শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয়: যুক্তরাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী
মোবাইল ফোন পরিষেবা প্রদানকারী আমেরিকান কোম্পানি জ্যাক্টের একটি সমীক্ষার ভিত্তিতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১০ থেকে ১৩ বছর বয়সী ৫৬ শতাংশ শিশুর হাতে স্মার্টফোন রয়েছে। দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সী ২৫ শতাংশ শিশুর হাতে স্মার্টফোন রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী নর্মা ফোলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়া শিশুদের স্মার্টফোন না কেনার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।ফোলির প্রস্তাবটি যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে।নতুন নির্দেশিকাগুলি এখন অনলাইনে রয়েছে এবং যুক্তরাজ্যের সমস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠানো হবে৷
ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে যে এই নির্দেশের উদ্দেশ্য হল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন ব্যবহার বন্ধ করার জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপ নিতে চান এমন অভিভাবকদের সমর্থন আদায় করা।
আয়ারল্যান্ডের কো উইকলো শহরতলির গ্রেস্টোনসের আটটি স্কুলের অভিভাবকরা শিশুদের স্মার্টফোন কেনা থেকে বিরত রাখতে অনুরূপ একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্মত হয়েছেন।
ফোলির পরিকল্পনাগুলি সাইবার বুলিং, সহিংসতা এবং যৌনতার মতো সম্ভাব্য ক্ষতিকারক সামগ্রীতে শিশুদের স্মার্টফোন এক্সপোজার নিয়ে উদ্বেগ দ্বারা চালিত হয়েছে৷ফোলি বলেন যে স্মার্টফোন কেনার সুনির্দিষ্ট সুবিধা থাকলেও, শিশুদের জন্য এর সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলোও মোকাবেলা করা দরকার।তিনি বলেন; “স্কুলের প্রিন্সিপালরা আমাকে বলেছেন যে স্মার্টফোনে অনলাইন বুলিংয়ের মতো ঘটনা স্কুলের সময়ের বাইরে বেশি ঘটে।”
“যদি এটি স্কুলের বাইরে ঘটে তবে এটি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আর, স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে শিশুরা এ ধরনের সহিংস ও যৌন বিষয়বস্তু দেখার ঝুঁকিতে রয়েছে। কোনো অভিভাবকই চাইবেন না যে তাদের সন্তানদের সঙ্গে এমনটা ঘটুক।”
ফোলির রাজনৈতিক দলের প্রধান মাইকেল মার্টিন শনিবার একটি নির্বাচনী টিভি অনুষ্ঠানে এই পদক্ষেপের বিষয়ে কথা বলেছেন।
অনুষ্ঠানে, তিনি তার দলের সদস্যদের মধ্যে শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহার সীমিত করার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
“আজকের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বিষয়গুলির মধ্যে একটি হল অনলাইন জগতের মাধ্যমে শিশুদের পথনির্দেশ করা, যেখানে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য নতুন হুমকি এবং ঝুঁকি রয়েছে।” কারণ যুক্তরাজ্যের ১০ বছর বয়সী শিশুদের অর্ধেকের কাছেই একটি স্মার্টফোন রয়েছে
ব্রিটেনের মিডিয়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা, অফকম, বা অফিস অফ কমিউনিকেশন, শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের এই প্রবণতাকে রিপোর্ট করে৷ কোম্পানি এটিকে স্বাধীন ডিজিটাল যুগের প্রতিফলন বলে অভিহিত করেছে।
যুক্তরাজ্যে, ৯ থেকে ১০ বছর বয়সী ৫০ শতাংশ স্মার্টফোনে আসক্ত। একই সময়ে, উল্লেখিত বয়সের শিশুদের মধ্যে মোবাইল ফোন ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে।
ব্রিটেনের মিডিয়া নিয়ন্ত্রক অফকম বা অফিস অফ কমিউনিকেশন গত বছর দেশটির শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের এই প্রবণতার কথা জানিয়েছে। অফকম এটিকে স্বাধীন ডিজিটাল যুগের প্রতিফলন হিসাবে উল্লেখ করে।
পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরাও যুগের প্রভাবের বাইরে নয়। দেশের ৩ থেকে ৪ বছর বয়সী ২৪ শতাংশ শিশুর নিজস্ব ট্যাব রয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত ১৫ শতাংশ তাদের বাবা-মায়ের অনুমতি নিয়ে ঘুমানোর সময় ট্যাব গ্রহণ করে। এভাবেই অফকমের বার্ষিক প্রতিবেদনে শিশুদের ডিজিটাল আসক্তির ব্যবহারিক দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
গত বছরের গবেষণায় ৩২০০ জন শিশু এবং তাদের পিতামাতা জড়িত। অফকমের হেড অফ স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড রিসার্চ ইয়ে-চুং তেহ গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে বলেছেন, “প্রতীয়মান হয় যে মোবাইল ফোন শিশুদের জন্য যোগাযোগ এবং বিনোদনের সবচেয়ে পছন্দের মাধ্যম। এই শিশুরা ইন্টারনেট ছাড়া পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেনি। তাই তারা কল্পনাও করতে পারে না। এটি ছাড়া তাদের অস্তিত্ব যেন অর্থহীন । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, তাদের অফলাইন এবং অনলাইন আচরণ একই সূত্রে আবদ্ধ।
উল্লেখ্য,
স্মার্টফোন মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বিশেষ করে, এটি ছোট শিশুদের অনেক ক্ষতি করে। যা আমরা অনেকেই এখনো জানি না। আমরা প্রায়শই আমাদের বাচ্চাদের কান্না থেকে বিরত রাখতে, তাদের স্থির রাখতে বা তাদের খাওয়ানোর জন্য স্মার্টফোন তুলে দেই। পরবর্তীতে যা শিশুদের নেশায় পরিণত হয়। পরে স্মার্টফোন না দিলে শিশুরা খেতে চায় না এবং দুষ্টুমি করে। কিন্তু এই স্মার্টফোনই শিশুদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, টাচস্ক্রিন স্মার্টফোন, ট্যাবলেট বা ভিডিও গেমের অতিরিক্ত ব্যবহার শিশুদের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। ফলস্বরূপ, শিশু ধীরে ধীরে পেন্সিল ধরে রাখতে অক্ষম হতে পারে।
চিকিৎসকদের মতে, টাচ স্ক্রিন ফোন বা ট্যাবলেট ব্যবহার করলে শিশুদের আঙুলের পেশি সঠিকভাবে বিকশিত হতে বাধা পায়। আঙুলের শক্তি বাড়ে না। ফলে পেন্সিল ধরতে গেলে আঙুলে জোর পায় না। আঙুল ঠিকমতো নড়াচড়া করতে পারে না।
এছাড়াও,স্মার্টফোনে শিশুদের
- দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায় ।
- টিউমার এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে ।
- মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ব্যাহত ক…
- পড়াশোনায় অমনোযোগীতা বৃদ্ধি পায়।
অনেক অভিভাবক আছেন যারা তাদের সন্তানেরা স্মার্টফোন অপারেট করতে পারে এই বিষয়ে অত্যন্ত গর্ববোধ করেন। কিন্তু মনে হয় না তাদের সন্তানেরা খুব ভালো দিকে এগুচ্ছে। সকল অভিভাবকদের আরো সচেতন হতে হবে। এই স্মার্টফোনটি আগামী প্রজন্মের শিশুর জন্য কাল হয়ে উঠতে পারে।