যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড সংখ্যক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে
অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ বিশ্বের পরাশক্তির এই দেশে, বাড়ি-গাড়ি-নারী , অর্থ ব্যবহার স্বাধীনতা সহকারে এমন কিছু নেই যা নাগালের বাইরে । এতকিছু থাকার পরও কোন অশান্তি , কোন ভাবনা , কোন অদূরদর্শিতা আত্মহত্যার পথে নিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব চালিকাশক্তির এই দেশটিকে? তা নিয়ে আজকের আলোচনা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ, আত্মহত্যার প্রবণতা অভূতপূর্বভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালে এখানে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৪৯০০০ জনের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছে। মার্কিন সরকারের সর্বশেষ তথ্য এমন ভয়াবহ চিত্র দেখায়।
গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের রেকর্ড সংখ্যক মানুষ আত্মহত্যা করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৩ শতাংশ বেশি। দেশটির সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সদ্য প্রকাশিত নথিতে এমন উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে। গত বছর দেশে আত্মহত্যা করেছে ৪৯ হাজার মানুষ।
ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) গত বৃহস্পতিবার আত্মহত্যার নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে। এটি দেখায় যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আত্মহত্যা একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠেছে। ২০১৮ থেকে২০০০ সাল পর্যন্ত আত্মহত্যার হার বেড়েই চলেছে। ২০১৮ সালে, ৪৮৩০০ জন আত্মহত্যা করেছে, যা ১৯৪১ সালের পর সর্বোচ্চ ছিল। তবে, ২০১৯ এবং ২০২০ সালে, এই সূচকটি কিছুটা কমছিল। তখন ছিল করোনা মহামারীর সময়। কিছু বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং যুদ্ধের সময় পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়। এ কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা কমতে পারে। কিন্তু ২০২১ সালে আত্মহত্যার হার বেড়েছে ৪ শতাংশ। আর গত বছর ৪৯ হাজারের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছে। এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৯ হাজার ৪৪৯ জন। সিডিসির তথ্য অনুসারে, গত বছর যারা আত্মহত্যা করেছিল তাদের মধ্যে৭৯ শতাংশ পুরুষ ছিল।
মার্কিন স্বাস্থ্য সচিব জেভিয়ের বেসেররা এক বিবৃতিতে বলেছেন যে ১০ জনের মধ্যে ৯ জন মার্কিন নাগরিক বিশ্বাস করেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি মানসিক স্বাস্থ্য সংকটে রয়েছে।
৪৫ বছর বয়সী ক্রিশ্চিয়ানা উইলবার ফ্লোরিডায় থাকেন। গত বছর তার ছেলে নিজেকে গুলি করে আত্মহত্যা করে। তিনি তার হতাশা প্রকাশ করেছেন। তার মতে, আমাদের মধ্যে কিছু ভুল আছে। এ সংখ্যা কোনোভাবেই বাড়তে দেওয়া উচিত নয়। তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে হয়তো মারা যায়নি। আমি জানি জিনিসগুলি খুব জটিল। কিন্তু আমাদের সাধ্যের মধ্যে এমন কিছু করা উচিত, যা আমরা এখন করছি না। কারণ আমরা এখন যা করছি তা আর কাজ করছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে আত্মহত্যার হার বৃদ্ধির পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এর মধ্যে বিষণ্নতার উচ্চ হার, মানসিক স্বাস্থ্য সেবা সাধারণ নাগরিকদের নাগালের বাইরে। এছাড়া দেশটিতে আত্মহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক গবেষক জিল হারকাভি-ফ্রাইডম্যান মনে করেন, দেশে বন্দুকের সহজলভ্যতা এর অন্যতম কারণ। তিনি বলেন, বন্দুক নিয়ন্ত্রণের কথা চিন্তা না করে কীভাবে আত্মহত্যা কমানোর বিষয়ে আলোচনা করা যায়?
এদিকে, সিডিসির তথ্য অনুসারে, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে, ৪৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার ৭ শতাংশ বেড়েছে এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে 8 শতাংশের বেশি বেড়েছে। সমকামী পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি।
এই বাস্তবতায় প্রশ্ন জাগে, বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি ও সুযোগ-সুবিধায় হাবুডুবু খাওয়া নাগরিকরা কেন এমন আত্মহত্যার পথে ছুটছেন? এ প্রশ্নের জবাবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত অবসাদ, অপর্যাপ্ত মানসিক স্বাস্থ্য সেবার মতো নানা কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে।
তবে আমেরিকান ফাউন্ডেশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশনের গবেষণার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জিল হারকাভি-ফ্রাইডম্যান বলেছেন, আত্মহত্যার বৃদ্ধির মূল চালিকা হচ্ছে বন্দুকের সহজ প্রাপ্যতা।
জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির সাম্প্রতিক একটি বিশ্লেষণেও দেখা গেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকের আত্মহত্যার সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। জিল হারকাভি-ফ্রাইডম্যান বলেছেন, ‘আমি জানি না আপনি কীভাবে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চুপ থেকে আত্মহত্যার কথা বলছেন?’
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সিডিসির তথ্য অনুযায়ী, গত বছর (২০২২) দেশে ৪৯ হাজারের বেশি মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন। ২০০০ সাল থেকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আত্মহত্যার হার বাড়ছে। আত্মহত্যার আগের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল ১৯৪১ সালে। সে বছর প্রায় ৪৮৩০০ জন আত্মহত্যা করেছিল।
এই বাস্তবতায় প্রশ্ন জাগে, বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি ও সুযোগ-সুবিধার ‘টোয়াটম্বু’ নাগরিকরা কেন এমন আত্মহত্যার পথে ছুটছেন? এ প্রশ্নের জবাবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত অবসাদ, অপর্যাপ্ত মানসিক স্বাস্থ্য সেবার মতো নানা কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে।
তবে আমেরিকান ফাউন্ডেশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশনের গবেষণার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জিল হারকাভি-ফ্রাইডম্যান বলেছেন, আত্মহত্যার বৃদ্ধির মূল চালিকা হচ্ছে বন্দুকের প্রাপ্যতা।
আরও পড়তে পারেন
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক সহিংসতায় গত ছয় মাসেই প্রাণ হারিয়েছে ২০ হাজার
তিন নাবালক ছেলেকে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে হত্যা করল পাষণ্ড এক বাবা
জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির সাম্প্রতিক একটি বিশ্লেষণেও দেখা গেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকের আত্মহত্যার সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। জিল হারকাভি-ফ্রাইডম্যান বলেছেন, ‘আমি জানি না আপনি কীভাবে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চুপ থেকে আত্মহত্যার কথা বলছেন?’