পাল্টা আক্রমণ হলে মুহূর্তের মধ্যে কড়া জবাব: ইরানের হুঁশিয়ারি
ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন হামাসকে নির্মূল করতে ইসরাইল এভাবে নির্লজ্য রক্তপাত করছে। তাদের বাহিনী ৭ অক্টোবর,২০২৩ থেকে গাজায় সর্বাত্মক এবং নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে। এতে ৩৩ হাজারেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৪,০০০ নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে । এদিকে গত শনিবার প্রথমবারের মতো ইসরায়েলের ওপর সরাসরি হামলা চালায় ইরান। প্রাণ হারিয়েছে সাত বছরের এক শিশু।
ইরান কঠিন অবস্থানে রয়েছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি তাদের ওপর যেকোনো হামলার ভয়ঙ্কর জবাব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি বাঘেরি কানি বলেছেন, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। এক্ষেত্রে ইরান এমন অস্ত্র ব্যবহার করবে যা আগে কখনো ব্যবহার করা হয়নি। কাতারের আমিরের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট রাইসি এই প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের হামলাকে সফল হামলা বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে ইরানের স্বার্থে কোনো হুমকি হলে ইরান আরও বেদনাদায়ক জবাব দেবে। রাইসি আরও বলেছেন, “আমরা সরাসরি ঘোষণা করছি যে ইরানের স্বার্থের বিরুদ্ধে যে কোনও ছোট পদক্ষেপের অবশ্যই ভয়াবহ, সুদূরপ্রসারী এবং বেদনাদায়ক পরিণতি হবে।” অন্যদিকে, ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি বাঘেরি কানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেছেন, ইসরাইল পাল্টা জবাব দিলে তেহরান কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পাল্টা জবাব দেবে। ইরান জবাব দিতে আর ১২ দিন অপেক্ষা করবে না।
অন্যদিকে ১৩ এপ্রিল ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাব দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গতকাল যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। এর আগে তারা দুবার বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকের ফাঁস হওয়া তথ্য সত্যি হলে ইরানের হামলার জবাব দেওয়ার উপায় খুঁজছে ইসরাইল। উগ্র ডানপন্থী মন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ এবং ইতামার বেন গাভির তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। বলেছে, তারা তেহরানের বুকে হামলা চালাতে চায়। তবে তারা পাল্টা আক্রমণ চালাতে পারে যা শিরোনাম তৈরি করে এবং একটি বার্তা পাঠাতে পারে। তবে এতে উত্তেজনা ছড়াবে না। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, প্রায় চারদিন পার হয়ে গেলেও হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
ইরানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জোট গঠনের কথা বলছে ইসরাইল। তারা ইরানের বিরুদ্ধে যে কোনো হামলাকে রাজনৈতিক চাদর দিয়ে ঢেকে দিতে চায়।
কিন্তু বিশ্বের প্রধান দেশগুলো ইরানের ওপর সরাসরি হামলার বিপক্ষে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানি এবং জাতিসংঘসহ পশ্চিমা দেশগুলো উত্তেজনা এড়াতে আহ্বান জানিয়েছে। কারণ ইসরাইল ইরানে হামলা চালালে তা পারমাণবিক যুদ্ধে পরিণত হতে পারে। এখান থেকেই শুরু হতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সব বড় দেশও এর জন্য মাথা খাচ্ছে। তারা ইসরায়েলকে আক্রমণ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছে। তাদের আশঙ্কা, ইসরাইল আক্রমণ করলে তা মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষোভের আগুন জ্বালিয়ে দেবে। গাজায় গণহত্যায় মুসলিম বিশ্ব ইতিমধ্যেই ক্ষুব্ধ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল একটি রেডিও স্টেশনকে বলেন, আমরা পাহাড়ের ধারে দাঁড়িয়ে আছি। এখান থেকে বের হতে হবে। এখন আমাদের ‘ব্রেক’ মারতে হবে এবং রিভার্স গিয়ারে উঠতে হবে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এবং অন্যরা একই ধরনের আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস প্রতিশোধমূলক হামলা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের পারদ চড়ছে। গত শনিবার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার পর ইরান বলেছে, ইসরাইল পাল্টা জবাব না দিলে তারা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে না। তবে জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থার আশঙ্কা, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার জবাব দিতে ইসরাইল প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই হামলার অন্যতম লক্ষ্য হতে পারে ইরানের পারমাণবিক চুল্লি এবং পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র। এমন খবরের জবাবে ইরান বলেছে, ইসরাইল হামলা করলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই জবাব দেবে তেহরান।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরান একা নয়, পেছনে রয়েছে রাশিয়া ও চীন। আর ইসরায়েলের সহায়ক বন্ধুদের তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব। এদিকে প্রতিদিন গণমানুষের মৃত্যু মিছিলে দাঁড়িয়ে ফিলিস্তিনের মাটি কামড়ানোর লড়াই করছে হামাস।
এমতাবস্থায় ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা বাড়লে মনে হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা ঘনিয়ে আসছে। প্রশ্ন হল, নেতানিয়াহু কি মানবতাকে নরকের বিপজ্জনক পথে নামিয়ে দিচ্ছেন না?
আরও পড়তে
ফিলিস্তিনি ইস্যুতে ইরান-সৌদি আরব ঐক্যবদ্ধ: পাল্টে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের হিসাব-নিকাশ