পাঁচ মাসে ৫০ ইমিগ্রেশন বিচারক বরখাস্ত: পাল্টা আইনী লড়াইয়ের প্রস্তুতি
নিজস্ব প্রতিবেদক

- বিচারকদের মধ্যে উদ্বেগ—অস্থিরতা
- চাপ বৃদ্ধিতে আরো বিচারকদের স্বেচ্ছায় অব্যাহতি
- ইমিগ্রেশন মামলার জট প্রকট হওয়ার আশঙ্কা
সীমিত ইমেইল নোটিশ বাতার্য় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অভিবাসন আদালতের ৫০ জনের মতো বিচারকদের বরখাস্তের ঘটনায় বিচারকদের মধ্যে উদ্বেগ—অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিভিন্ন স্টেটের ইমিগ্রেশন কোর্টের বিচারক হিসেবে— কারো দশ বছর, কারো এক যুগ, আবার কারো দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে অভিবাসন প্রত্যাশীদের বিচারিক দায়িত্ব দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন জর্জ পাপাস, জেনিফার পেইটন, ইলা ডেইস এবং কারলা এসপিনোজার। তাদের অধীনে হাজার হাজার মামলার শুনানী রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে তিন লাইনের ইমেইল বার্তায় তাদেরকে বরখাস্তের নোটিশ পাঠানো হয় ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে। বিচার বিভাগের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রথমে নীরব ছিলেন বরখাস্ত হওয়া ইমিগ্রেশন বিচারকরা। এবার সেই নীরবতা ভেঙে তারা মুখ খুলতে শুরু করেছেন এবং একাট্টা হয়ে এর বিরুদ্ধে আইনী লড়াইয়ের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।
সম্প্রতি সিবিএস নিউজ, এপি, এনবিসি নিউজের কাছে মুখ খুলেছেন জুলাই মাসে বরখাস্ত হওয়া ইমিগ্রেশন কোর্টের বিচারক জর্জ পাপাস, জেনিফার পেইটন, ইলা ডেইস এবং কারলা এসপিনোজার মতো একাধিক বিচারক।
তারা অভিযোগ করেন, ‘‘বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ ও বিচারকদের বরখাস্ত এটা আইন ও বিচারপ্রক্রিয়ার ওপর সরাসরি আক্রমণ।” এমন বরখাস্তের বিরুদ্ধে আর নীরব থাকবেন না এবং এবার আইনী প্রক্রিয়ায় চ্যালেঞ্জ করবেন বলেও জানান তারা।
সিবিএস নিউজ ও দ্য অ্যাসোসিয়েট প্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইমিগ্রেশন ক্র্যাকডাউনে কিংবা অভিবাসী বিরোধী নীতিতে চাপ প্রয়োগে বিচারকদের টার্গেট করা হচ্ছে। অভিবাসীদের বিতাড়ন গতি বৃদ্ধিতে ইমিগ্রেশন মামলাগুলো দ্রুত মুশন টু ডিসমিশ করার জন্য চাপ রয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের। এর ফলে বিচার বিভাগে অস্থিরতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে গত ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণ করার পর জুলাই মাস পর্যন্ত অন্তত ৫০ জন ইমিগ্রেশন বিচারককে বরাখাস্ত করা হয়েছে। জুলাই মাসে প্রায় ১৭ জন বিচারককে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়াও ৫৬ জন বদলী কিংবা চাপে পড়ে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়েছেন। বরখাস্ত ও অব্যাহতি নেয়ার পর সারাদেশে মাত্র ৬০০ জন ইমিগ্রেশন বিচারক বর্তমানে দায়িত্বে রয়েছেন। বরখাস্ত একেকজনের কাছে ২ থেকে ৬ হাজারের বেশি মামলা বিচারধীন ছিলো। এরকম বরখাস্ত ও চাপ প্রয়োগের কারণে আরো বিচারক বরখাস্ত এবং স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিলে বিচারক সংকটে বিচার প্রক্রিয়ায় মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এমনিতেই যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন কোর্টে ৩৬ লাখেরও বেশি মামলা পেন্ডিং অবস্থায় আছে।
বিচারক সংকটে এ মামলাগুলোর জট আরো প্রকট হবে এবং মামলাধীন বিষয় নিষ্পত্তি না করে অভিবাসীদের বিতাড়ন এদেশের আইনের শাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে বলে বরখাস্ত হওয়া বিচারক ও বিশ্লেষকদের আশঙ্কা।
বোস্টনে দুই বছরে দুই হাজারের বেশি ইমিগ্রেশন মামলা নিষ্পত্তি করেছেন জর্জ পাপাস। তিনি জানান, “এমন বরখাস্ত স্বেচ্ছাচারী, এটা আইন ও বিচারপ্রক্রিয়ার ওপর সরাসরি আক্রমণ।”
পেইটনের অভিজ্ঞতাও ভিন্ন নয়। নয় বছর ধরে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন শিকাগোর অভিবাসন আদালতে। ছিলেন প্রশিক্ষক, তদারককারী, বিচারক। আর সেই পেইটন ছুটির দিনে এক ইমেইল পান—মাত্র তিন লাইনের। কোনো কারণ নেই, কোনো ব্যাখ্যা নেই।
তার অধীনেই কাজ করতেন কারলা এসপিনোজা, যিনি মাত্র এক বছরে এক হাজারের বেশি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। গড় বিচারকের দ্বিগুণ। সেই এসপিনোজাও বলছেন, আদালতের ভেতরে সবসময় একটা চাপ, এক ধরনের ভয় কাজ করত। কেউ বলত না, কিন্তু বোঝা যেত।
পাপাস ও পেইটন দাবি করছেন তাদের রায়ের ওপরও চাপ দেওয়া হতো। বলা হতো কীভাবে রায় দিতে হবে। কখনো নির্দেশ আসত, “মোশন টু ডিসমিস” মঞ্জুর করো। এমন সময়, যখন আইসিই আদালতের আশেপাশে ঘুরছে, মামলা খারিজ হলেই অভিযুক্তকে তখনই ধরে ফেরত পাঠানোর ঝুঁকি তৈরি হতো।
সানফ্রান্সিসকোতে আট বছর ধরে ইমিগ্রেশন কোর্টে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ইলা ডেইস। ডেইস বলেন, “এটা কেন হলো, আমি জানি না। তবে এটুকু জানি, কোনো অনৈতিকতা, অদক্ষতা বা ব্যর্থতার কারণে আমাকে সরানো হয়নি।”
তাদের মতো এরকম ছোট্ট ইমেইল বার্তায় আরো একাধিক ইমিগ্রেশন বিচারককে বরখাস্তের নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক এর আরো খবর

রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত আদালত গঠন: আইএসপিআর

ভারত ‘আমেরিকার শতভাগ মিত্র নয়’: মার্কো রুবিও

দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন শুল্কহার পাকিস্তানের, ট্রাম্পকে শাহবাজের ‘গভীর কৃতজ্ঞতা’

ইসরাইলের সম্মতি ছাড়া ফিলিস্তিন রাষ্ট্র সম্ভব নয় : মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

জামায়াতের আমীর হার্টে ৩ টি নয়, ৫ টি ব্লক
