গাজায় ইসরাইলি হামলায় ১১ হাজার শিক্ষার্থী নিহত
ফিলিস্তিনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের নৃশংস হামলায় ১১ হাজার শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। ১০ মাসেরও বেশি সময় ধরে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজা উপত্যকা জুড়ে তাদের হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে। নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ১১ হাজার ছাত্রও রয়েছে। এছাড়া ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত আহত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৭ হাজার ৭৭২ জনে পৌঁছেছে।
গাজার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০ হাজার ৮৮৮। আহত হয়েছে ১৭ হাজার ২২৪ জন শিক্ষার্থী। অন্যদিকে, পশ্চিম তীরে ৫৮৪ জন শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছেন ৪২৯ জন শিক্ষার্থী। গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে নজিরবিহীন হামলা চালায়। তেল আবিব দাবি করে যে সে সময় হামাসের হাতে ১২০০ ইসরায়েলি নাগরিক নিহত হয়েছিল। এছাড়া হামাস ২৫০ ইসরায়েলি নাগরিককে গ্রেপ্তার করে গাজায় নিয়ে আসে। পরবর্তীতে হামাস নির্মূলের নামে গোটা গাজায় অমানবিক হত্যাযজ্ঞ শুরু করে ইসরাইল। তারা এখনও বিমান ও স্থল হামলা চালাচ্ছে। তেল আবিব গাজায় তাদের হামলা দিন দিন বাড়াচ্ছে। নেতানিয়াহুর বাহিনী ‘মানবিক অঞ্চল’ হিসাবে মনোনীত এলাকাগুলিতে আক্রমণ বাড়িয়েছে।
মঙ্গলবার আল জাজিরার স্থানীয় সংবাদদাতা জানিয়েছেন, বৈরুতে ইসরায়েলি বোমা হামলায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও বহু মানুষ চাপা পড়ে আছে যাদের উদ্ধার করতে পারছে না উদ্ধারকর্মীরা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ৪১,২৫২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
গত প্রায় ১১ মাসে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে ১১,০০০ ছাত্র নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ফিলিস্তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে গাজা উপত্যকা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে ১১,০০১ শিক্ষার্থী নিহত এবং ১৭,৭৭২ জন আহত হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ১০,৮৮৮ শিক্ষার্থী নিহত এবং ১৭,২২৪ জন আহত হয়েছে।
আর পশ্চিম তীরে এই সময়ে ১১৩ জন ছাত্র নিহত ও ৫৪৮ জন ছাত্র আহত হয়। একই সময়ে, ৪২৯ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুসারে, ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে কমপক্ষে ৪১,২৫২ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৯৫৪৯৭ জন আহত হয়েছে।
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরাইলি হামলায় এ পর্যন্ত ৪১ হাজার ২৫২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া গাজায় এখনো দশ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত অবস্থায় বসবাস করছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। মোট ৯৫৪৯৭ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশ ইসরায়েলের অমানবিক হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘের অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাতে কর্ণপাত করছেন না। জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে অভিযান জোরদার করার নির্দেশ দেন তিনি।
নেতানিয়াহু ‘নতুন যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছে:
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু উত্তর ইসরায়েলের বাসিন্দাদের তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে দিতে ‘নতুন যুদ্ধের লক্ষ্য’ ঘোষণা করেছেন। মঙ্গলবার নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা উত্তর ইসরায়েলের বাসিন্দাদের নিরাপদে তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে দেওয়ার জন্য তাদের যুদ্ধের উদ্দেশ্য বাড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে ইসরায়েলের নতুন যুদ্ধের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এ যুদ্ধে পূর্ববর্তী যুদ্ধের তিনটি শর্তও যুক্ত করা হয়েছে। যেমন হামাসের সামরিক শক্তি ও শাসন ব্যবস্থা ধ্বংস করা; সকল বন্দিকে মুক্ত করা এবং নিশ্চিত করা যে, গাজা আর ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে না।
দীর্ঘ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে সতর্ক করেছে হামাস:
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলন হামাস বলেছে যে, তারা গাজায় একটি “দীর্ঘ যুদ্ধের” জন্য প্রস্তুত। সোমবার সংগঠনটির প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার এ তথ্য জানান। যাইহোক, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট গত সপ্তাহে বলেছিল যে, গাজায় সামরিক সংগঠন হিসাবে হামাসের “আর অস্তিত্ব নেই”। সিনওয়ার বলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা হামাসের রয়েছে। তারা প্রায় এক বছর ধরে গাজায় যুদ্ধ করছে। হামাসের ইয়েমেনি মিত্রদের কাছে লেখা চিঠিতে সিনওয়ার বলেছেন, “আমরা একটি দীর্ঘ যুদ্ধের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করেছি।” তিনি গত মাসে নিহত ইসমাইল হানিয়াহের স্থলাভিষিক্ত হন।
