ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি
ইলেকট্রনিক বর্জ্য বা ই-বর্জ্য (ইংরেজি: Electronic waste or E-waste) পরিত্যক্ত বৈদ্যুতিক বা ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি বা পরিত্যক্ত যন্ত্রপাতিকে বোঝায়। এগুলি প্রধানত গ্রাহকের বাড়িতে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক এবং ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, যেমন রেফ্রিজারেটর, ক্যামেরা, মাইক্রোওয়েভ, কাপড় ধোয়ার এবং ড্রায়ার, টেলিভিশন, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন ইত্যাদি। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে অনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনা এবং ইলেকট্রনিক বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে হতে পারে মানব স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ দূষণ।
CPU বা কম্পিউটারের সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিটের মতো কিছু ইলেকট্রনিক উপাদানে সীসা, ক্যাডমিয়াম, বেরিলিয়াম, ক্রোমিয়াম ইত্যাদির মতো ক্ষতিকারক পদার্থ থাকতে পারে। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জড়িত কর্মীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেশি। পুনর্ব্যবহার প্রক্রিয়া চলাকালীন শ্রমিকরা যাতে ভারী ধাতুর সংস্পর্শে না আসে তা নিশ্চিত করার জন্য চরম যত্ন নেওয়া উচিত।
দেশে প্রতি বছর ৩০ লাখ মেট্রিক টন ই-বর্জ্য তৈরি হয়। যার মধ্যে১০.৫ টন বর্জ্যই- শুধুমাত্র স্মার্ট ডিভাইসের মাধ্যমে তৈরি হয়। অন্তত দুই লাখ ৯৬ হাজার
ইউনিট ভাঙা টেলিভিশন থেকে১.৭ লাখ টন ই-বর্জ্য উৎপন্ন হয়। জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প থেকে আড়াই মিলিয়ন টনের বেশি আসছে। উদ্বেগজনকভাবে, এই বর্জ্য প্রতি বছর ৩০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। হিসেব বলছে, ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ কোটি কোটি টন ই-বর্জ্যের বর্জ্যভূমিতে পরিণত হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক ১ বিলিয়ন স্মার্ট ডিভাইস ইউনিট উত্পাদিত হবে। কম্পিউটার পিসিবি ভিত্তিক ধাতব রূপান্তর ব্যবসায় প্রসারিত হবে। যা ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। সংকট নিয়ন্ত্রণে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অন্যান্য দেশ থেকে দেশে প্রবেশ করা সংস্কারকৃত ইলেকট্রনিক্স পণ্য আমদানি বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরামের (বিআইজেএফ) উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘ই-বর্জ্যের কার্বন ঝুঁকিতে বাংলাদেশ: কারণ ও পথ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এ আশঙ্কার কথা জানান।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (CUB) স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিন ড. সৈয়দ আখতার হোসেন।
তিনি বলেন, ‘ই-বর্জ্য নিয়ে কোনো নির্দেশিকা নেই। অভিভাবকহীন এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য, প্রতিটি পণ্যের সাথে একটি ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতি তৈরি করতে হবে। ১৪ অক্টোবর থেকে, আমরা বিআইজেএফ-এর ব্যানারে সবার সাথে সারা দেশে আন্তর্জাতিক ই-বর্জ্য সচেতনতা দিবস উদযাপন করব। তাছাড়া, আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি হ্যাকাথন করতে চাই।
স্বাগত বক্তব্যে ই-বর্জ্যের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি এর ভয়াবহতা থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে বিআইজেএফের উদ্যোগ আগামীতে আরও জোরদার হবে বলে জানান সাংবাদিক সংগঠনের সভাপতি নাজনীন নাহার।
বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সময়ের সাথে খুবই প্রাসঙ্গিক। এ জন্য সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি ব্যবস্থাপনায় সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ থাকতে হবে। আমি আশা করি এটি বাস্তবায়নে বিআইজেএফ একটি চাপ প্রয়োগকারী গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে।
আরও খবর
দৃষ্টিহীনদের দৃষ্টি ফিরাতে ‘আশার বাণী’
মোবাইলে দেখায় ব্যস্ত বানরদল!
গবেষকরা বলেন, আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি এই বর্জ্য পরিবেশের উপর কি প্রভাব ফেলে? ই-বর্জ্যের ব্যাপক ডাম্পিংয়ের কারণে সীসা, পারদ, আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম ও বেরিলিয়ামসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান মাটি ও পানিতে মিশে যাচ্ছে। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশ দূষণ বাড়ছে। মাটিতে মিশে এসব ক্ষতিকর উপাদান সবুজ গাছপালা দিয়ে মানবদেহে প্রবেশ করে। এতে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তাছাড়া চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, ই-বর্জ্যের ক্ষতিকর উপাদানগুলো মানুষের স্নায়ুতন্ত্র, লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুস, মস্তিষ্ক, ত্বক ইত্যাদির জন্য খুবই ক্ষতিকর। এটি ভবিষ্যতে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের পাশাপাশি জলবায়ু সংকটের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করবে।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে ই-বর্জ্য একটি বড় সমস্যা হয়ে উঠছে, যা এখনই সমাধান করা দরকার। এই ক্ষেত্রে, প্রথম যে জিনিসটি প্রয়োজন তা হল ই-বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণ নির্ধারণের জন্য একটি ব্যবস্থাপনা। তাহলে এগুলোর জন্য স্থায়ী বর্জ্য ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য কারখানা স্থাপন করতে হবে।
সেখানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সার্ক সিসিআই (বাংলাদেশ) নির্বাহী কমিটির সদস্য শাফকাত হায়দার। বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের অধ্যাপক ড. পরিচালক রওশন মমতাজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড.লাফিফা জামাল।
বাংলাদেশ কম্পিউটার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি শহীদ উল মুনির,সহ আরও অনেকেই।
সভায় বক্তারা বাংলাদেশকে ই-বর্জ্য ঝুঁকি থেকে বিশ্বের কাছে স্মার্ট হিসেবে তুলে ধরতে সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্বে বিলম্ব না করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাব্বিন হাসান বক্তাদের পরামর্শ সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরে এনে ভবিষ্যতে স্মার্ট সাংবাদিকতায় বিআইজেএফ ভূমিকা রাখবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
1 Comment