January 31, 2025
মানব মস্তিষ্ক ইন্টারনেটের গড় গতির চেয়ে ৫০ লাখ গুণ ধীর

মানব মস্তিষ্ক ইন্টারনেটের গড় গতির চেয়ে ৫০ লাখ গুণ ধীর

মানব মস্তিষ্ক ইন্টারনেটের গড় গতির চেয়ে ৫০ লাখ গুণ ধীর 

মানব মস্তিষ্ক ইন্টারনেটের গড় গতির চেয়ে ৫০ লাখ গুণ ধীর 

মানব মস্তিষ্ক:

মানব মস্তিষ্ক মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের কেন্দ্রীয় অঙ্গ। এটি মেরুদন্ডের সাথে একত্রে মানবদেহের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র গঠন করে। মানুষের মস্তিষ্ক তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত: গুরুমস্তিষ্ক, মস্তিষ্ককাণ্ড ও লঘুমস্তিষ্ক । মস্তিষ্ক মানবদেহের অধিকাংশ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। 

গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন মানব মস্তিষ্কের  যে প্রতিটি নিউরন একটি বিশেষ ধরনের বৈদ্যুতিক মডেলিং ব্যবহার করে গবেষণা পরিচালনা করে গণনাগত সমস্যা সমাধান করতে পারে। মানুষের মস্তিষ্ক আমাদের কল্পনার চেয়েও বেশি শক্তিশালী হতে পারে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। একটি গবেষণায়, গবেষকরা একটি নতুন ধরনের ‘সেল মেসেজিং’ চিহ্নিত করেছেন যা আগে কখনও পাওয়া যায়নি। এ থেকে বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের মস্তিষ্ক সম্ভবত বর্তমানে যা বিশ্বাস করা হয় তার চেয়ে বেশি শক্তিশালী। কিন্তু মানব  মস্তিষ্কের নিউরনের গতি খুবই ধীর, মাত্র এক সেকেন্ডে ১০ বিট

  • একজন সাধারণ মানুষের মস্তিষ্কের ওজন শরীরের ওজনের মাত্র ২ শতাংশ। কিন্তু দেহের পুরো শক্তি ও অক্সিজেনের ২০ শতাংশ একাই ভোগ করে।
  • মস্তিষ্ক প্রায় সম্পূর্ণটাই পানি।
  • মস্তিষ্কের প্রায় ৭৩ শতাংশই পানি । যদিও মস্তিষ্ক মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি এবং জ্ঞানীয় ফাংশনগুলির জন্য শুধুমাত্র ২  শতাংশ পানি  ব্যবহার করে।
  • একটি স্বাভাবিক মস্তিষ্কের ওজন ১.৩৬ কেজি। এর ওজনের ৬০ শতাংশই চর্বি। মস্তিষ্ক মানবদেহের সবচেয়ে চর্বিযুক্ত অঙ্গ। শরীরের ২০-২৫ শতাংশ কোলেস্টেরল থাকে মস্তিষ্কে। কোলেস্টেরলের ঘাটতি হলে মস্তিষ্কের কোষগুলো মারা যায়।
  • মস্তিষ্কে ৮৫ বিলিয়ন এর বেশি নিউরন কোষ থাকতে পারে। এমনকি সুপার কম্পিউটারও নিউরনের শক্তির কাছে অসহায়!

মানব মস্তিষ্কে ৮৫ বিলিয়ন নিউরন থাকা সত্ত্বেও, মানুষ প্রতি সেকেন্ডে মাত্র ১০ বিট গড় গতিতে চিন্তা করে। আজকের ডিজিটাল যুগে ধীরগতির ইন্টারনেট সংযোগের চেয়ে বিরক্তিকর আর কিছু নেই। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো মানুষের মস্তিষ্ক ইন্টারনেট সংযোগের চেয়ে ৫ মিলিয়ন গুণ ধীর গতিতে চিন্তা করে। সম্প্রতি এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা।

মানবদেহের সংবেদনশীল সিস্টেম, যেমন চোখ, কান, ত্বক এবং নাক, প্রতি সেকেন্ডে আমাদের চারপাশের পরিবেশ থেকে এক বিলিয়ন বিট তথ্য সংগ্রহ করে। যাইহোক, সেই  মস্তিষ্ক প্রতি সেকেন্ডে মাত্র ১০ বিট তথ্য প্রক্রিয়া করে, যা ইনপুটগুলির চেয়ে কয়েক মিলিয়ন গুণ ধীর।

কম্পিউটিংয়ে ব্যবহৃত তথ্যের ক্ষুদ্রতম একক হল একটি বিট। একটি সাধারণ Wi-Fi সংযোগ প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৫০ মিলিয়ন (৫ কোটি)  বিট প্রক্রিয়া করতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে মানব মস্তিষ্কে ৮৫ বিলিয়ন নিউরন থাকা সত্ত্বেও মানুষ প্রতি সেকেন্ডে ১০ বিট গড় গতিতে চিন্তা করে। বিজ্ঞানীরা একে অত্যন্ত কম বলে বর্ণনা করেছেন।

গবেষণাটি বৈজ্ঞানিক জার্নাল নিউরনে প্রকাশিত হয়েছে।   গবেষণার সহ-লেখক মার্কাস মেস্টার বলেছেন, “যে কোনো মুহূর্তে, আমরা আমাদের সংবেদনশীল সিস্টেম থেকে আসা ট্রিলিয়ন বিট তথ্য থেকে মাত্র ১০বিট বের করি, এবং আমরা এই ১০ বিটগুলি আমাদের চারপাশের বিশ্বকে উপলব্ধি করতে এবং সিদ্ধান্ত নিতে ব্যবহার করি,”

গবেষকরা আরও বলেছেন যে যদিও মস্তিষ্কের একটি একক নিউরন প্রতি সেকেন্ডে ১০ বিটের বেশি তথ্য প্রেরণ করতে সক্ষম, মানুষের চিন্তা প্রক্রিয়ার ধীর গতির কারণে, একজন দাবা খেলোয়াড় একই সাথে একাধিক সম্ভাব্য ভবিষ্যতের চাল সম্পর্কে চিন্তা করতে পারে না। তারা শুধুমাত্র একটি সম্ভাব্য পদক্ষেপে ফোকাস করতে পারে।

এই ‘গতি সীমা’ প্যারাডক্স মস্তিষ্কের কার্যকলাপের আরও বিশদ অধ্যয়নের প্রয়োজনের দিকে পরিচালিত করেছে। ভবিষ্যতে বিজ্ঞানীরা আরও নতুন তথ্য দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে, পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম প্রাণীদের মস্তিষ্ক এই ধীর গতির বৈশিষ্ট্যযুক্ত ছিল। তারা প্রধানত তাদের মস্তিষ্ক ব্যবহার করে খাবারের সন্ধানে এবং শিকারীদের হাত থেকে বাঁচতে। পরবর্তীতে, মানুষের মস্তিষ্কও তাদের থেকে কাছাকছি হয় এবং শুধুমাত্র একটি চিন্তার পথ অনুসরণ করার ক্ষমতা অর্জন করে।

বিজ্ঞানীরা আরও বিশ্বাস করেন যে, আমাদের পূর্বপুরুষরা এমন একটি পরিবেশে বাস করতেন যেখানে পৃথিবী খুব ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়েছিল। সুতরাং তাদের মস্তিষ্কের প্রতি সেকেন্ডে ১০ বিট সীমা তাদের জন্য যথেষ্ট ছিল।

এই গবেষণাটি পরামর্শ দেয় যে প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে, ভবিষ্যতে মেশিনগুলি যে কোনও কাজে মানুষের চেয়ে অনেক দ্রুত এবং আরও দক্ষ হতে পারে।

আরো পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X