঘটেছে। ভোটের প্রথম দিনেই রাশিয়ার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। ব্যালট বাক্সে রং নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুতিনের বয়স এখন ৭১ বছর। তিনি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির সদস্য ছিলেন। পুতিন ১৯৯৯ সাল থেকে রাশিয়ায় ক্ষমতায় রয়েছেন। নতুন ছয় বছরের মেয়াদে, তিনি কার্যত অন্তত ২০৩০ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার ক্ষমতায় থাকার ব্যবস্থা করতে চলেছেন।

এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পুতিনের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। পুতিন যদি আরেকটি মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন, তবে তিনি ১৮ শতকের ক্যাথরিন দ্য গ্রেটের পর সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে থাকা রাশিয়ান শাসক হয়ে উঠবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X