সারা বিশ্বের মানুষ এই বিচার দেখছে: ড. ইউনুস
কারো মামলা যখন সরকার এর বিরুদ্ধে বা রাষ্ট্র প্রধানের বিরুদ্ধে যায় তখন সে মামলায় ওই বিবাদীর জেতার আশা শুন্য শতাংশ হয়ে পড়ে। আর যতটুকু রেহাই পায় সেটাও রাষ্ট্রের অনুগ্রহ বলেই বিবেচনা করা হয়। রাষ্ট্র যখন বুঝতে পারে বিদেশি শক্তি কিছুই করতে পারবে না; তখন শুধু নোবেল লরিয়েট কেন সকলকেই নাকানি-চুবানি খাওয়ানো যায়। আর সেটাই ঘটছে এই সম্মানিত ব্যক্তিটির ক্ষেত্রে।
নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড.মুহাম্মদ ইউনূসের জামিন মঞ্জুর করে ঢাকার একটি আদালতে জামিন শেষে আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এটি হবে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এ ঘটনা শুধু দেশেই সীমাবদ্ধ নয়, সারা বিশ্বের মানুষ লক্ষ্য করছে। এই বিচারে কি হবে? আমরা যা করছি তা তারা দেখছে।
রোববার দুপুরে মহানগর দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন তিনি। ইউনূসের পক্ষে আদালতে হাজিরা দেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। দুদকের পক্ষে জামিনের বিরোধিতা করেন বিশেষ পিপি মোশাররফ হোসেন কাজল। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসম জগলুল হোসেন তার জামিন মঞ্জুর করেন।
সাংবাদিকদের ড. ইউনূস বলেন, “দুর্নীতি দমন কমিশন, বটতলা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা। এ ঘটনা গণমাধ্যমে আসবে। আপনারা ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবেন। কিন্তু এ ঘটনা ভবিষ্যতে যুগ যুগ ধরেই নানা বইতে প্রকাশিত হবে। জাতির ইতিহাসের একটা অংশ হয়ে যাবে। এটার জন্য কি আমরা গর্ববোধ করব, নাকি অপরাধবোধ করব? এ রকম একটা সন্তানকে এমন অপরাধে অপরাধী কেন করলাম? এগুলোর জবাব থেকে মুক্তি নাই”।
কেন এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা তাও ব্যাখ্যা করেছেন ড. ইউনুস। একজন নোবেল বিজয়ীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ পাচার এবং জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে। আমি একা নই; একই অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে আরও সাতজনের বিরুদ্ধে, যারা সারা জীবন দরিদ্র মানুষের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন। তারা কোনো চাকরি করতে এখানে আসেননি। তাদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগও রয়েছে।
ড. ইউনূস বলেন, আইন মানুষের শুভ কামনায় লেখা হয়। আইন মানুষের জন্য স্বস্তি ও শান্তি নিয়ে আসে। আবার আইন মানুষের মধ্যে ভীতি নিয়ে আসে। শঙ্কা জাগায়… ভয়ংকর শঙ্কা জাগায়।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারাও ঠিক করেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আজ যে বিচারে বসল, সেটি সঠিক কারণে হয়েছে কিনা, সঠিকভাবে হয়েছে কিনা। আমার মুখের দিকে তাকানোর কোনো দরকার নেই। আপনারা যা নিজে মনে করবেন, তা-ই পরের প্রজন্মকে জানাবেন। আগের প্রজন্মকে জানাবেন। যারা এখানে উপস্থিত হয়নি, তাদের জানাবেন।
তিনি বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা এগুলো স্কুলে পড়বে। তারা তো নোবেল পুরস্কারের কথা ভুলতে পারবে না। তখন তারা পড়বে তাঁর নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ দেয়, মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ দেয়, জালিয়াতিতে দেয়; তখন তারা কনফিউশনে পড়ে যাবে। আসলটা কী! এটা কি মুখোশ, নাকি আসল মানুষ। তারা একাই নাকি তাদের সাঙ্গোপাঙ্গ আছে।
এ ঘটনায় গত ১ ফেব্রুয়ারি ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)
মামলায় দুদক ১৩ জনকে আসামি করলেও পরে অভিযোগপত্রে যুক্ত হয় জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের দপ্তর সম্পাদক কামরুল হাসানের নাম। আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামিদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। গত বছরের ৩০ মে দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এ মামলা করেন।
গত ৩০শে মে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলায় প্রধান বাদী হয়ে মামলাটি করেন সংস্থাটির উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার। গ্রামীণ টেলিকমের ১৭৬ জন কর্মচারী লভ্যাংশের জন্য ১০০ টিরও বেশি মামলা দায়ের করেছেন। তারা হাইকোর্টে আপিলও করেন। পরে গ্রামীণ টেলিকম তাদের সাথে একমত হয়। গ্রামীণ টেলিকম কর্মীরা নিষ্পত্তির মাধ্যমে অর্থ প্রদানের পরে ২০২২ সালের মে মাসে মামলাগুলি প্রত্যাহার করে নেয়। পরে বকেয়া পরিশোধের বিষয়ে দুদক মামলা করে।
জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে
শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল আদালত থেকে ড. ইউনূসসহ চারজনের জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কাকরাইল শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল এ আদেশ দেন। তবে এই মেয়াদ কতদিন বাড়ানো হবে সে বিষয়ে আদালত লিখিত সিদ্ধান্ত দেবেন। ইউনূসের পক্ষে আপিলের পরবর্তী শুনানির জন্য ১৬ এপ্রিল দিন ধার্য করেন আদালত।
অপর তিন আসামি হলেন, এমডি আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান। ঢাকার ৩ নম্বর শ্রম আদালতের বিচারক মো: শাহজাহান শেখ মেরিনা সুলতানা গত ১ জানুয়ারি তাদের সাজা দেন।