আপাতত বাসায় চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে খালেদা জিয়াকে
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে গুলশানের বাসায় সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে থাকবেন বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডাঃ এজেডএম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, বুধবার বিকেল থেকে তিনি (খালেদা জিয়া) কিছুটা অসুস্থ বোধ করছেন। এ কারণে রোজার দিন ইফতারের পর কয়েকবার ম্যাডামের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন তার মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা। ইতিমধ্যে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। সব মিলিয়ে তাকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা দরকার বলে মনে করেন মেডিকেল বোর্ড। তাই আপাতত তাকে মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে বাড়িতে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।
ডাঃ জাহিদ বলেন, প্রয়োজনে যেকোনো সময় তাকে (বিএনপি চেয়ারপারসন) হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হতে পারে। এখন সে অনেক ভালো বোধ করছে। সেজন্য সাংবাদিকদের মাধ্যমে তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন এবং আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
গত ১৩ মার্চ স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে যান বিএনপি চেয়ারপারসন। এ সময় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির একদিন পর, ১৪ মার্চ স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন।
গত বছরের ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসা শেষে ১১ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন গুলশানে নিজ বাসায় ফেরেন। সে সময় তার পরিবার খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করলেও অনুমতি মেলেনি। এরই প্রেক্ষিতে গত বছরের ২৭ অক্টোবর লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসনের রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয়।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ এক নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর থেকে সরকার তার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে তার মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য এখন স্থিতিশীল
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে এবং এখন স্থিতিশীল রয়েছে। তবে তাকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রেখেছেন চিকিৎসকরা।
বৃহস্পতিবার রাতে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেডএম জাহিদ
বুধবার দুপুরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তিনি অসুস্থ বোধ করেন। এরপর মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা খালেদা জিয়ার বাসায় গিয়ে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন।
বুধবার ইফতারের পর খালেদা জিয়াকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।
তবে জাহিদ হোসেন জানান, বুধবার ইফতারের পর মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা খালেদা জিয়াকে তার বাসভবনে চিকিৎসা দিলে তিনি অনেকটা সুস্থ বোধ করেন। মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা তাকে তার বাসায় সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখেন।
জাহিদ হোসেন উল্লেখ করেন, গত বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের আগের দিনের তুলনায় অনেক উন্নতি হয়েছে এবং স্থিতিশীল অবস্থায় আছেন। ফলে আপাতত তাকে হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
তবে খালেদা জিয়াকে তার বাসভবনে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান জাহিদ হোসেন।
এ সময় তার পরিবার খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করলেও অনুমতি মেলেনিবলে
যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে খালেদা জিয়ার রক্তনালীতে অপারেশন করা হয়। পাঁচ মাসেরও বেশি সময় পর তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তার স্বাস্থ্য কিছুটা স্থিতিশীল হয়।
দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হন। তিনি দুই বছরের বেশি সময় কারাভোগ করেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ এক নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর থেকে সরকার তার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে এবং তার মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে।
বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জীবন বেশ ঘটনাবহুল বলা চলে। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে মোট মামলা রয়েছে ৩৭টি। এর মধ্যে ৩৫টি মামলায় তিনি জামিনে রয়েছেন। বাকি দুটো মামলায় তার সাজা হয়েছে। ১৩টি মামলা হয়েছে ২০০৭ এবং ২০০৮ সালে জরুরী শাসনকালে অর্থাৎ ১/১১- এর সময়ে। মামলাগুলোর মধ্যে পাঁচটি দুর্নীতি মামলা, চারটি মানহানির মামলা ও একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা রয়েছে। বাকি মামলাগুলো হয়েছে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার অভিযোগে।
চিকিৎসা: হসপিটাল থেকে বাসা। বাসা থেকে হসপিটাল। আর মামলার হাজিরা দিতে দিতেই খালেদা জিয়ার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো বছর চলে গিয়েছে।তারই ধারাবাহিকতায় চলছে যেনতেনভাবে চিকিৎসাও। এই আপসহীন নেত্রী হচ্ছেন রাজনৈতিক কঠিন প্রতিহিংসার শিকার। দেশের কল্যাণে তার স্থায়ী মুক্তি কামনায় বিএনপি নেতারা সেটাই বলছেন।