আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা আর দেউলিয়াত্ব এখন স্পষ্ট
আওয়ামীলীগ যে সাংগঠনিকভাবে কতটা দুর্বল এবং দেউলীয়াত্ব বরণ করেছে, এবং তাদের জনপ্রিয়তা কতটা তলানিতে পৌঁছেছে এটা গত এমপি ইলেকশনের সময় বাস্তব সমীকরনেই মানুষ জেনে গিয়েছে। এরপরও কোটা আন্দোলনে ছাত্রদের নির্মূলে তাদের যে সাংগঠনিক অবস্থান আর কারফিও জারিতেও বুঝা গেছে তারা কতটা দুর্বল এবং দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। আর বাংলাদেশ সহ তামাম জাহানের মানবতার বদ-দোয়াতো তাদের জন্য আছেই। এই নিবন্ধে থাকছে সেই আলোচনার কিঞ্চিত।
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ছাত্র কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতা মোকাবিলা ও প্রাণহানি রোধে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, কোটা সংস্কার আন্দোলন না হলে ঐতিহাসিক এই দলটির সাংগঠনিক দুর্বলতা এমনভাবে তলানিতে পৌঁছেছে সেটা অনুভূত হতো না। প্রশ্ন উঠেছে, ক্ষমতাসীন দলের দুর্বলতার কারণ কী?
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় দলের নেতা-কর্মীরা গ্রুপিংয়ে জড়িয়ে পড়েছেন। দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত একই অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে মনে হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী দলটিতে পতঙ্গ ধরেছে।
৭ জানুয়ারি, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পাশাপাশি দলীয় প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেয়। আগামী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকা তুলে দেয়া হয়। ফলে জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়া, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না পাওয়ায় স্থানীয় এমপি-কর্মীরা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটে কমিটি না দেওয়া। সম্মেলন হলেও কমিটি না দেওয়ায় নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি। অর্থের বিনিময়ে কমিটি দেওয়া হয়। ত্যাগী নেতাদের কদর নেই। ফলে আওয়ামী লীগের এই ফলাফলের দায় কেউ নিতে চায় না। আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতাও একই কথা বলছেন।
তবে তারা বলেন, ছাত্র কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে যেভাবে ঢাকাসহ সারাদেশে তাণ্ডব চালিয়েছে, তা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণ। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় দলটির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি অনুধাবন করতে পেরেছে দলটি। এরই মধ্যে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বসেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কোথায় দুর্বলতা আছে তা খুঁজে বের করতে । দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দূরত্ব কেন বেড়েছে তা খুঁজে বের করার কাজ চলছে। দলটিরর মধ্যে দ্বন্দ্ব তীব্রতর হয়েছে এবং কেউ আদেশ মানে না, গত বৃহস্পতিবারের বৈঠকে প্রমাণিত হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতা ও নৈরাজ্যের প্রেক্ষাপটে দলের কৌশল নির্ধারণে গত বৃহস্পতিবার দফায় দফায় বৈঠক করে আওয়ামী লীগ। এ বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সামনে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মইনুল হোসেন খান নিখিল এমপি ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচির মধ্যে হাতাহাতি হয়। এমনকি তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কিও হয়েছিল। এ সময় সহিংসতা ঠেকাতে দলীয় সংসদ সদস্য ও নেতাদের সমর্থন না দিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তৃণমূল নেতারা। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারাও ।
এ সময় ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য মইনুল হোসেন খান নিখিল অভিযোগ করেন, তার এলাকায় সন্ত্রাস ও সহিংসতা প্রতিরোধে দলের কোনো নেতাকে খুঁজে পাননি তিনি। তিনি কয়েকজন নেতার নামও উল্লেখ করেন। ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক মান্নান কচি তার কথার তীব্র প্রতিবাদ জানালে দুই নেতার মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে কচি নিখিলকে ‘বেয়াদব ‘ আখ্যা দিয়ে ‘মাস্তানের মতো আচরণ’ করতে নিষেধ করেন। এ নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফসহ অন্য নেতারা তাদের শান্ত করেন। এই বৈঠকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সন্ত্রাস ও সহিংসতা প্রতিরোধে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে না থাকার অভিযোগে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ২৭টি ইউনিট কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়।
প্রায় ৫ মিলিয়ন শিক্ষার্থীর মধ্যে হতাশা কাজ করে। দেশে দুর্নীতি ও লুটপাট, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় তারা চাকরি পাবে কি পাবে না? এ থেকেই কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। ২০১৮ সালের আন্দোলনেও তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু সরকার বা আওয়ামী লীগ কেউই বুঝতে পারেনি যে এই আন্দোলন এতদূর এগুতে পারবে।
সরকারের কোনো পূর্ব প্রস্তুতি ছিল না। আর কোনো দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে গ্রুপিং থাকে। কোনো কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে যায়। কেউ কারো হুকুম মানে না। দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা চরমে পৌঁছে যায় । এতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সামলানোর ক্ষমতা হারিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। তাই তারা মোকাবিলা না করে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনকে গুরুত্ব দেন। এখানে আওয়ামী লীগের চরম সাংগঠনিক ঘাটতি রয়েছে। আগে আলোচনা হলে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছত না।
সুশীল সমাজের অনেকেই জানান,আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় থাকার কারণে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দুর্নীতি ও লুটপাট চলছে। যেন দুর্নীতি স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে। ব্যাংক লুটপাট থেকে এমন কোনো সরকারি সংস্থা নেই সেখানে দুর্নীতি নেই। ফলে এখন আর কোনো রাজনৈতিক নেতাকর্মী নেই। সবাই রাজনৈতিক পোশাক পরে দুর্নীতিতে জড়িত। দল বা সংগঠন নিয়ে কেউ ভাবে না।
আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে দেউলিয়া। ছাত্র কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সারাদেশে সহিংসতায় এর প্রমাণ মেলে। এ আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে পারেনি দলের নেতাকর্মীরা। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দলীয় নেতা-কর্মীরা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত।
গত বৃহস্পতিবারও আওয়ামী লীগ নেতারা বৈঠক করেন। তবে সেই বৈঠক ভালোভাবে শেষও হয়নি। সেখানেও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। উত্তেজনা ছিল। এর প্রধান কারণ হলো, কোনো দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে দলের সাংগঠনিক বিষয়গুলো অনেকটা ঢেকে যায়। দলের সঙ্গে নেতাকর্মীদের দূরত্ব বেড়ে যায় । । এই রোগ লুকিয়ে আর কোনো লাভ নেই। এই রোগ এখন নিরাময় করা অনেক কঠিন ।
Read more…