হাওয়াইয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ দাবানলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭
হাওয়াই রাজ্যের মাউই দ্বীপে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। হাওয়াইয়ের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যোগদানের পর থেকে, দ্বীপের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা গেছে। এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭।
বার্তা সংস্থা এএফপি মৃতের সংখ্যা নিশ্চিত করেছে বলে জানিয়েছে মাউই কাউন্টি অফিস। এক বিবৃতিতে মাউই কাউন্টি বলেছে, আগুন নেভানোর চেষ্টা এখনও চলছে। তা সত্ত্বেও শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টা পর্যন্ত আরও অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৬৭।
হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ ১৯৫৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যোগ দেয়। এক বছর পরে, ১৯৬০ সালে, হাওয়াইয়ের উপর একটি বিধ্বংসী সুনামি বয়ে যায়। ফলে সে সময় ৬০ জন নিহত হয়। এই দাবানল অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে প্রাণহানির কথা বিবেচনা করে এই অগ্নিকাণ্ডকে হাওয়াইয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এদিকে, মাউই দ্বীপে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে হাওয়াইয়ের গভর্নর জোশ গ্রিন মার্কিন বলেছেন, গতকাল (বুধবার স্থানীয় সময়) দুই হাজারের বেশি মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে রাত কাটিয়েছেন। ১১ হাজার মানুষ বিদ্যুৎহীন। মাউয়ের পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুৎ নেই।
জশ গ্রিন বলেন, দাবানলের ফলে ১ হাজার ৭০০ ভবন সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এ ছাড়া তিনি বলেন, ‘দুর্যোগের শুরু থেকেই এটা আমাদের মূল্যায়ন। তিনি বলেন আমি নিশ্চিত করছি যে কয়েক ডজন লোক নিহত হয়েছে এবং বিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি ধ্বংস হয়েছে।
গভর্নর জোস গ্রিন দিনটিকে “হৃদয়বিদারক দিন” হিসাবে বর্ণনা করেছেন, বলেছেন যে ঐতিহাসিক শহর লাহাইনায় অন্তত ১৭০০ টি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।তিনি বলেন, দাবানলে নগরীর ৮০ শতাংশ এলাকা পুড়ে গেছে।
গত মঙ্গলবার দাবানলের সূত্রপাত হয়। পরে হারিকেন ডোরা দ্বারা সৃষ্ট প্রবল বাতাসের কারণে এটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।এরপর সেখান থেকে প্রায় ১৪ হাজার পর্যটককে সরিয়ে নেয় কর্তৃপক্ষ। তবে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় এখনো অনেকের সন্ধান পায়নি কর্তৃপক্ষ। অগ্নিকাণ্ড থেকে বেঁচে যাওয়া লাহাইনার বাসিন্দারা জানান, দাবানল যখন তাদের বাড়ির দিকে আসছিল তখন তাদের সতর্ক করার মতো কোনো সতর্কতা চিহ্ন ছিল না।
মাউই শহরের প্রায় ১১০০০ মানুষ এই দুর্যোগের মধ্যে বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে, শহরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।মাউই দ্বীপের কর্তৃপক্ষ বলছে, দাবানলের কারণে সৃষ্ট ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কয়েক বছর এবং কয়েকশ বিলিয়ন ডলার লাগবে। গভর্নর গ্রিন বলেন, এটি সম্ভবত হাওয়াই দ্বীপের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
গভর্নর জোস গ্রিন বলেন, হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য বাড়ি তৈরি করতে হবে।প্রাথমিকভাবে তাদের জন্য হোটেলগুলোতে ২০০০ রুম চাওয়া হয়েছে।তিনি সেইসব এলাকার জনগণকে অনুরোধ করেন যেখানে মানুষ এখনও বসবাস করতে পারে তাদের বাড়ির অতিরিক্ত কক্ষে গৃহহীনদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য।
তিনি বলেন, হাওয়াই দ্বীপের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ। মৃতের সংখ্যা এখনও বাড়ছে। বিধ্বস্ত হয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি।তিনি আরও বলেন, লাহেনা পুনর্নির্মাণ করতে অনেক বছর সময় লাগবে। এই শহর আগুনের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু।
মি. গ্রিন বলেন, “হবেয় ধ্বংসযজ্ঞ দেখে আপনি অবাক হবেন,” । সব ভবন পুনর্নির্মাণ করতে হবে। হবে নতুন হবে ।স্থানীয় পুলিশ বলছে, তারা এখনো জানে না কতজন নিখোঁজ রয়েছে। তবে সংখ্যাটা এক হাজারের কম হবে না।পুরো দ্বীপে এখন বিদ্যুৎ বা ইন্টারনেট নেই। সে কারণে মানুষ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানান তিনি।এদিকে, মাউয়ের বন বিভাগ জানিয়েছে, মঙ্গলবার থেকে একাধিক দাবানলে শত শত একর বন পুড়ে গেছে।
আরও পড়তে
কানাডায় দাবানল; পুড়ে গেছে ৩৮ লাখ হেক্টর জমি
নিউইয়র্ক সিটি ধীরে ধীরে নিম্নে দেবে যাচ্ছে
অনেক জায়গায় ছোট ছোট আগুন জ্বলছে। পরিস্থিতি এখনও বিপজ্জনক। মাউই ফরেস্ট্রি চিফ ব্র্যাড ভেনচুরা মন্তব্য করে মানুষকে “ফায়ার জোন” থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
স্থানীয় জরুরি সেবা বিভাগ জানিয়েছে, উদ্ধার ও অনুসন্ধান অভিযান চলছে এবং তারা তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তবে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কর্তৃপক্ষ আশেপাশের এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়েছে এবং আরও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া যারা দ্বীপে যাওয়ার আবেদন করেছেন তাদের আবেদন বাতিল করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে হাওয়াইয়ের আশেপাশের উচ্ছেদ সহ এই অঞ্চলে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। এখন এই দ্বীপরাষ্ট্রটিতে প্রায় চার হাজার পর্যটক আটকা পড়েছে।
1 Comment