বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০টি দেশ ২০২৩: যেখানে নেই চীন রাশিয়া জাপানের মতো দেশগুলো
একটি দেশের মানুষ ধনী না দরিদ্র তা বোঝার সর্বোত্তম উপায় হল তাদের ক্রয়ক্ষমতা। মানুশ যে টাকা উপার্জন করেন তা দিয়ে তারা কি পরিমাণ ক্রয় করতে পারেন? যদিও এক দেশের কোনো পণ্যের দাম অন্য দেশের সঙ্গে মিলবে না। এজন্য বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির তুলনা করতে পিপিপির ভিত্তিতে জিডিপির আকার গণনা করা হয়। মূলত একটি দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানকে তুলনীয় করার জন্য নামমাত্র জিডিপিকে ‘পিপিপি ডলারে জিডিপি’-তে রূপান্তর করা হয় । যার কারণেই চীন রাশিয়া জাপান ফ্রান্স এই দেশগুলোর এত হাক-ঢাক থাকা সত্ত্বেও তাদের নাম টপ টেনে নাই।
আমরা কখনও কখনও নির্দিষ্ট দেশগুলিকে উন্নত, ধনী বা উন্নয়নশীল হিসাবে উল্লেখ করি। কিন্তু কোন দেশকে কবে ধনী দেশ বলা হবে? -আসলে একটি দেশকে ধনী দেশ বলার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তবে স্বাভাবিকভাবেই একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
আর একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ভর করে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর। আর সেই বিষয়গুলো হলো নাগরিকদের গড় মাথাপিছু আয়, মোট উৎপাদন, শিল্প উন্নয়ন, সকল নাগরিকের জীবনযাত্রার মান ইত্যাদি। তাই এসব বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে বর্তমানে যে দেশগুলো ধনীর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। নিম্নলিখিত আলোচনায় সেই দেশগুলির সাথে পরিচয় করিয়ে দেব।
এবং বর্তমানে যেসব দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আছে তাদের তালিকা নিচে দেওয়া হল।
১. -লাক্সেমবার্গ
পশ্চিম ইউরোপের ছোট্ট দেশ লুক্সেমবার্গ এই তালিকার শীর্ষে। এই দেশটি বেলজিয়াম, জার্মানি এবং ফ্রান্সের সাথে তার সীমানা ভাগ করে নিয়েছে। লাক্সেমবার্গিশ এই দেশের জাতীয় ভাষা। ইউরোপের ক্ষুদ্রতম দেশগুলির মধ্যে একটি, এটি মাথাপিছু জিডিপি দ্বারা বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশ। এই দেশে একটি উচ্চ দক্ষ এবং শিক্ষিত জনশক্তি আছে, বর্তমানে ধনী দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে লুক্সেমবার্গ। এর বর্তমান মাথাপিছু জিডিপি প্রায় $১৪১,৫৯০ ।
২. -সিঙ্গাপুর
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশের কথা বলা হবে, কিন্তু কিভাবে সিঙ্গাপুরের নাম উঠে আসবেনা টা কি হয়। বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী দেশ সিঙ্গাপুর। এশিয়ার দেশ সিঙ্গাপুরের অত্যন্ত উন্নত মুক্তবাজার অর্থনীতি, ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ এবং নিম্ন স্তরের দুর্নীতির দেশ। ১৯৬৫ সালে স্বাধীনতার পর থেকে, দেশটি শক্তিশালী আর্থিক সম্পদ তৈরি করতে ট্যাক্স ইনসেনটিভের স্মার্ট নীতিগুলি ব্যবহার করে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এবং প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছে। দেশের বর্তমান মাথাপিছু জিডিপি প্রায় ৯৭ হাজার ৫৭ ডলার।
৩. -আয়ারল্যান্ড
বর্তমানে আয়ারল্যান্ড সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিক থেকে ধনী দেশের তালিকায় নাম লেখাতে সক্ষম হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হল যখন কোভিড-১৯ মহামারী চলছিল। পুরো ইউরোপ তখন থেমে গেলেও। আয়ারল্যান্ডের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল সর্বোচ্চ। আর আয়ারল্যান্ডের মাথাপিছু জিডিপি ৯৪ হাজার ৩৯২ ডলার। বর্তমানে এদেশের সরকার শিক্ষা খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। দেশের উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে এদেশে উচ্চশিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কর্মী ও দেশের সার্বিক উন্নয়নের চেষ্টা করা হচ্ছে।
০৪ -কাতার
২০২২ সালে ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক কাতার বিশ্বের চতুর্থ ধনী দেশ।দীর্ঘদিন ধরে ধনী দেশের তালিকায় জাগাইয়া দখল করে রাখা দেশটির নাম কাতার। মাথাপিছু জিডিপির পরিমাণ ৯৩ হাজার ৫০৮ ডলার। তবে এদেশে স্থায়ী নাগরিকের চেয়ে অভিবাসীর সংখ্যাই বেশি। কিন্তু তারপরও কাতার আজ বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ।
০৫ -সুইজারল্যান্ড
আমরা সবাই জানি যে সুইজারল্যান্ড হোয়াইট চকলেটের দেশ। অনেকের কাছে সুইজারল্যান্ড মানেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ। আর সে কারণে বিশ্বের প্রায় বহু পর্যটক ভ্রমণের জন্য সুইজারল্যান্ডে ছুটে আসেন। আর বর্তমান সময়ে ধনী দেশের তালিকায় জায়গা করে নিতে পেরেছে সুইজারল্যান্ড নামের এই দেশটি। মাথাপিছু জিডিপির পরিমাণ ৭২ হাজার ৮৭৪ বিলিয়ন ডলার।
আরও পড়ুন
যুদ্ধের প্রতিবেদন করার জন্য পুলিৎজার পুরস্কার জিতেছে এপি-নিউইয়র্ক টাইমস
চাঁদে অক্সিজেন সংগ্রহ করার ঘোষণা নাসার
৬. – নরওয়ে
মাথাপিছু জিডিপি প্রায় ৬৫ হাজার ৮০০ ডলার নিয়ে দেশটি ধনী দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। সেই দেশের নাম নরওয়ে। কারণ, ২০১২ সাল থেকে সারা বিশ্বে জ্বালানির দাম বেড়েছে। এরপর থেকে নরওয়ের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হচ্ছে। আর এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এতটাই বেড়েছে যে বর্তমানে নরওয়ে বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ।
৭. সংযুক্ত আরব আমিরাত
এই দেশের নৃশংস মরুভূমি, অতি-আধুনিক স্কাইলাইন সর্বদা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষকে আকৃষ্ট করেছে। মরুভূমির এই ছোট্ট দেশটি বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ। দেশটির উচ্চ জিডিপি তার তেলের মজুদ, পর্যটন এবং বৈচিত্র্যময় অর্থনীতির কারণে। সংযুক্ত আরব আমিরাত কোম্পানি এবং ব্যক্তিদের অনেক ট্যাক্স সুবিধা প্রদান করে। উদাহরণস্বরূপ, এখানে নাগরিকদের কোন আয়কর বা কর্পোরেট ট্যাক্স নেই এবং ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর মাত্র ৫ শতাংশ, যে কারণে এখানে ব্যবসা করতে অতিরিক্ত কর দিতে হয় না। সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশ্বের শীর্ষ ১০ টি ধনী দেশের মধ্যে সপ্তম স্থানে রয়েছে।
৮. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তারপর থেকে এই দেশ আগের মতোই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। যদিও দেশটির উচ্চ জিডিপি রয়েছে, মাথাপিছু জিডিপি-এর নিরিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তালিকায় অনেকটাই নিচে, কারণ দেশটি কাতার বা লুক্সেমবার্গের মতো দেশগুলির তুলনায় অনেক বড়। এই দেশের সম্পদের বেশিরভাগই আসে প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন কয়লা, গ্যাস, তেল, কাঠ ইত্যাদি থেকে। এই দেশে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত সামরিক সরঞ্জাম ও বাহিনী রয়েছে, সবচেয়ে উন্নত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।
৯. ব্রুনাই দারুসসালাম
এই দেশটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত একটি ছোট দেশ। এই দেশটির আয়তন ছোট হওয়া সত্ত্বেও, এটি তেল, গ্যাস ইত্যাদির মতো প্রাকৃতিক সম্পদের উপর ভিত্তি করে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলির মধ্যে নামকরণ করা হয়েছে। এখানকার নাগরিকদের সরকার কর্তৃক উচ্চ বেতন, সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য এবং বাসস্থান উভয়ই দেওয়া হয়। . যে কারণে এখানকার জীবনযাত্রার মান অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ভালো।
১০. সান মারিনো
এই দেশটি একটি ছোট দেশ। ইতালীয় উপদ্বীপের কাছে অবস্থিত এই দেশটি অর্থনৈতিকভাবে উন্নত। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যাংক এদেশে তাদের ব্যাংক স্থাপন করেছে, যার ফলে দেশটি আন্তর্জাতিক ব্যবসার দিক থেকে অনেক উঁচুতে অবস্থান করছে। অর্থনৈতিকভাবে, দেশটি পর্যটনের উপর বেশি জোর দেয়। দেশের সমৃদ্ধিশীল পর্যটন শিল্প প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটকদের আকর্ষণ করে। স্বল্প জনসংখ্যার জন্য, এদেশের সরকার তার নাগরিকদের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা, উচ্চ শিক্ষা এবং সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে সক্ষম।