ফিলিস্তিনের একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে শরীরে আগুন দেওয়া এই মার্কিন সেনার নামে
“বল বীর
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!”
টেক্সাসের সান আন্তোনিও থেকে ২৫ বছর বয়সী মার্কিন বিমান বাহিনীর সদস্য অ্যারন বুশনেল ওয়াশিংটন ডিসিতে ইসরায়েলি দূতাবাসের সামনে নিজেকে আগুন দেওয়ার সময় একটি সামরিক ইউনিফর্ম পরেছিলেন। সে সময়, তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভে বলছিলেন যে তিনি গাজার গণহত্যার সাথে নিজেকে যুক্ত করতে চান না। তিনি মার্কিন বিমান বাহিনীর একজন সক্রিয় সদস্য
শরীরে আগুন দেওয়ার পরও বুশনেল চিৎকার করছিলেন, ‘মুক্ত ফিলিস্তিন’। বলে এর পর মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি । পরের দিন, সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারী) বুশনেল হাসপাতালে মারা যান,
গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার আক্রমণ এখনও চলছে। উপত্যকায় এ পর্যন্ত প্রায় ৩২,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
তিনি ফিলিস্তিনি নন। বাড়িও ফিলিস্তিন থেকে অনেক দূরে। তারপরও ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা তার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। প্রতিবাদ করায় নিজের শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তিনি হলেন অ্যারন বুশনেল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর সদস্য। ফিলিস্তিনের একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে ২৫ বছর বয়সী টগবগে যুবকের নামে।
রাস্তাটি দখলকৃত পশ্চিম তীরের জেরিকো শহরে। রোববার সড়কটির নতুন নামফলক উন্মোচন করেন জেরিকোর মেয়র আবদুল করিম সিডর। সেখানে মানুষের সমাগম হয়েছিল। মেয়র সবার উদ্দেশে বলছিলেন, ‘আমরা তাকে চিনতাম না। তিনিও আমাদের চিনতেন না। আমাদের কোন সামাজিক, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক বন্ধন ছিল না। তার সাথে আমাদের মিল রয়েছে স্বাধীনতার প্রতি ভালোবাসা এবং ইসরায়েলের (গাজায়) হামলার বিরুদ্ধে কথা বলার ইচ্ছা।’
অ্যারন বুশনেল গাজা আক্রমণের বিরুদ্ধে কথা বলার চরম পথ নিয়েছিলেন। দিনটি ছিল গত ২৫ ফেব্রুয়ারি। তিনি ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি দূতাবাসের বাইরে সামরিক ইউনিফর্মে হাজির হন। সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ। তিনি সেখানে ঘোষণা করেন, ‘আমি গণহত্যায় জড়িত হতে চাই না’। তারপর নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন। এই সময়েও তার আকুল আবেদন একটাই- ‘আমি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা চাই।’ এরপর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা বুশনেলকে উদ্ধার করে। কিন্তু বাঁচানো যায়নি।
ইসরায়েলি বাহিনী ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় রক্তক্ষয়ী হামলা চালাচ্ছে। উপত্যকায় প্রতিদিনই বাড়ছে ফিলিস্তিনিদের লাশের সারি। এখন পর্যন্ত সেখানে প্রায় ৩২ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। ইসরায়েলের এই নৃশংস হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রসহ অধিকাংশ পশ্চিমা দেশের সরকার সমর্থন করলেও গাজার জনগণ সারা বিশ্বের সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। পূর্ব থেকে সুদূর পশ্চিম পর্যন্ত তারা ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে। বুশনেল এই সাধারণ মানুষের সাথে যোগ দেন।
ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বুশনেলের আত্মত্যাগকে জেরিকোর বাসিন্দারা সংহতির সবচেয়ে শক্তিশালী অভিব্যক্তি হিসেবে দেখেন। এমনই একজন সিটি কাউন্সিল সদস্য আমানি রায়ান। গাজায় বেড়ে ওঠা এই ব্যক্তি ১৯ বছর বয়সে পশ্চিম তীরে এসেছিলেন পড়াশোনা করতে। আমানি বলেন, “তিনি (বুশনেল) তার সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটি উৎসর্গ করেছেন। এই ব্যক্তি গাজার শিশুদের জন্য তার সমস্ত সুযোগ-সুবিধা বিসর্জন দিয়েছেন।’
জেরিকো ফিলিস্তিনের একটি ঐতিহাসিক শহর। প্রাচীনতম শহরগুলির মধ্যে একটি যেখানে লোকেরা কখনই হাঁটা বন্ধ করে না। এই শহরের দক্ষিণে অ্যারন বুশনেল রোড। এলাকাটি সব সময় বাড়িঘর ও বাগানে ঠাসা থাকে। ঘোড়া দৌড়সহ বিভিন্ন খেলার আয়োজন করা হয়। অ্যারন বুশনেল রোড মাহমুদ দারবিশ রোডের একটি শাখা। ফিলিস্তিনিরা মাহমুদ দারবিশকে জাতীয় কবি মনে করে।
জেরিকোর বাসিন্দা আমানি রায়ান বলছিলেন, ‘আরন বুশনেল এবং মাহমুদ দারবিশ এখানে মিলিত হয়েছেন। দুজনেই ফিলিস্তিনের ইতিহাসের পাতায় শক্তিশালী নাম।’ আমানি রায়ান, জেরিকোর অনেকের মতো, বুশনেল পরিবারকে শহরটির মানুষ দেখতে চায়। তিনি বলেন, “আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি তাকে (বুশনেল) ধন্যবাদ জানাতে চাই তাকে লালন পালন যারা করেছেন এমন পিতা-মাতাকে, তাকে এমন একটি নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার জন্য।’
পশ্চিম তীরের রাস্তাগুলি এর আগে বিশিষ্ট ফিলিস্তিনি অধিকার কর্মীদের নামে নামকরণ করা হয়েছে। জেরিকোর মেয়র আবদুল করিম সিডর র্যাচেল কোরিকে স্মরণ করেছেন। এটি ২০০৩ সালে ঘটেছিল। এরপর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় বাড়িঘর ধ্বংস করার জন্য অভিযান শুরু করে। তাদের থামাতে এগিয়ে আসেন মার্কিন নাগরিক কোরি। বুলডোজারের নিচে চাপা পড়ে তার মৃত্যু হয়। রামাল্লার একটি রাস্তার নামকরণ করা হয় র্যাচেল কোরির নামে।
এছাড়া জেরিকোর একটি স্কোয়ারের নামকরণ করা হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার নামে। গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা করছে বলে অভিযোগ করে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার। মেয়র আবদুল করিম সিডর বলেন, ‘এই নামগুলো নগরবাসী-এমনকি আগত দর্শনার্থীদেরও নজরে পড়বে। সবাই এই লোকদের মনে রাখবে।’
শুরু করেছি কাজী নজরুল ইসলাম দিয়ে শেষও করছি কবি র বাণী দিয়ে