বিনা চিকিৎসায় ডাণ্ডাবেড়ি নিয়েই মারা গেলেন বিএনপি নেতা কাজল: মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন
দলের দাবি, ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে সংঘর্ষের পর বিএনপির ২৪ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কারাবন্দি এসব নেতাকর্মীর মধ্যে কয়েকজন অসুস্থ হয়ে কারাগারে বা হাসপাতালে মারা যাচ্ছেন। গুরুতর অসুস্থ হলেও ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ডাণ্ডাবেড়ি অবস্থায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
দলটির দাবি, গত ৫ মাসে কারাগারে বিএনপির ৯ নেতার মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত দুই মাসে সাতজন মারা গেছেন। পরিবারের দাবি, গ্রেফতারের আগে নিহত নেতারা সবাই সুস্থ ছিলেন। স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, কারাগারে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন বিএনপি নেতারা। কারাগারে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে না নেতাদের। সঠিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। অনেক সময় শেষ মুহূর্তে স্বজনদের খবর দেওয়া হয়।
মৃত্যুর পর অনেককে জানানো হয়। গত ২৬ ডিসেম্বর গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েন মুগদা থানা শ্রমিক দলের নেতা। ডাণ্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় রাজধানীর হার্ট ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ফজলুর রহমান কাজল। জটিলতাজনিত কারণে ২৮ ডিসেম্বর হাসপাতালে তিনি মারা যান।
কাজলের ছেলে সজল হোসেন বলেন, ২৮ অক্টোবর গণসমাবেশের দুই দিন আগে পুলিশ আমার বাবাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। কোনো মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল না। শুধু বিএনপির রাজনীতি করার জন্য তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমার বাবা অপরাধী ছিলেন না। এরপরও তাকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে কাশিমপুর কারাগারে রাখা হয়। তার আগে কোনো শারীরিক অসুস্থতা ছিল না। শুধু একটা হাতে একটু ব্যাথা ছিল। কিন্তু টানা নির্যাতনে ২৫ ডিসেম্বর কারাগারে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২৬ ডিসেম্বর কারা কর্তৃপক্ষ তাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করে। স্ট্রোক করায় ঢাকা মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসকরা তাকে হার্ট হাসপাতালে পাঠান। তিনি জানান, সেখান থেকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়েই তাকে হার্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু আমাদের জানানো হয় ২৮ ডিসেম্বর। খবর পেয়ে প্রথমে হাসপাতালে যান মা। কিন্তু দায়িত্বরত কারারক্ষীরা বাবাকে দেখার জন্য মায়ের কাছে ৫০০ টাকা দাবি করেন। পরে বাধ্য হয়ে মাকে ৪০০ টাকা দিয়ে দেখতে দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, আমার বাবাকে হাসপাতালে কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। নার্সরা শুধু স্যালাইন দিয়েছেন। আমি হাসপাতালে গিয়ে দেখি বাবা যখন শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল তখন নার্সরা স্যালাইন দিয়েছিল। কিন্তু হাত ও পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি থাকায় ক্যানোলা লাগাতে পারেননি বলে জানায় নার্সরা । তারা হাসপাতালের ক্যারোসেলে কর্মকর্তাদের অনুরোধ করে বলেন, ডাণ্ডাবেড়ি কারণে তারা হাতের রগ খুঁজে পাচ্ছেন না। অন্তত ডাণ্ডাবেড়ি খুলুন। ক্যানোলা যোগ করুন। কারারক্ষীরা মোবাইল ফোনে ব্যস্ত ছিলেন। এরপর নার্সরা ক্যানোলা লাগান। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি মারা যান। সজল বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর আর ডান্ডাবেড়ি খোলেনি। ডাণ্ডাবেড়ির কারণে তার হাত ও পায়ে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। লাশ মর্গে নিয়ে যাওয়ার পর হাতুড়ি দিয়ে ডাণ্ডাবেড়ি ভেঙে ফেলা হয়। হাসপাতালে আমার বাবার এমন অমানবিকতা সহ্য করতে না পেরে আমি চিৎকার শুরু করি। ম্যাজিস্ট্রেট এসে কারারক্ষীদের জিজ্ঞাসা করলেন দুই দিন আগে কেন আপনি আপনার আত্মীয়দের খবর দেননি? তখন তারা উত্তর দেয় যে তারা আমাদের মোবাইল নম্বর খুঁজে পায়নি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, চিকিৎসাধীন অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু বিনা চিকিৎসায় তারা বাবাকে হত্যা করে।
দাঙ্গায় কাজলের মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে কাশিমপুর জেল সুপার মো: শাহজাহান বলেন, এ ধরনের ঘটনা আমার জানা নেই।
উল্লেখ্য, পাঁচ মাসে কারাগারে মারা গেছেন বিএনপির ৯ নেতা
- পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক মতিবুল মন্ডল (৫৫) ।
- গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাউরাইড ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান হীরা খান (৫০) ।
- ২৪শে আগস্ট ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি’র সদস্য ইমতিয়াজ হাসান ।
- ১৮ই নভেম্বর নাশকতার একটি মামলায় গ্রেপ্তার হন নাটোর সিংড়া উপজেলা হাতিয়ান্দহ ইউনিয়ন বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক এ কে আজাদ সোহেল (৩৮) ।
- ৭ই ডিসেম্বর হাসপাতালেই মারা যান তিনি। গত ২৯শে জুলাই ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি’র মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মো. ইদ্রিস আলী (৬০) ।
- গত ২৩শে জুলাই ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) ১৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক ও বিএনপি পশ্চিম মালিবাগ ইউনিট শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার (৩৬) ।
- ৭ই নভেম্বর নাশকতার এক মামলায় রাজশাহীর গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ও একই ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সভাপতি মনিরুল ইসলাম (৫২) ।
- ২৬শে অক্টোবর গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তারের পর মুগদা থানা শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ফজলুর রহমান কাজল।
জনাব কাজলসহ উল্লেখিত সবাই কারাবন্দি থাকা অবস্থায় মারা যান । তার মধ্যে অনেকেই অবহেলায় মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্ট ফ্যামিলি গুলো এবং সবাই বিএনপির কোনো না কোনো পর্যায়ের নেতা।