ঢাবিতে কোটাবিরোধী আন্দোলনের নেতাকে হল ছাড়া করার চেষ্টা: হল গেইটে ছাত্রলীগের তালা
চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলমকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল থেকে বহিষ্কারের চেষ্টা করা চ্ছে। তিনি অমর একুশে হলে থাকেন। বৃহস্পতিবার রাতে এই হল শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা তাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে।
সারজিস অমর একুশে হলে থাকেন। বৃহস্পতিবার রাতে এই হল শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা তাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে।
পরে একুশে হলসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য হলের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা তা করতে পারেননি। সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের হস্তক্ষেপের পর তারা সারজিস এর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে সরজিসদের হল থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টার খবর ছড়িয়ে পড়ে। এ খবরে অমর একুশে হলের সামনে বিক্ষোভ শুরু হয়। এতে একুশে হলের পাশাপাশি অন্যান্য হলের শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায় হস্তক্ষেপ করে। এরপর একুশে হলের অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা সরজিসের কাছে ক্ষমা চান। বিক্ষোভ চলাকালে সকাল সোয়া একটার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন একুশে হলের প্রাধ্যক্ষ , তিনি সারজিস হলে থাকবেন বলে আশ্বস্ত করলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শান্ত হয়। কোটা বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী সারজিসের সহযোগীরা তাকে তার হল রুমে নিয়ে যান।
ঘটনার বিষয়ে সারজিস গতকাল মধ্যরাতে সাংবাদিকদের বলেন, তার রুমমেটকে ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে প্রত্যাশী একাধিক নেতা বলেছেন, বৃহস্পতিবারের মধ্যে তাকে হল ত্যাগ করতে হবে। কারণ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক। পরে তিনি সংশ্লিষ্ট শীর্ষ প্রার্থীদের কাছে জানতে চান, সেরকম কিছু বলা হয়েছে কি না। তারা উত্তর দিল ‘হ্যাঁ’। এই উত্তর পেয়ে তিনি রুমে এসে ব্যাগ গুছিয়ে নেন। কারণ সে কোনো ঝামেলা চায়নি। হলের গেটে এসে দেখেন পাঁচ-সাত শতাধিক শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে আছে। তারা তাকে যেতে দেবে না। কারণ, তিনি শিক্ষার্থীদের একটি যৌক্তিক দাবির প্রতিনিধিত্ব করছেন। খবর পেয়ে আশেপাশের হল থেকে শিক্ষার্থীরা ছুটে আসেন।
সারজিস জানায়, একপর্যায়ে ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। জানতে চাওয়া হয়, হল শাখার কোন শীর্ষ পদপ্রত্যাশীরা তাঁর সঙ্গে এই কাজ করেছেন। তাঁকে বলা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। এরপর অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাঁর সঙ্গে দেখা করে ক্ষমা চান। ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে এ ধরনের কোনো নির্দেশনা আসেনি বলে স্বীকার করেন তারা। তাকে হল থেকে বের করে দিয়ে তারা রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চেয়েছিল।
ক্ষমা চাইতে একুশে হলের অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের নাম সাংবাদিকদের জানাতে চাননি সারজিস। ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে কারা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তা তিনি বলেননি।
মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ও শেখ মুজিবুর রহমান হলের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী মধ্যরাতে এইসাংবাদিকদেরকে ফোন করে অভিযোগ করেন যে, তাদেরকে একুশে হলের দিকে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে। এতে কাজ করেছেন হল শাখা ছাত্রলীগের প্রার্থীদের কয়েকজন নেতা।
কোটাবিরোধী আন্দোলনে যেতে ছাত্রলীগের বাধা ও গেইটে তালা:
কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীরা যাতে আন্দোলন করতে না পারে সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি হলের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্যসেন হল ও কবি জসিম উদ্দিন হলের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলেও শিক্ষার্থীদের গেস্টরুমে আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে। পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হলের দিকে মিছিল করে তালা খুলতে বাধ্য হয়।
মাস্টার দা সূর্যসেন হলে গিয়ে দেখা যায়, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের অনুসারীরা, ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক রকিব উল ইসলাম, তৌহিদুজ্জামান অভিসহ একাধিক নেতা শিক্ষার্থীদের হুমকি দিচ্ছেন। জানতে চাইলে রাকিব উল ইসলাম বলেন, সহিংসতা করে দাবি করা ঠিক নয়।
হল থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধুর ক্যান্টিনে শিক্ষার্থীদের নিয়ে অবস্থান করতে দেখা যায়। সেখানে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির সায়ান, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত আসার কথা রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্র বলেন, কোটা প্রথা বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও সমন্বয়ক সারজিস আলমকে হল থেকে বের করে দেওয়ার প্রচেষ্টায় সর্বশেষ ব্যর্থ হয়েছে বর্তমান বাংলাদেশের একমাত্র সোনার ছেলেরা। যাদেরকে আদর করে সবাই বলে ছাত্রলীগ। এবং সেই খবর ছড়িয়ে পড়েছে মেধাবী ছাত্রদের কাছে। হ্যাঁ, শুধুমাত্র কোটা প্রথা উঠিয়ে দিয়ে যদি সঠিকভাবে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেয়া হতো। তাহলে ছাত্রলীগ নামক এই তথাকথিত সংগঠনটির কতজন ছাত্র চাকরি পায় দেখা যেত।
আরও জানুন
কোটা বাতিল আন্দোলনঃ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা