ঢাবি ছাত্রলীগ নেতার কর্ম: বকেয়া টাকা চাওয়ায় মারধর করে ছিঁড়লেন ক্যান্টিন মালিকের দাড়ি
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যান্টিনে ফাও খাওয়া, টোকেন ছাড়া খাওয়া, অনেকে মিলে খেয়ে সে ক্যান্টিনের মালিক কে বিল চাইলে মারধর করা দোকানপাটে লুট করে খাওয়া, লুটের পর দোকান মালিককে কঠিনভাবে মারধর করা।এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে ফাও খাওয়ার বিচারে বাংলাদেশের ইতিহাসে এই চরিত্রবান সংগঠনটি সবার আগে। ক্যান্টিন সহ সকল ক্ষেত্রে টাকা না দিয়ে খাওয়ার প্রবণতা ছাত্রলীগের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। যার উদাহরণ হয়তো বা অগণিতই রয়ে গেছে ।
চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমি দখল, দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য, মাদক ব্যবসা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, প্রতিবন্ধী শিশু ও বৃদ্ধা নারীসহ সব শ্রেণির নারীদের ধর্ষণসহ হরেক রকমের স্বাধীন ঘটনায় সারা বছরই বিভিন্ন খবরের শিরোনামে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। সম্মানিত মানুষ ও শিক্ষকদের অপমান এবং মানবিক নির্যাতন যেকোনো ধরণের তদন্ত কমিটি ঘোষণার পর থেকেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নাম আলোচনা-সমালোচনায় উঠে আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করে মাদক পরিবহন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর, প্রবাসীদের মারধর, বিদেশিদের মারধর ও ছিনতাই, অপহরণ, ভিক্ষুক সহ সকল ধরনের মানুষের কাছ থেকে চাঁদাবাজি, নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে মারধর ও সাংবাদিক নির্যাতনের অগণিত অভিযোগ পাওয়া গেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
এমনই একটি ঘটনা বর্ণনা করবো আজকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সূর্যসেন হলে খাবারের বকেয়া দাবি করলে ক্যান্টিন মালিককে মারধর ও দাড়ি ছিঁড়ে ফেলে এক ছাত্রলীগ নেতা। সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি,২০২৪) বিকেলে সূর্যসেন হলের ক্যান্টিনে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার নাম আরাফাত হোসেন অভি। তিনি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র। আহত- নির্যাতিত ক্যান্টিনের মালিকের নাম ফাহিম হোসেন।
জানা গেছে, ক্যান্টিনে দুপুরের খাবার খেতে গেলে ক্যান্টিনের মালিক ফাহিম বকেয়া টাকা চান। এ কথা শুনে রেগে যান নেতা আরাফাত। ক্যান্টিন মালিক ফাহিমকে ঘুষি মেরে তার দাড়ি ছিঁড়ে ফেলে এই সোনার ছেলেটি। পরে হলের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ছেঁড়া দাড়ি নিয়ে হল প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানাতে যান ক্যান্টিনের মালিক।
ক্যান্টিনের মালিক ফাহিম গণমাধ্যমকে বলেন, “দুপুরের খাবারের পর আরাফাতকে বলেছিলাম বিল দিতে। আগের কিছু বিলও আছে। তারপর সে বলল, পরে দিব, লিখে ফেল। পরে বললাম, আচ্ছা লিখছি। এই বলেই তারপর তার সাথে কথা শেষ ।এটা ম্যানেজারকে লিখতে বলতেছি যে, ৬টা খানার সাথে এই বিলটা লেখ। পরবর্তীতে উনি আর বাকী খাইবো না। এরপর দুই-তিন মিনিট চইলা গেছে। তখন আইসা বলতাছে, এই ফাহিম এদিকে আয়। পরে গেছি। যাওয়ার পর কইতাছে, কার লগে কীভাবে কি কইতে হয় জানস না? তখন আমি বললাম, আমি কি কইছি ভাই? আমি তো বিলটা চাইলাম খালি। আমি কইছি না, বিল আমি পরে দিমু। এটা বলেই সে আমার দাঁড়িতে ধইরা এক মুঠ দাড়ি ছিড়ে ফেলছে। তখন যা মুখে আসছে তাই বলে গালি দিছে আর আমাকে ও ম্যানেজারকে কিল, ঘুষি, লাথি দেওয়া শুরু করলো”।
এ বিষয়ে সূর্যসেন হলের প্রভোস্টের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেবেন বলে তিনি জানান, অভিযোগের প্রস্তুতি চলছে।
অভিযোগের বিষয়ে আরাফাত গণমাধ্যমকে বলেন, “আমি দুপুরে খাবার খেতে গেলে ক্যান্টিন মালিক বকেয়া টাকা চাইলে আমি বললাম আমার বিকাশে সমস্যা টাকা তুলতে পারছি না। আমি প্রমাণও দেখাইলাম। পরে আমি সেখান থেকে বের হওয়ার সময় তিনি ম্যানেজারকে বললেন আমাকে যেন নেক্সট টাইম খাবার না দেয়। এটা শুনে আমি ক্যান্টিন মালিককে বললাম আপনি এটা কেমন কথা বললেন, সমস্যা তো থাকতে পারে। এরপর হঠাৎ করে তিনি আমাকে ধাক্কা মারেন, আমিও তার কলার টেনে ধরি। তারপর ধাক্কাধাক্কির মধ্যে তার দাড়িতে আমার হাত লেগে ছিঁড়ে যায়। তিনি আমাকে প্রথম ধাক্কা দেয়। আমি কোনো মারধর করিনি।” ।
সূর্য সেন হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. জাকির হোসেন ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি জেনেছি। ভিকটিমকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। এরপর অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত কমিটি করে তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেব।
বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে অবাস্তব- অমানবিক আচরণ ও নৈরাজ্যের অভিযোগ দিন দিন বাড়ছেই। গত কয়েক বছরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ এই বৃহৎ ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের বিপথগামী সদস্য কর্তৃক সংগঠিত মারধর, ডাকাতি, মাদক সরবরাহ ও চাঁদাবাজির অভিযোগ গণমাধ্যমের শিরোনাম হচ্ছে। ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় শাখা ছাত্রলীগ ও ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও সে কথা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের আসামি করা হচ্ছে ঠিকই , তবে ছাত্রলীগ নানা অপরাধে প্রতিনিয়ত জড়িয়ে পড়ছে।