কেন পদত্যাগ করলেন ভারতের নির্বাচন কমিশনার?
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের নির্বাচনের তফসিল কয়েকদিনের মধ্যে ঘোষণা করা হবে। এই সময়ে হঠাৎ করে কেন দেশটির নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েল পদত্যাগ করলেন তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
ভারতের নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েল হঠাৎ পদত্যাগ করেছেন। এর জেরে হঠাৎ করেই বড় ধাক্কা খেয়েছে প্রতিবেশী এই দেশের নির্বাচন কমিশন। লোকসভা নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি পদত্যাগ করেন।
তার পদত্যাগে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। কিন্তু হঠাৎ কেন এখন পদত্যাগ করলেন তিনি। এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো ।
রিপোর্ট অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েল শনিবার পদত্যাগ করেছেন, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রত্যাশিত সময় ঘোষণার কয়েকদিন আগে। আইন মন্ত্রণালয়ের একটি বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু আনুষ্ঠানিকভাবে অরুণ গোয়েলের পদত্যাগ গ্রহণ করেছেন।
অরুণ গোয়েল ‘ব্যক্তিগত কারণে’ পদত্যাগের জন্য দায়ী করেছেন,সংবাদমাধ্যমগুলো একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে যে, ভারত সরকার তাকে পদত্যাগ করতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।
যাইহোক, সম্প্রতি পদত্যাগ করা নির্বাচন কমিশনারের স্বাস্থ্যের উদ্বেগ সংক্রান্ত জল্পনাগুলি দ্রুত খারিজ হয়ে যায় যখন শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেছিলেন যে অরুণ গোয়েল সুস্থ আছেন। নির্বাচন কমিশনের একাধিক সূত্রের মতে, অরুণ গোয়েল এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারের মধ্যে বিরোধ রয়েছে।
ভারতের জাতীয় নির্বাচন কমিশন তিনজন সদস্য, একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং দুইজন নির্বাচন কমিশনার নিয়ে গঠিত। অনুপ পান্ডে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন কমিশনারের পদ থেকে অবসর নেন। এরপর শনিবার বিকেলে হঠাৎ করেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন আরেক নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েল।
পরে তিনি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান এবং তা গৃহীত হয়। অরুণ গোয়েলের ২০২৭ সালে অবসর নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কেন তিনি তার মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩ বছর আগে হঠাৎ পদত্যাগ করলেন? তাও লোকসভা নির্বাচনের দিন ক্ষণ ঘোষণার ঠিক আগে।
মূলত, এপ্রিল-মে মাসে ভারতে লোকসভা নির্বাচন হতে চলেছে। সে অনুযায়ী মার্চেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে লোকসভা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হতে পারে বলে জল্পনা রয়েছে।
আগামী সোম থেকে বুধবার জম্মু ও কাশ্মীর সফরে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। উপত্যকার পরিস্থিতি এবং ভোটের প্রস্তুতি পর্যালোচনা করেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশনারের আকস্মিক পদত্যাগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার একা জম্মু-কাশ্মীরে যাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার হঠাৎ কেন পদ থেকে পদত্যাগ করলেন তা বলেননি অরুণ গোয়েল। প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার আগামী বছর অবসরে যাচ্ছেন। তখন তার প্রধান নির্বাচন কমিশনার হওয়ার কথা ছিল।
সূত্রের খবর, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারের সঙ্গে অরুণ গোয়েলের বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য ছিল। তবে ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনের কে হবেন?
জাতীয় নির্বাচন কমিশন এক সদস্য দ্বারা পরিচালিত হতে পারে না। সামনে লোকসভা নির্বাচন। তার আগে শূন্য পদে কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হবে। গত বছর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের নিয়ম পরিবর্তন করে।
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিও নিয়োগ প্যানেলে ছিলেন। কিন্তু নতুন আইনে, এবার প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা বা একক বৃহত্তম বিরোধী দলের নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক মনোনীত একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যৌথভাবে একজন ব্যক্তিকে নির্বাচন করে তার নাম সুপারিশ করবেন। রাষ্ট্রপতি সেই সুপারিশের ভিত্তিতেই নতুন সিইসি বা ইসি নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি।
তবে কাউকে নির্বাচন কমিশনার নির্বাচিত করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর কমিটি নাম সুপারিশ করার আগে একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটিতে থাকবেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী ও দুই সচিব। তারা পাঁচটি নাম নির্বাচন করবে। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নিয়োগ কমিটি কাউকে বাছাই করে রাষ্ট্রপতির কাছে তার নাম সুপারিশ করবে।
একটি বড় পদক্ষেপ ছিল গত বছরের শেষের দিকে নতুন আইন প্রণয়ন করা, মূলত অরুণ গয়ালের পদত্যাগের আগে। এতে দেশের শীর্ষ নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এসেছে। সংশোধিত ব্যবস্থা এই নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে ভারতের প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়েছে।
কংগ্রেস সভাপতি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের নতুন প্রক্রিয়া যেহেতু ক্ষমতাসীন দল এবং প্রধানমন্ত্রীকে কার্যকরভাবে সমস্ত ক্ষমতা দিয়েছে, তাহলে মেয়াদ শেষ হওয়ার ২৩ দিন পরেও কেন নতুন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হয়নি? এই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে মোদী সরকারকে।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কেসি ভেনুগোপালও দলের সভাপতি খার্গের কথার প্রতিধ্বনি করেছেন।‘এটি বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের জন্য গভীরভাবে উদ্বেগজনক যে, নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েল লোকসভা নির্বাচনের আগে পদত্যাগ করলেন।’
কেসি ভেনুগোপালও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের ওপর সরকারের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।