প্রতিভাবান বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন সুযোগ
মেধাবীদের টানতে যুক্তরাজ্যের বিশেষ প্রকল্প, বাংলাদেশীদের উজ্জল সম্ভাবনা: কিভাবে করতে হবে আবেদন

যুক্তরাজ্যের একটি নতুন ঘোষিত শিক্ষা প্রকল্প প্রতিভাবান বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন সুযোগের দ্বার উন্মোচন করেছে। বিশ্বের মেধাবী গবেষক, উদ্ভাবক, প্রকৌশলী এবং সৃজনশীল পেশাদারদের আকৃষ্ট করার জন্য যুক্তরাজ্য ৫৪ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি গ্লোবাল ট্যালেন্ট ফান্ড এবং একটি নিবেদিত প্রাণ গ্লোবাল ট্যালেন্ট টাস্কফোর্স (Global Talent Fund and a dedicated Global Talent Taskforce) চালু করেছে। বিজ্ঞান, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি বিভাগ (Department for Science, Innovation and Technology-DSIT) কর্তৃক উন্মোচিত।
এই কৌশলগত উদ্যোগটি বাংলাদেশ সহ নেতৃস্থানীয় গবেষক, উদ্যোক্তা, প্রকৌশলী এবং শিল্পীদের স্বাগত জানানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে, যাতে বিশ্বব্যাপী উদ্ভাবনের কেন্দ্র হিসেবে ব্রিটেনের অবস্থান শক্তিশালী করা যায় এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা যায়।
২০২৫ সাল থেকে শুরু করে, এই উল্লেখযোগ্য তহবিল পাঁচ বছরের জন্য স্থানান্তর খরচ এবং গবেষণা খরচ কভার করবে, যার বরাদ্দ ইউকে রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন (The UK’s leading universities and research institutions-UKRI) দ্বারা পরিচালিত হবে। যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলি এমন ব্যক্তিদের সনাক্তকরণ এবং লক্ষ্যবস্তুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে যাদের দক্ষতা দেশের নতুন শিল্প কৌশলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যার লক্ষ্য বিস্তৃত অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ। টাস্কফোর্স সরাসরি প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার এবং চ্যান্সেলর র্যাচেল রিভসের কাছে রিপোর্ট করবে, এর গুরুত্ব তুলে ধরবে।
এই উদ্যোগের লক্ষ্য হল ব্রিটেনকে একটি বিশ্বব্যাপী উদ্ভাবনের কেন্দ্রে পরিণত করা, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে। এই প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের উচ্চ দক্ষ ব্যক্তিরা যুক্তরাজ্যে বসবাস এবং কাজ করতে পারবেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী (DSIT) পিটার কাইল বলেন, “প্রতিভার কোনও ভৌগোলিক সীমানা নেই। কিন্তু যুক্তরাজ্য এমন একটি বিরল স্থান যেখানে বিশ্বমানের ধারণা বিকাশের জন্য আমাদের অবকাঠামো, প্রতিভা এবং আন্তর্জাতিক সংযোগ রয়েছে।”
বাংলাদেশিদের জন্য দুই-পর্যায়ের আবেদন প্রক্রিয়া
১.প্রমাণপত্র=এন্ডোর্সমেন্ট (সার্টিফিকেশন) প্রাপ্তি:
আবেদনকারীকে প্রমাণ করতে হবে যে, তার ক্ষেত্রে অসাধারণ মেধা (এক্সেপশনাল ট্যালেন্ট) বা অনন্য সম্ভাবনাময় (এক্সেপশনাল প্রমিজ)। এই পর্যায়ে, তাকে নির্দিষ্ট যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতি সংস্থা থেকে মূল্যায়ন পেতে হবে।
এই ক্ষেত্রে,
- বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও মেডিসিন বিভাগের জন্য, তাকে রয়েল সোসাইটি, রয়েল একাডেমি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্রিটিশ একাডেমি বা ইউকেআরআই থেকে সার্টিফিকেশন পেতে হবে।
- শিল্প ও সংস্কৃতির জন্য, তাকে আর্টস কাউন্সিল ইংল্যান্ড, বিএফআই, আরআইবিএ, ব্রিটিশ ফ্যাশন কাউন্সিল ইত্যাদি থেকে সার্টিফিকেশন পেতে হবে
- এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির জন্য, তাকে টেক নেশন থেকে সার্টিফিকেশন পেতে হবে।
- প্রমাণের জন্য, আবেদনকারীকে একটি আপডেট করা সিভি, কমপক্ষে তিনটি সুপারিশপত্র (একটি যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক হতে পারে) এবং কাজের জাতীয়/আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রমাণ প্রদান করতে হবে।
২. ভিসা আবেদন:
- ভিসা আবেদন বা এন্ডোর্সমেন্ট অনুমোদন পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে করতে হবে। আবেদন করার জন্য, আপনার একটি বৈধ পাসপোর্ট, অনুমোদনপত্র, যক্ষ্মা পরীক্ষার সার্টিফিকেট (টিবি পরীক্ষা) (বাংলাদেশ থেকে), পর্যাপ্ত আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ এবং অভিবাসন স্বাস্থ্য সারচার্জ এবং আবেদন ফি প্রয়োজন হবে।
- আবেদনপত্রটি UKVI ওয়েবসাইটে অনলাইনে জমা দিতে হবে। তারপর, বায়োমেট্রিক এবং নথি জমা দিতে হবে ঢাকার UK ভিসা আবেদন কেন্দ্রে (অথবা সিলেট, চট্টগ্রাম)। ভিসা অনুমোদনের সিদ্ধান্ত সাধারণত ৩ সপ্তাহের মধ্যে আসে।
প্রতিযোগিতামূলক সুযোগ
এই ভিসার বড় সুবিধা হল ইংরেজি ভাষা পরীক্ষা দেওয়ার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। তবে, ইংরেজিতে দক্ষতা থাকা যুক্তরাজ্যে বসবাস এবং কাজ করার জন্য উপকারী। এছাড়াও, আবেদনকারীর সঙ্গী এবং সন্তানদের ভিসায় অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ রয়েছে।
তবে, এটি একটি প্রতিযোগিতামূলক এবং কঠিন প্রক্রিয়া, যেখানে প্রতিভার প্রমাণ এবং উপস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ। অতএব, একজন অভিজ্ঞ অভিবাসন বিশেষজ্ঞের সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলি ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাপী প্রতিভা আকর্ষণে সক্রিয়। বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তরাজ্যের প্রধান নির্বাহী ভিভিয়ান স্টার্ন বলেছেন যে, তহবিল এবং টাস্কফোর্স ভবিষ্যতের প্রযুক্তি তৈরি এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রবৃদ্ধি চালনাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ভূমিকা আরও বাড়িয়ে তুলবে।
ব্রিটিশ সরকার আশা করে যে, এই উদ্যোগটি উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করবে এবং নেট অভিবাসনকে ভারসাম্যপূর্ণ করবে।
ব্রিটেনের নতুন বিনিয়োগ এবং অভিবাসন কৌশল প্রতিভাবান বাংলাদেশিদের জন্য দুর্দান্ত সুযোগ প্রদান করবে। যদি আপনার সৃজনশীলতা, গবেষণা এবং প্রযুক্তি-ভিত্তিক দক্ষতা থাকে, তাহলে গ্লোবাল ট্যালেন্ট ভিসা যুক্তরাজ্যে পেশাদার এবং সামাজিক অগ্রগতির একটি নতুন প্রবেশদ্বার হতে পারে।
আরও পড়তে- ট্রান্সজেন্ডাররা নয়, শুধু জন্মগত নারীরাই নারী: যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট
বাংলাদেশ এর আরো খবর

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা: আজ বসছে সাড়ে ১২ লাখ শিক্ষার্থী

আন্তর্জাতিক মানের সহজ ও নিরাপদ আর্থিক লেনদেন / বাংলাদেশে চালু হলো গুগল পে

বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট-২০২৫-২৬ / ৭.৯০ লাখ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন, বাতিল হলো 'কালো টাকা সাদা' করার সুযোগ

চাঁদের মাটিতে পা রাখতে যাচ্ছেন প্রথম বাংলাদেশি তরুণী ঢাকার রুথবা ইয়াসমিন

নতুন বাংলাদেশের প্রত্যয়ে / জুলাইতে হবে জনাকাঙ্খিত ‘জুলাই সনদ’
