November 16, 2024
রাফা সীমান্ত বন্ধ কেন?

রাফা সীমান্ত বন্ধ কেন?

রাফা সীমান্ত বন্ধ কেন?

রাফা সীমান্ত বন্ধ কেন?

রাফাহ সীমান্ত বন্ধ রাখার অন্যতম কারণ হলো হামাসের কোনো সদস্য যেন গাজা ছেড়ে সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ আনতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে চায় ইসরাইল।

অন্যদিকে, রাফাহ থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে, লাখ লাখ শরণার্থী সীমান্ত পার হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। ফলে দরজা খুললে শরণার্থীদের স্রোতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে এই আশঙ্কায় মিশর সীমান্ত খুলছে না। যেটি বর্তমানে  সম্পূর্ণভাবে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে এবংএটি  এখন পুরোপুরি বন্ধ।

যাইহোক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য সহ বেশ কয়েকটি দেশ বিদেশী পাসপোর্টধারীদের এবং মানবিক সহায়তার জন্য সীমান্ত পুনরায় খোলার জন্য মিশরের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। গাজায় আটকে পড়া বিদেশি নাগরিকদেরও রাফাহ সীমান্তে অবস্থান নিতে বলা হয়েছে, যাতে সীমান্ত খোলার সঙ্গে সঙ্গে তাদের উদ্ধার করা যায়।

মার্কিন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বিদেশি পাসপোর্টধারীদের প্রবেশ ও মানবিক সহায়তার জন্য সীমান্তটি স্বল্প সময়ের জন্য খোলা থাকতে পারে।

রাফাহ সীমান্ত পার হওয়ার প্রক্রিয়া কী?

ফিলিস্তিনিরা চাইলেই রাফাহ সীমান্ত অতিক্রম করতে পারে না। এর জন্য তাদের স্থানীয় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দুই থেকে চার সপ্তাহ আগে আবেদন করতে হবে, যা ফিলিস্তিনি বা মিশরীয় সরকার যেকোনো অজুহাতে প্রত্যাখ্যান করতে পারে।

জাতিসংঘের মতে, ২০২৩ সালের আগস্টে রাফাহ সীমান্ত দিয়ে ১৯,৬০৮ ফিলিস্তিনিকে মিশরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এবং ৩১৪ জনকে প্রবেশের অনুমতি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

রাফাহ ক্রসিং ছাড়াও গাজার স্থলপথে আরও দুটি ক্রসিং রয়েছে। রাফাহ ক্রসিং থেকে একটু পূর্বে কেরাম শালোম ক্রসিং, ইসরায়েলের সাথে সীমান্ত রাস্তা। আরেকটি ক্রসিং হল উত্তরের বেইট হানুন বা এরেজ ক্রসিং।

এ ছাড়া গাজার সঙ্গে ইসরায়েলের আরও চারটি ক্রসিং থাকলেও সেগুলো গত ১০/১৫ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে।

হামাস ইসরায়েলে হামলার পর থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে গাজার দুটি ক্রসিং বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র রাফাহ ক্রসিং খোলা আছে।

উপকূলটিও ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে থাকায় সমুদ্রপথে এলাকা ছেড়ে যাওয়া সম্ভব নয়। গাজা বিমানবন্দরও ২০০১ সালে ইসরাইল ধ্বংস করেছিল।

তাই, রাফাহ ক্রসিং যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষদের গাজা ছেড়ে যাওয়ার এবং মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর একমাত্র স্থল পথ হয়ে ওঠে, তখন একে গাজার লাইফলাইন বলা হত। এখন সেই পথেরও নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইসরাইল।

৬ মে হামাস, মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নিলেও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এতে সায় দেয়নি। বরং তারা রাফাহতে অভিযান চালানোর কথা জানিয়েছে।

ইসরাইল এই রাফাহ শহর ও রাফাহ ক্রসিং নিয়ে যা করছে তা অসলো শান্তি চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

পারাপারের কঠোরতা

রাফাহ ক্রসিং মিশরীয় সীমান্ত দিয়ে গেলেও এই পথ দিয়ে ফিলিস্তিনিরা গাজা ছাড়তে পারে না। এর প্রক্রিয়াটি বেশ দীর্ঘ এবং জটিল।

রাফাহ ক্রসিং অতিক্রম করার জন্য, একজন ফিলিস্তিনিকে তার ভ্রমণের অন্তত দুই থেকে চার সপ্তাহ আগে স্থানীয় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধন করতে হবে।

এই রেজিস্ট্রেশনেরও কোন গ্যারান্টি নেই যে তারা পাস করবে। কারণ তাদের আবেদন ফিলিস্তিনি বা মিশরীয় কর্তৃপক্ষ নোটিশ বা ব্যাখ্যা ছাড়াই প্রত্যাখ্যান করতে পারে।

যুদ্ধের আগেও রাফাহ ক্রসিং অতিক্রম করা গাজাবাসীদের জন্য সহজ ছিল না। এ জন্য তাদের গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন জমা দিতে হয়েছে।

তালিকাটি মিশরীয় কর্তৃপক্ষ দ্বারা সংকলিত হয়েছে। তালিকায় স্থান পেতে মধ্যস্বত্বভোগীকে টাকা দিতে হয়েছে। তারপরও, গাজাবাসীদের জন্য সীমান্ত অতিক্রম করা ছিল অনিশ্চিত।

যুদ্ধের সময় রাফাহ ক্রসিং পারাপারের খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট অনুযায়ী, যেখানে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে এটি ছিল ৭০০ ডলার জনপ্রতি, সেখানে ২০২৪ সালের এপ্রিলে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এটি কমপক্ষে ৫হাজার ডলার এবং শিশুদের জন্য কমপক্ষে ২.৫ হাজার ডলারে উন্নীত হয়েছে। কেউ কেউ আরও বলেন, সীমান্ত পার হতে জনপ্রতি খরচ নেওয়া হচ্ছে ১৫

গত অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এবং মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলা সাত মাসের যুদ্ধে ৩৫,০০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

গাজার রাফাতে ইসরায়েলের কথিত “শক্তিশালী” অভিযানের আন্তর্জাতিক নিন্দা বাড়ছে। বিশ্ব নেতারা ইতিমধ্যেই সেখানে আটকে পড়া ১৫ লাখ ফিলিস্তিনিদের জন্য ভয়াবহ পরিণতির বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন।যৌথ বিবৃতিতে, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং নিউজিল্যান্ড তাদের সর্বশেষ জরুরি আবেদনে আরও ব্যাপক বেসামরিক হতাহতের ঘটনা এড়াতে ইসরায়েলকে “এই পথে না চলতে” সতর্ক করেছে।

ইসরায়েলের কঠোর  সামরিক অভিযানে বাস্তুচ্যুত লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি মিশরীয় সীমান্তের কাছে গাজার দক্ষিণতম শহর জুড়ে বিস্তৃত একটি অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। আগ্রাসন থেকে বিরত থাকার জন্য বিদেশী সরকার এবং সাহায্য সংস্থাগুলির চাপ সত্ত্বেও, ইসরায়েল রাফাহ অনুপ্রবেশ এবং হামাস ব্যাটালিয়নগুলিকে নির্মূল করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

আরও পড়ুন

গাজাবাসীর ত্রাণের লাইনে বর্বর ইসরাইলের গুলিঃ কেড়ে নিল ৮১ টি প্রাণ

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X