দখলদার ইসরায়েলি হামলা নিয়ে যা বললেন মসজিদুল হারামের প্রধান ইমাম শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস
সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ সময় তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইসরায়েল যেন ফিলিস্তিনের নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর হামলা না করে। শনিবার সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। খবর আরব নিউজ।
শনিবার ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতির প্রধান জোসেপ বোরেলের সাথে পৃথক ফোন কল করেছেন। তিনি বলেন, পরিস্থিতি শান্ত করতে এবং সহিংসতা এড়াতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয়দের পাশাপাশি সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাতার, মিশর ও জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গেও কথা বলেছেন।
তার ভিত্তিতেই বিশ্বের সব শান্তিপ্রিয় মানুষ দখলদার ইসরাইলের হামলার প্রতিবাদ করছে। এ নিয়ে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বক্তব্য দিচ্ছেন। তারা তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছেন পবিত্র মসজিদুল হারামের ইমাম ও ধর্ম বিষয়ক বোর্ডের প্রধান শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস। বিভিন্ন ভাবে প্রতিবাদও চলছে। ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী কয়েক সপ্তাহ ধরে গাজায় নির্বিচারে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে। বিশেষ করে নিরীহ শিশুরা এই নারকীয় হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত।
মক্কার পবিত্র মসজিদের ইমাম এবং ধর্ম বিষয়ক বোর্ডের প্রধান শেখ আবদুর রহমান আল-সুদাইস অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার হাসপাতালে ইসরায়েলের বর্বর হামলা ও হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করেছেন।
তিনি বলেন, দখলদার রাষ্ট্রের হামলা একটি “ধর্মীয় মূল্যবোধ, মানবিক আচরণ এবং আন্তর্জাতিক নীতির চরম লঙ্ঘন।”
বুধবার (১৮ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে তিনি হামলার নিন্দা জানান। শেখ সুদাইস বিবৃতিতে বলেছেন, “ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে বেসামরিক মানুষকে লক্ষ্যবস্তু করা কিতাবধারী ধর্মগুলো অনুমোদন করে না।” কারণ সকল কিতাবধারী ধর্মই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ।
এই ধরনের কার্যকলাপ শান্তির জন্য সহায়ক মানবিক আচরণের পরিপন্থী। ইসরায়েলের এ ধরনের নৃশংস হামলা স্পষ্টতই মুসলিম জাতির অনুভূতিকে উদ্দীপ্ত করে। ইসলাম আমাদেরকে মানবিক মূল্যবোধ অনুসরণ করার নির্দেশ দেয় যেখানে অন্যায়ভাবে প্রাণহানি, নিরাপত্তা রক্ষীদের ভয় দেখানো এবং নারী ও শিশুদেরকে কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনি জাতি ও তার নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর নৃশংস হামলা মূলত বিশ্বে বিশৃঙ্খলা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য।
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ২০ নম্বর আয়াতে বলেছেন, “নিশ্চয়ই তিনি বিশৃঙ্খলা পছন্দ করেন না।” এছাড়া শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার সকল প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করা এ ধরনের কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত। এম আচরণ গণনা এবং কর্মের পরিণতি সম্পর্কে বেপরোয়া। কিন্তু আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ অত্যাচারীদের কর্মের প্রতি উদাসীন নন।
বিবৃতিতে ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করে বলা হয়, “জাতির নিরাপত্তা এবং আমাদের পতিত ফিলিস্তিনি ভাইদের করুণার জন্য আমরা সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি।” এতে নিহতদের মাগফিরাত, আহতদের আরোগ্য ও শত্রুর পরাজয় কামনা করা হয়।
শাইখ আবদুর রহমান আল-সুদাইস ফিলিস্তিন ইস্যুতে সৌদি আরবের দৃঢ় সমর্থন তুলে ধরেন এবং বলেন, “সৌদি আরব ফিলিস্তিন সমস্যার ন্যায়সঙ্গত নিষ্পত্তি, শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা এবং এর বাসিন্দাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জোরালোভাবে কাজ করছে। ” বিশেষ করে অবরুদ্ধ গাজায় চলমান পরিস্থিতির উন্নয়নে দেশটির বহুমুখী তৎপরতার কথা তুলে ধরা হয়।
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরায়েলের ওপর নজিরবিহীন হামলা চালায়। টানা দ্বাদশ দিনের মতো ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ চলছে। মৃতের সংখ্যা অনেক । হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৭০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এসময় আহত হয়েছেন অন্তত ১২ হাজার ৪৯৩ ফিলিস্তিনি।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, মৃতদের মধ্যে ১,৫২৪ শিশু রয়েছে। এ ছাড়া এক হাজার নারী ও ১২০ জন বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন।
সেভ দ্য চিলড্রেনের মতে, ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনে প্রতি ১৫ মিনিটে একজন শিশু নিহত হয়। অন্যদিকে, বিভিন্ন ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংস্থা বলেছে, ইসরায়েলের হামলার শিকার এক-তৃতীয়াংশই শিশু।
উল্লেখ্য, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে উত্তর আফ্রিকার দেশটির বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মিশরীয় বিক্ষোভ করেছে। ‘হে আল-আকসা, চিন্তা করো না, আমরা আমাদের আত্মা এবং রক্ত দিয়ে তোমাকে মুক্তি করব’ শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে তারা একযোগে এমন স্লোগান দেয়।
আরও পড়ুন
ফিলিস্তিনি ইস্যুতে ইরান-সৌদি আরব ঐক্যবদ্ধ: পাল্টে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের হিসাব-নিকাশ