গাজায় ১৮ হাজারের বেশি এতিম শিশু
শিশুরা যুদ্ধের সবচেয়ে সহজ এবং নিষ্ঠুর শিকার। ফিলিস্তিনের গাজায় তারা প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যম এটি দেখলেও এক মাস ধরে অজ্ঞাত কারণে তাদের তৎপরতা কমে গেছে। বোমা, গুলি আর অনাহারে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া এই নিরীহদের পৃথিবী যেন ভুলে গেছে। ইউনিসেফের মতে, গাজায় প্রতি ১০ মিনিটে একজন শিশু নিহত হয়। এ কারণে জাতিসংঘের শিশু সংস্থা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানাচ্ছে। তারা মনে করেন, শুধুমাত্র যুদ্ধবিরতিই সেখানে অব্যাহত শিশুমৃত্যু বন্ধ করতে পারে।
মিডল ইস্ট মনিটরের মতে, গাজায় ৭ অক্টোবর থেকে গত রোববার পর্যন্ত ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন ৭৭ হাজারের বেশি। এর মধ্যে ১৪ হাজার ৬৮৫ শিশু মারা গেছে। নারী রয়েছেন ৯ হাজার ৬৭০ জন। জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর মিডিয়া উপদেষ্টা আদনান আবু হাসনা বলেন, গাজায় শিশু ছাড়াও প্রতিদিন ৬৭ জন নারীকে হত্যা করা হচ্ছে, যার মধ্যে ৩৭ জন মা রয়েছেন। শত শত শিশু এতিম হয়েছে। গাজায় এখন ১৮,০০০ এতিম শিশু বাস করছে, যারা পরিবার, ভালোবাসা, জীবন সবকিছু হারিয়েছে।
মিশরীয় সীমান্তের কাছে রাফাতে লাখ লাখ গাজাবাসী আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে স্থল অভিযানের পরিকল্পনা করছে ইসরাইল। দফায় দফায় হামলা চালানো হচ্ছে।
বিভিন্ন অনলাইনের খবরে বলা হয়, ইসরাইল রোববার রাতভর বিমান ও ভারী অস্ত্র নিয়ে রাফাহ আক্রমণ করে। ১৪ শিশুসহ ১৯ জন নিহত হন। রাফাহ শহরের আরেকটি ভবন আগের দিন শনিবার বিমান হামলার শিকার হয়। নয়জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ছয়জন শিশু।
এছাড়াও, নিয়মিত সাহায্য সরবরাহের অভাবে গাজায় হাজার হাজার শিশু অনাহার ও অপুষ্টিতে মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। অনেক শিশু চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে। গাজায় পানি, বিদ্যুৎ বা ইন্টারনেট সুবিধা না থাকায় দুর্ভোগের প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠছে না। বিদেশি গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। যারা খবর ছড়াচ্ছে তাদের নিজ পরিবারেই হত্যা করা হচ্ছে। ত্রাণপ্রার্থী ও ত্রাণকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে। সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের সাত শ্রমিক নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজন ব্রিটিশ এবং একজন অস্ট্রেলিয়ান, একজন পোলিশ, একজন কানাডিয়ান-আমেরিকান এবং একজন ফিলিস্তিনি।
এ অবস্থায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কার্যত কোনো অগ্রগতি নেই। ইসরায়েলের ওপর ইরানের হামলা ও পাল্টা হামলাকে কেন্দ্র করে বিশ্ব মিডিয়ায় গাজার খবরের গুরুত্বও কমে গেছে। চীনের সিজিটিএন অনলাইনের খবরে বলা হয়, ইউনিসেফের সতর্কতার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রোববার আবারও গাজায় হামলা বাড়ানোর ঘোষণা দেন।
এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, শিগগিরই তারা আরও শক্তিশালী হামলা চালাবে। হামাসের ওপর সামরিক ও রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে তারা এটা করবে। তিনি ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) একটি ইউনিটের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞারও নিন্দা করেছেন। ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি IDF-এর নেজা ইয়েহুদার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
গাজার শিশুদের পরিস্থিতি নিয়ে এর আগেও বহুবার সতর্ক করেছে ইউনিসেফ। ১৯ মার্চ প্রকাশিত জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৩,৪৫০। এ সময় ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেন, শিশু মৃত্যুর সংখ্যাই প্রমাণ করে গাজার পরিস্থিতি কতটা উত্তাল। সাম্প্রতিক সময়ে সংঘাতে এত শিশুর মৃত্যু বিশ্ব দেখেনি।
গাজায় হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি ইসরাইল পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের আটকে রেখেছে।
৭ অক্টোবর থেকে ২৮০ জন মহিলা এবং ৫৪০ শিশু সহ ৮,৪২৫ জনকে আটক করা হয়েছে। ৬৬ জন সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে।
এ অবস্থায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে বিক্ষোভ করছে বিশ্বের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েলে ফিলিস্তিনের পক্ষে প্রতিবাদ করায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিক্ষোভের উদ্বেগের মধ্যে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বয়কট ঘোষণা করা হয়েছে।
2 Comments