বেশি সন্তান নারীর মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের সহায়ক

জীবনকে টেনশন ফ্রি আর ঝামেলা মুক্ত রাখতে গিয়ে সন্তান গ্রহণ না করায় চায়না সহ অনেক দেশেই এখন প্রজনন অনুর্বরতার প্রান্তিকে পৌঁছে গেছে। ঠিক সেই মুহূর্তে সম্প্রতি নতুন গবেষণায় এমন আশ্চর্যজনক তথ্য বেরিয়ে এসেছে যা সকলের কাছেই অবাক করার মতো। "দুটি সন্তান ধারণ নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে"।
চীনের সুচাউ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা দল যুক্তরাজ্যের ৫৫,০০০ জনেরও বেশি মহিলার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছে যে, সন্তান ধারণকারী মহিলাদের মধ্যে সন্তানহীন মহিলাদের তুলনায় বাইপোলার ডিসঅর্ডার (মেজাজ বা আচরণ সম্পর্কিত ব্যাধি যা একজন ব্যক্তির মেজাজ এবং আচরণে গুরুতর পরিবর্তন ঘটায়) এবং বিষণ্নতার ঝুঁকি ৩০ শতাংশ কম থাকে।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, শূন্য থেকে দুটিতে শিশুর সংখ্যা বৃদ্ধি করলে মানসিক অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। তবে, দুটি সন্তানের পরে এই প্রভাব স্থিতিশীল হয়। গবেষকদের মতে, দুটি সন্তানের জন্মদানকারী মহিলাদের মধ্যে বাইপোলার ডিসঅর্ডার এবং মেজর ডিপ্রেশনের ঝুঁকি সবচেয়ে কম থাকে।
গবেষণাটি জার্নাল অফ অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডারে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে যে, একটি জীবিত সন্তানের জন্ম দেওয়া মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য একটি অনন্য প্রতিরক্ষামূলক কারণ হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে, দুটি জীবিত সন্তানের জন্ম দেওয়া মহিলাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে উপকারী হতে পারে।
গবেষণার গুরুত্ব
বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান প্রজনন হার এবং মানসিক ব্যাধির প্রকোপের প্রেক্ষাপটে এই গবেষণাটি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। বাইপোলার ডিসঅর্ডার যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ২ শতাংশকে প্রভাবিত করে। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী মানসিক অবস্থা যেখানে মেজাজের পরিবর্তন বা আচরণগত পরিবর্তন ঘটে, যা দৈনন্দিন জীবনকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।
অন্যদিকে, মেজর ডিপ্রেশন বা তীব্র বিষণ্ণতা হল একটি দীর্ঘস্থায়ী মানসিক অবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তি পূর্বে উপভোগ্য কার্যকলাপে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন এবং দীর্ঘ সময় ধরে বিষণ্ণতায় ভোগেন।
কমপক্ষে দুটি সন্তান মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কেন ভালো?
গবেষকদের মতে, এর পিছনে বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে:
ডোপামিন রিওয়ার্ড ব্যবস্থা:
মা এবং শিশুর মধ্যে বন্ধনের বিকাশ এবং নবজাতকের যত্ন নেওয়া মায়ের ডোপামিন রিওয়ার্ড সিস্টেমকে উদ্দীপিত করে, যা মানসিক তৃপ্তি নিয়ে আসে এবং বিষণ্ণতা থেকে রক্ষা করে।
হরমোনের পরিবর্তন:
গর্ভাবস্থায়, মহিলাদের ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং মেজাজের ব্যাধি থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।
পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া:
দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের পর মাতৃত্বের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পায়, যার ফলে প্রথম সন্তানের তুলনায় কম মানসিক চ্যালেঞ্জ দেখা দেয়। এটি উদ্বেগ এবং চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং বাইপোলার ডিসঅর্ডারের ঝুঁকি কমায়।
গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে এই ফলাফলগুলি ভবিষ্যতের মানসিক স্বাস্থ্য এবং প্রজনন নীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
গবেষকরা আরও বলেন যে যখন একজন মহিলা তার দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দেন, তখন তিনি মাতৃত্বের সাথে আরও ভালভাবে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হন। দ্বিতীয় সন্তানের জন্য মানসিক চ্যালেঞ্জ প্রথম সন্তানের তুলনায় কম থাকে। অতএব, দুটি সন্তানের পরে, মহিলারা তাদের দৈনন্দিন রুটিনের পরিবর্তনের সাথে আরও ভালভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন, যা কিছুটা উদ্বেগ এবং চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং ফলস্বরূপ, বাইপোলার ডিসঅর্ডারের ঝুঁকি হ্রাস করে।
লাইফ স্টাইল এর আরো খবর

বুক ক্যাফেগুলো কি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে নতুন প্রজন্মের কাছে

বইয়ের তাক কেনার আগে যা জেনে রাখা ভালো
