আমাদের প্রতিষ্ঠান জবরদখল হয়েছে- আমরা ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আছি: ড. ইউনূস
নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস অভিযোগ করেছেন, গ্রামীণ ব্যাংক তাদের আটটি প্রতিষ্ঠান জব্দ করেছে। নিজেদের মতো করে চলছে এসব প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে পুলিশি প্রতিকার চেয়েও কোনো সহযোগিতা পায়নি। তিনি বলেন এমন বিপর্যয় আর কক্ষনও দেখিনি, সংগঠন দখলে নিচ্ছে, কার কাছে যাব।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর মিরপুরে গ্রামীণ টেলিকম ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
গ্রামীণ টেলিকম ভবন, চিড়িয়াখানা রোড, মিরপুর ১, ঢাকা। এই ভবনে ড. ইউনূসের ১৬টি কোম্পানি রয়েছে। তাদের প্রত্যেকের চেয়ারম্যান মো. ইউনুস।
১২ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ ভবনে অবস্থিত আটটি অফিস দখল করে নেয়া হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান ড. ইউনূস।
গ্রামীণ ব্যাংকের টাকায় এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
গ্রামীণ টেলিকম ভবনে গ্রামীণ ব্যাংকের আটটি কোম্পানিকে আত্মসাতের অভিযোগে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা নানা ধরনের দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এমন বিপর্যয় আমি কখনো দেখিনি যে হঠাৎ বাইরে থেকে কিছু লোক এসে তোমাকে সরে যেতে হবে বলেছে।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে গ্রামীণ টেলিকম ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ড. ইউনুস। এই ভবনে ড. ইউনূস মোট ১৬টি কোম্পানি গড়ে তুলেছেন, যার প্রতিটির তিনি চেয়ারম্যান।
সংবাদ সম্মেলনে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছি। আমরা খুব সম্প্রতি এই সুন্দর ভবনটি নির্মাণ করেছি। আমরা যখন গ্রামীণ ব্যাংকে ছিলাম তখন আমাদের অফিস ছিল। আমাদের যাওয়ার সময় হলে আমরা ভেবেছিলাম আমরা সবাই মিলে একটা বিল্ডিং তৈরি করব যেখানে আমরা শান্তিতে কাজ করতে পারব। এটাই সেই জিনিস; আমাদের স্বপ্নের বীজতলা। এটা তার একটা নমুনা।’
ইউনূস আরও বলেন, ‘হঠাৎ চার দিন আগে (১২ ফেব্রুয়ারি) দেখলাম বহিরাগতরা এসে জোর করে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা তাদের কাছে বহিরাগত হয়ে গেলাম। তারা তাদের নিজস্ব শর্তে এটি চালানোর চেষ্টা করছে। আমি বুঝতে পারিনি এটা কিভাবে হল।’
পুলিশের কাছে ঘটনাটি কোনো লাভ হয়নি মন্তব্য করে নোবেল বিজয়ী আরও বলেন, ‘আমরা পুলিশকে বলেছি যে এমন ঘটনা ঘটছে। আপনারা এসে দেখেন। ঠিক করে দেন। পুলিশ প্রাথমিকভাবে (অভিযোগ) গ্রহণ করেনি। তারপর একবার এসে ঘুরে গেল। কোনো সমস্যা দেখিনি। আমাদের দরজায় তালা দিয়ে যাচ্ছে তারা। সকাল বেলা এসে তালা খুলে দিচ্ছে। এখনো সেই পরিস্থিতি বিরাজমান।’
কোথায় গেল দেশের আইন-আদালত? ইউনূস বলেন, ‘আমরা সকাল থেকে এখানে ঝাড়ু নিয়ে মিছিলের কথা শুনছি। আমি কোন বুঝতে পারছি না। কেন হচ্ছে তাও বুঝছি না। আমরা ঝাড়ুর যোগ্য হয়ে গেলাম হঠাৎ করে। আমরা তো নিজের বাড়িতেই আছি। নিজের ঘরে আছি। আর কারও ঝামেলার মধ্যে তো আমরা যাই না।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যতগুলো প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছি তার প্রধান কার্যালয় এখানে। আমার পাশে যারা আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন তারা সারাজীবন কাজ করে গেছেন এটাকে সফল করতে। দেশের মানুষের কল্যাণে।’
এই ভবনের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই ব্যবসার মুনাফায় গড়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন ড. ইউনূস বলেন, এখানে হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার গ্রামীণ ব্যাংকের নেই। গ্রামীণ ব্যাংকের টাকায় এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আর কোথায় যাব?
সংবাদ সম্মেলনে যে আটটি প্রতিষ্ঠানে তালা লাগানোর অভিযোগ করা হয়েছে সেগুলো হলো- গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ কল্যাণ, গ্রামীণ মৎস্য ও পশু সমাধা ফাউন্ডেশন, গ্রামীণ কৃষি ফাউন্ডেশন, গ্রামীণ গুডস, গ্রামীণ ফান্ড, গ্রামীণ শক্তি এবং গ্রামীণ কমিউনিকেশন।
সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম, গ্রামীণ কল্যাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম মঈনুদ্দিন চৌধুরীসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
সংস্থাটির চেয়ারম্যান ও নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড.মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ।
গ্রামীণ কল্যাণ কর্মীরা জানান, আজ সকাল থেকে গ্রামীণ টেলিকম ভবনের সামনে কিছু লোক দাঁড়িয়ে আছে, কয়েকজন মহিলাও ঝাড়ু নিয়ে উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কাউকে এমনকি ভবনে আসা কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। তারা আরও অভিযোগ করেন, গত কয়েকদিন আগে ২০ জনের একটি দল ভবনটি দখলের চেষ্টা করেছিল।
এদিকে বুধবার গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা পরিচয়ে বেশ কয়েকজন ধমক ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন বলেও অভিযোগ করেন গ্রামীণ কল্যাণের ভারপ্রাপ্ত বিভাগ (হিসাব ও অর্থ) প্রধান মো. ইউসুফ রেজা খান। পরে সন্ধ্যায় এ বিষয়ে জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করতে গেলে স্থানীয় শাহ আলী থানা পুলিশ তা গ্রহণ করেনি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।