শীত এলেই শ্বাসকষ্ট বাড়ে, সুস্থ থাকতে মেনে চলুন নিয়ম
ইতিমধ্যেই উত্তরের হিমেল হাওয়া শীতের কথা জানাচ্ছে। রাতের শেষে ফ্যানের ভলিউম কমিয়ে দিতে হয়। ত্বকে টান দিতে শুরু করছে। শীতের আগমন অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টের রোগীদের উদ্বেগ নিয়ে আসছে । কারণ বছরের বাকি সময় নিজেকে সামলাতে পারলেও শীত এলেই এই সমস্যা বাড়ে।
শীত আসলে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়। এমন আবহাওয়ায় শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। বিশেষ করে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস বা অ্যাজমা থাকলে শ্বাসকষ্ট অনেক বেড়ে যেতে পারে। কারণ এসব বাতাসের ধুলাবালির কারণে বাড়ে। শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি শীতে সাধারণ সর্দি-কাশি ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়।
শীতে শ্বাসকষ্ট কেন বেড়ে যায়?
শীতকালে তাপমাত্রা কমে যায়। আর শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের জীবাণু কম তাপমাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাই সংক্রমণ বেড়ে যায়। আর এই সংক্রমণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। অতএব, বিশেষ সুরক্ষা প্রয়োজন। শীতকালে শ্বাসকষ্টের রোগীদের কী নিয়ম মেনে চলা উচিত? চলুন জেনে নেওয়া যাক-
মাস্ক পরুন
করোনার সময় সবাই মাস্ক পরতে বাধ্য ছিলাম । মহামারী কাটিয়ে ওঠার পর তাকেই অবহেলায় ছেড়ে যাই । তবে ধুলাবালি ও বিভিন্ন জীবাণু থেকে বাঁচার সহজ উপায় এই মাস্ক। তাই বাইরে বের হলে মুখে মাস্ক পরুন।
হাত ধোয়া
বাড়ি ফিরে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। ব্যাগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখুন। এইভাবে আপনি জীবাণু থেকে দূরে থাকতে পারেন।
কুসুম গরম পানির ব্যবহার
গ্রীষ্ম শেষ হলে এবং শীত শুরু হলে আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে অনেকেই দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে না। তাই অনেকের জ্বর হয়। শীতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মুখ বা হাত কুসুম গরম পানি দিয়ে ধোয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকগণ।
টিকা নিতে পারেন
সমস্ত বয়স্ক ব্যক্তি যারা হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টে ভুগছেন তাদের বাধ্যতামূলক নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা নেওয়া উচিত। সর্বদা আপনার সাথে ইনহেলার রাখুন।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস
শীতে সব রোগ বাড়ে। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এমন খাবার খাওয়া উচিত। ফুসফুস শক্তিশালী হতে হবে। আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় প্রোটিন অন্তর্ভুক্ত করুন। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, দুধ, বাদাম, শাকসবজি ইত্যাদি খান। এছাড়াও শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
মধু খান
শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখা, সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করা সহজ কাজ নয়। তবে প্রতিদিন এক চামচ মধু শীতকে আরামদায়ক করে তুলতে পারে। মধুতে রয়েছে প্রাকৃতিক এনজাইম, ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। মধু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তবে মধু হতে হবে একেবারে খাঁটি।
ভিটামিন সি আছে এমন খাবার খান
ভিটামিন সি যুক্ত খাবার যেমন জলপাই, কমলালেবু, লেবু ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। এগুলো প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। আমলকি খেতে পারেন নিয়মিত। এর রসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। আমলকি খেলে ফুসফুস থেকে দূষিত পদার্থ বা টক্সিন দূর হয়। প্রতিদিন সামান্য তুলসীর রসও খেতে পারেন। এটি বুকের ঠান্ডা এবং কফ প্রতিরোধ করতে পারে। এছাড়া তুলসী পাতা দিয়ে চা বানিয়ে পান করতে পারেন।
এসব খাবার খাবেন না
খুব শীত লাগছে বলে ঘন ঘন দুধ চা বা কফি খাবেন না, প্রয়োজনে পরিমিত খান । বাইরে বের হলে নরম পানীয়, ঠান্ডা শরবত বা আইসক্রিম ভুলেও খাবেন না। শ্বাসকষ্ট হলে বা হাঁপানি থাকলে হালকা গরম পানিতে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে খেতে পারেন। তাতে আরাম পাবেন ভালই।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
শ্বাসনালী এবং ফুসফুস সুস্থ রাখতে নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন। অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম করা যেতে পারে। আপনি কিছু সময়ের জন্য যোগব্যায়াম করতে পারেন। এটি শ্বাসকষ্ট এবং হাঁপানি উভয়ই নিয়ন্ত্রণ করবে।
আরো পড়ুন- শীতে শরীর গরম রাখবে যে খাবারগুলো